রাকিব এবং তার স্ত্রী নাসরিন দু’জনেই পেশায় ডাক্তার। প্রায় দু’বছর আগে ইন্টার্নি শেষ করে তারা দু’জনেই ঢাকার দু’টি হাসপাতালে চাকরি করছে। পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সরকারী চাকুরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। এছাড়াও তাদের পেশাগত উচ্চশিক্ষার জন্যও তাদের পড়ালেখা করতে হচ্ছে। এরমাঝেই হঠাৎ রাকিবের মাথায় ঝোঁক চাপলো বিদেশে অভিবাসনের চেষ্টা করতে হবে। তার বাল্যবন্ধু সুমন ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলো। দীর্ঘদিন যাবত সে কানাডায় অভিবাসনের চেষ্টা করে যাচ্ছিলো। অবশেষে গত বছর সুমন তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে কানাডা চলে গেছে।
ফেইসবুকে সুমনের আপলোড করা শুভ্র তুষারপাতের ছবি, কখনো আদিগন্ত সবুজ লেক ও নয়নাভিরাম প্রকৃতির ছবি দেখে, আবার হয়তো কখনো সে দেশের আইনশৃংখলার চমৎকার বর্ণনা ও নাগরিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা পড়ে রাকিব চিন্তা করে, এমন জীবন পেলে তো নিঃসন্দেহে ভালো হয়। বিদেশে যদি ভালো উপার্জন হয় তাহলে ছোট ভাইবোনগুলোর পড়ালেখার জন্যও সে বেশি সহায়তা করতে পারবে।
পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত কিন্তু দুঃখজনক। ঢাকার এক নামকরা অভিবাসন বিষয়ক পরামর্শদাতার অফিসে রাকিব ও নাসরিন তাদের কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছিলো। সেখানে প্রাথমিক কথাবার্তার পর নিশ্চিত আশ্বাসে তাদের মনে হয়েছিলো, তাদের বর্তমানে যে যোগ্যতা আছে তাতে করে তারা খুব দ্রুতই কানাডায় চলে যেতে পারবে। তখন ঐ পরামর্শক ভদ্রলোকের কথা অনুযায়ী তারা পাসপোর্ট, সার্টিফিকেট সহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দেয়। সাথে জমা দেয় বেশ বড় অংকের টাকা। এ টাকা তারা দু’জনে মিলে সংসার চালানোর পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে তিল তিল করে সঞ্চয় করেছিলো।
তাদেরকে বলা হয় তারা যেহেতু পেশাগতভাবে ডাক্তার সুতরাং তাদের জন্য এটা খুবই সহজ। খুব দ্রুতই তাদের জব ভিসা হয়ে যাবে। সুতরাং প্রসেসিং ফি, মেডিক্যাল চেকআপের জন্য অগ্রিম এবং তার সাথে ফেরতযোগ্য জামানত; ইত্যাদি সব মিলিয়ে তাদের কাছ থেকে এ টাকা নেয়া হচ্ছে। আলোচনার সময় এক্সপ্রেস এন্ট্রি, ওয়ার্ক পারমিট, প্রভিন্সিয়াল নমিনি এসব অপরিচিত এবং নতুন শব্দমালা শুনে তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
তারা দু’জনেই মনে করতে থাকে তাদের সামনে উপবিষ্ট ভদ্রলোকটি এ বিষয়ে খুবই দক্ষ একজন বিশেষজ্ঞ, সুতরাং আর কোন চিন্তা না করে বরং তার উপর পুরোপুরি নির্ভর করলেই সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে। পরের কয়েকমাস নানারকম আশ্বাস দেয়ার পর অবশেষে একদিন মাইগ্রেশন এজেন্ট পদবীধারী ভদ্রলোকে তাদেরকে জানান, তিনি সম্ভবপর সব চেষ্টা করেছেন কিন্তু কানাডিয়ান হাইকমিশন তাদের আবেদনপত্র গ্রহণ করেনি। তিনি কথার নানা মারপ্যাচের ফাকফোকড়ে কাগজপত্রের সমস্যার দোষটি চাপিয়ে দিলেন রাকিবের উপরেই।
