বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:০৬ অপরাহ্ন
Uncategorized

কানাডার এডমন্টনে আতঙ্কিত মুসলিম নারীরা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

কানাডার আলবার্তায় অবস্থিত এডমন্টন শহরে ক্রমশ আতঙ্কিত হয়ে উঠছেন মুসলিম নারীরা। বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম নারীরা বেশি মাত্রায় ত্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি অন্টারিওর লন্ডন শহরে একটি মুসলিম পরিবারকে এক ট্রাকচালক হত্যা করার পর মনে করা হয়েছিল যে, মুসলিমরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। কিন্তু এডমন্টনে ঘটছে তার উল্টোটা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

এতে বলা হয়েছে ওই শহরে বসবাস করেন মুসলিম নারী দুনিয়া নূর। তিনি কয়েকদিন আগে একটি দোকানে পেইন্ট কিনতে গিয়েছিলেন। তিনি এডমন্ডটনে মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন সংগঠকও।

পেইন্ট কিনতে গিয়ে তিনি ফোনে দেশে রেখে যাওয়া এক আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলছিলেন সোমালি ভাষায়। এ সময় ওই দোকানের এক ব্যক্তি তার দিকে আগ্রাসী ভঙ্গি নিয়ে অগ্রসর হয় এবং তাকে ইংরেজিতে কথা বলতে বলে। তিনি এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলে তার পথ আটকে ধরে ওই ব্যক্তি। দুনিয়া নূর আফ্রিকান কানাডিয়ান সিভিল এনগেজমেন্ট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এ ঘটনা আর বাড়তে দেননি তিনি। তবে তিনি নিজেকে এখন খুবই অনিরাপদ মনে করছেন। কারণ, এ ঘটনা ঘটেছে লন্ডন শহরে কয়েকদিন আগে একটি মুসলিম পরিবারকে হত্যা করার পর। কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে মৌখিক এবং শারীরিক আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে গত বছর থেকে তাদের সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য নিজেদের বাড়িতে বসবাস করার ক্ষেত্রে ভীত হয়ে উঠেছেন। গত জুনে মুসলিম দুই বোন হিজাব পরেছিলেন। তাদের ওপর ছুরি হাতে নিয়ে এক ব্যক্তি আক্রমণ করে এবং তাদেরকে অকশ্য ভাষায় গালি দেয়। আরেকটি ঘটনায় মুসলিম নারীদের ধাক্কাতে ধাক্কাতে মাটিতে ফেলে দেয়া হয়। এসময় তারা গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

শহর কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এডমন্টন পুলিশ ২০২০ সালের ৮ই ডিসেম্বর থেকে ৫ টি ঘটনার কথা জানতে পেরেছে, যেখানে হিজাব পরা কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম নারীদের অবমাননা করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় একজন করে ব্যক্তিতে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে পুলিশের হেইট ক্রাইম ইউনিট। কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের আইনজীবীরা বলছেন, অনেক ঘটনার রিপোর্ট করা হয় না। দুনিয়া নূর বলেন, আমরা একটি টাউন হল মিটিং করেছি, যেখানে বহু নারী এসেছিলেন। তারা বলেছেন, তাদের ওপর এর আগে ছুরি নিয়ে হামলা করা হয়েছে। কেউ বলেছেন, তাদেরকে বলা হয়েছে ঘরে ফিরে যেতে। লিঙ্গগত সহিংসতার শিকারে পরিণত হয়েছেন অনেকে। ঘৃণাপ্রসূত অপরাধের শিকারে পরিণত হয়েছেন অনেকে।

তিনি আরো বলেন, কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম নারীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ইসলামভীতি থেকে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। তাদের ওপর হামলা হয়েছে এ জন্য যে, তারা নারী। আমরা এখন এমন একটি অবস্থায় আছি যেখান থেকে বলতে পারি না, আমরা ঘরের বাইরে গেলে কি ঘটতে পারে।

কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ আলবার্তার রাজধানী এডমন্টন। মিউনিসিপ্যালিটির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সেখানে কমপক্ষে ৯ লাখ ৭২ হাজার মানুষের বসবাস। ওই শহরের মেয়র ডন ইভেসনের অফিস থেকে ইমেইলে জানানো হয়েছে, এডমন্টনের কিছু অধিবাসী এই বার্তাটি পায়নি যে, জাতিবিদ্বেষ এবং একগুঁয়েমি আচরণ এই শহরে স্বাগত জানানো হয় না। এডমন্টনের মানুষ এসব বন্ধ করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। ইভেসন বলেন, কানাডায় ঘৃণাপ্রসূত আইন আরো কঠোরভাবে সমর্থন করে এডমন্টন সিটি কাউন্সিল। ঘৃণা প্রসূত অপরাধ ও সহিংসতা সমাধানের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে সিটি কাউন্সিল।

এসব ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও অধিকারকর্মী ওয়াতি রাহমাত বলেন, মুসলিম নারীরা এডমন্টনে ভীতির মধ্যে আছেন। তার ভাষায়, আমার বন্ধুরা আছেন। তারা হিজাব পরার ধরণ পরিবর্তন করবেন নাকি হিজাব পরাই বাদ দেবেন, অথবা বাইরে বের হওয়ার সময় সঙ্গে কাউকে নিয়ে যাবেন, অথবা বাইরেই যাবেন না- এসব নিয়ে কথা বলেন। মুসলিম নারীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সিস্টার্স ডায়ালগের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াতি রাহমাত। বর্তমানে তারা মুসলিম নারীরা যাতে নিরাপদে বাইরে বের হতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছেন।

এসব ঘটনা অনেক কিছু মনে করিয়ে দিচ্ছে। একদিকে জুনে অন্টারিওর লন্ডনে ট্রাক হামলা, অন্যদিকে ২০১৭ সালে কুইবেক শহরে একটি মসজিদে ভয়াবহ গুলি, গত বছর টরোন্টো শহরের পশ্চিমে একটি মসজিদের বাইরে ছুরিকাঘাত মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করেছে। ওয়াতি রাহমাত বলেন, আমি মনে করি নারীদের বাইরে যাওয়া এখন নিরাপদ নয়। ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিমস (এনসিসিএম) সহ মুসলিমদের আইনগত সহায়তা দেয়া কিছু গ্রুপ এরই মধ্যে সড়কে নারীদের হয়রানি বন্ধে আইন কঠোর করার আহ্বান জানিয়েছে। এনসিসিএম-এর যোগাযোগ বিষয়ক সমন্বয়কারী ফাতেমা আবদাল্লাহ বলেন, গত ৬ মাসে এডমন্টন ও ক্যালগারি শহরে মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৫টি হামলা হয়েছে। এসব নারী হয় তাদের প্রতিদিনের হাঁটাহাঁটিতে বেরিয়েছিলেন অথবা পার্কে গিয়েছিলেন অথবা কোনো সেন্টশনে গিয়েছিলেন অথবা কোনো ট্রানজিট স্টেশনে ছিলেন। প্রায় সপ্তাহে মৌখিক নির্যাতনের অভিযোগ পায় এনসিসিএম।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com