এরপর থেকে রাকিব এখনো ঘুরছে, সময় নষ্ট করছে। কিন্তু ফেরতযোগ্য তথাকথিত জামানতের সেই টাকা সে ভদ্রলোক থেকে এখনো সে উদ্ধার করতে পারেনি। এ তিক্ত অভিজ্ঞতার পর তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। কানাডার সরকারী ওয়েবসাইটে দেয়া বিস্তারিত তথ্য পড়ে এখন তারা দু’জনেই আফসোস করে, কেন তারা আগে এ বিষয় নিয়ে নিজেরা কিছুটা হলেও জানার ও সচেতন হওয়ার চেষ্টা করেনি। কেবলমাত্র আধাঘন্টা গুগল সার্চ করেই রাকিব চমকে উঠে। কানাডার সরকারী ওয়েবসাইটের বর্ণনা পড়ে সে বুঝতে পারে তাদেরকে যে ভিসার কথা বলা হয়েছিলো তা কোন একভাবে পেয়ে গেলে যদি তারা শেষপর্যন্ত কানাডা যেতে সক্ষমও হতো, তবুও তাতে করে তাদের স্থায়ীভাবে সেদেশে থাকার সুযোগ অর্থ্যাৎ পারমানেন্ট রেসিডেন্সি পাওয়ার সুযোগ অনিশ্চিতই থেকে যেতো।
তবে সবার অভিজ্ঞতাই রাকিব-নাসরিন দম্পত্তির মতো এমন দুঃখজনক নয়। তাদের বন্ধু সুমনের কথাই ধরা যাক। সে যে মাইগ্রেশন এজেন্টের কাছে গিয়েছিলো, তিনি বিভিন্ন ভিসা ক্যাটাগরী, সম্ভাবনা ও প্রয়োজনীয় শর্তাবলী সুমনকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন। সে সময় সুমন নিজেও নিয়মিত অনলাইনে সার্চ করে তথ্যগুলো জানার চেষ্টা করতো, প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো টুকে রাখতো। সবকিছু জেনে বুঝে সচেতনভাবে এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে সে অভিবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রের সাথেই আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলো এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পরে তার আবেদন গৃহীত হয়েছিলো।
একইভাবে বলা যায় রায়হানের কথা। বাংলাদেশে পড়ালেখা শেষ করে রায়হান একটি বেসরকারী কোম্পানীতে চাকরি করছিলো। পরবর্তীতে সে অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে আসে। এখানে থাকার সময়েই সে বুঝতে পারে সে বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করছে তাতে করে অস্ট্রেলিয়ায় স্কিলড মাইগ্রেশনের সম্ভাবনা তার জন্য খুবই ক্ষীণ। এদিকে কানাডায় তার এক চাচাতো ভাই দীর্ঘদিন যাবত স্থায়ীভাবে সপরিবারে বসবাস করছেন। তার মাধ্যমে সে জানতে পারে কানাডার ইমিগ্রেশনের নিয়মকানুনের কথা। তারপর খোঁজখবর নিয়ে সে দেখতে পায় তার পিএইচডি ডিগ্রি যদি কানাডার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সে করতে পারে এবং পাশাপাশি সেদেশে স্থানীয়ভাবে কিছু কাজের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারে তাহলেই সেখানে তার জন্য স্থায়ী বসবাসের সুযোগ অনেক সহজতর হয়ে যাবে। পরবর্তীতে খুব দ্রুতই সে উড়াল দেয় কানাডার উদ্দেশ্যে।
রাকিব-নাসরিন-সুমন-রায়হানদের মতো অনেক মানুষের স্বপ্নের দেশ কানাডা। উত্তর আমেরিকায় বিপুলায়তনের এ দেশটির একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল সীমানা। আটলান্টিক ও প্যাসিফিকের তীরে অবস্থিত দেশটির জনসংখ্যা খুবই কম, কিন্তু অর্থনীতি প্রচন্ড শক্তিশালী। বিশ্বজুড়ে কানাডিয়ানরা তাদের ভদ্র ও মার্জিত আচরণের জন্য সুপরিচিত। মানুষ কানাডাকে চেনে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের অপর পাড়ের দেশ হিসেবে। টরেন্টো, মান্ট্রিঅল, ভ্যানকুভার, অটোয়া এসব শহরের নাম আমরা বাংলাদেশীরা অনেক পরিচিত প্রবাসীদের কাছ থেকে শুনে থাকি।
শিক্ষাক্ষেত্রেও কানাডা বিশ্বসেরাদের কাতারে। কানাডার মান্ট্রিঅলে অবস্থিত ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি সারা বিশ্বের জ্ঞানপিপাসুদের কাছে সুপরিচিত এবং আদৃত একটি ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও এদেশে অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে আছে ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টো, ইউনিভার্সিটি অফ এলবার্টা, ইউনিভার্সিটি অফ মেনিটোবা, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ-কলাম্বিয়া সহ আরো অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রী কৃতিত্বের সাথে পড়ালেখা করছে। তাদের অনেকেই বৃত্তি নিয়ে পড়ালেখা করছে, অনেকে পড়ালেখা করছে নিজস্ব অর্থায়নে।
কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সারাবিশ্বে পরিচিত তার উদারপন্থা ও সাম্যনীতির কারণে। রাজনৈতিকভাবে কানাডা অত্যন্ত স্থিতিশীল একটি দেশ। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং সমৃদ্ধ কানাডা গড়ে তোলার লক্ষে সেদেশের সরকার চলতি বছরগুলোতে অভিবাসনের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কানাডার সরকারী ওয়েবসাইটে প্রদত্ত ‘ইমিগ্রেশন, রিফিউজি এন্ড সিটিজেনশিপ কানাডা ডিপার্টমেন্টাল প্ল্যান’ নথিতে দেখা যায় কানাডা সরকার ২০১৯ সালে তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার মানুষকে এবং ২০২০ সালে তিন লক্ষ চল্লিশ হাজার মানুষকে সে দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দিতে যাচ্ছে।
সরকারী এই আনুকূল্যের সুবাদে ইতিমধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ এবং যোগ্য মানুষেরা বিপুল সংখ্যায় কানাডায় অভিবাসী হচ্ছেন কিংবা হওয়ার চেষ্টা করছেন। সে তুলনায় বাংলাদেশ থেকে কানাডায় অভিবাসনের হার তুলনামূলকভাবে কম। এর অন্যতম একটি কারণ হলো ইংলিশ ভাষায় আমাদের দুর্বলতা এবং এ সংক্রান্ত ভীতি।
ইন্টারনেটের সুবাদে বর্তমান পৃথিবীতে অফুরন্ত তথ্যভান্ডার আজ সবার জন্য উন্মুক্ত। কানাডার মতো একটি উন্নত, সভ্য ও মানবিক পরিবেশের দেশে অভিবাসনের মাধ্যমে একজন মানুষ তার নিজের এবং তার পরিবারের সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করার সুযোগ পায়। এ অভিবাসনের জন্য কেবলমাত্র প্রয়োজন নির্ধারিত কিছু যোগ্যতা যথাযথভাবে পূরণ করা এবং সংশ্লিষ্ট সকল নথিপত্র যথাযথভাবে প্রদান করা। এইসব শর্তাবলী এবং নিয়মকানুন সবকিছুই কানাডার সরকারী ও বেসরকারী অনেক ওয়েবসাইটে বিস্তারিত দেয়া আছে। কিন্তু বাংলাদেশীদের অনেকেই তা নিজে জানার ও বুঝার চেষ্টা না করেই তৃতীয় পক্ষের উপর অন্ধভাবে নির্ভর করেন এবং অনেকসময়েই প্রতারণার শিকার হন
তবে একই সাথে অভিবাসন প্রক্রিয়াকে সহজতর এবং সম্ভবপর করে তুলতে যোগ্য তৃতীয় পক্ষের অবদান অস্বীকার করার মতো কোন বিষয় নয়। এ কারণেই উন্নত বিশ্বের এসব দেশে সরকারীভাবেই ইমিগ্রেশনের কাজে সহায়তা করার জন্য উপযুক্ত যোগ্যতা অর্জন সাপেক্ষে লাইসেন্স দেয়া হয়। সুতরাং আপনি যদি অভিবাসনের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে কোন ইমিগ্রেশন এজেন্টের সহায়তা নিতে যান, তাহলে সে এজেন্ট কিংবা সে সংস্থার যোগ্যতা, লাইসেন্স, ট্র্যাক রেকর্ড এসব আপনাকেই আগে যাচাই বাছাই করে নিতে হবে।
কানাডার সরকারী অভিবাসন নীতিমালা এবং নিয়মকানুন প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। কখনো যোগ হচ্ছে নতুন খাত, কখনো পুরনো কোন নিয়ম বা সুযোগ হয়তো বাদ দিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ কারণে সর্বপ্রথম করণীয় হলো কানাডার সরকারী ওয়েবসাইটের ‘ইমিগ্রেশন এন্ড সিটিজেনশিপ’ সেকশনে গিয়ে চলতি সময়ের নিয়মকানুন এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানার চেষ্টা করা। এ ওয়েবসাইটে এমনকি একটি ইন্টারএকটিভ ফরমে তথ্য দিয়ে প্রাথমিকভাবে নিজে নিজেই অভিবাসনের জন্য যোগ্যতা যাচাই করার সুযোগ দেয়া আছে। এটি প্রাথমিক কিছু ধারণা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত, তবে চুড়ান্ত আবেদন করার সময় সকল নথিপত্রের উপযুক্ততা এবং যথার্থতা ভালোভাবে যাচাই করা উচিত।
অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর মতো কানাডাতেও ছাত্রছাত্রীরা স্টুডেন্ট ভিসায় পড়ালেখা করতে যেতে পারে। তাছাড়া ফ্যামিলি স্পনসরশীপ প্রোগ্রামের আওতায় অভিবাসীরা তাদের স্বামী বা স্ত্রী সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকেও যথাযথ শর্তসাপেক্ষে স্পন্সর করে কানাডায় নিয়ে যেতে পারে। কারো যদি জাতীয় পর্যায় সাংস্কৃতিক কিংবা ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান রাখার যোগ্যতা থাকে তাহলে তাদের জন্য এদেশে সেল্ফ-এমপ্লয়েড বা আত্মনির্ভর পেশাজীবি হিসেবে অভিবাসনের সুযোগ আছে।
কোন ধনী ব্যবসায়ী যদি কানাডায় পর্যাপ্ত পরিমাণ সম্পদ ব্যবসায়ে মুলধন হিসেবে কাজে লাগান তাহলে তার জন্য ‘ইমিগ্র্যান্ট ইনভেস্টর প্রোগ্রাম’ এর আওতায় সেদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ ছিলো। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে এ পদ্ধতি ফেডারেল বা জাতীয় পর্যায়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে বর্তমানে চালু আছে স্টার্ট আপ ভিসা প্রোগ্রাম যার মাধ্যমে অভিবাসী উদ্যোক্তারা নতুন কোন ব্যবসায়িক উদ্যোগ নিয়ে কিংবা স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করার মাধ্যমে কানাডায় অভিবাসী হতে পারেন।
তাছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে বিনিয়োগকারীদের অভিবাসনের পুরনো ঐ প্রোগ্রামের পরিবর্তে বর্তমানে কিউবেক, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, মেনিটোবা কিংবা সাসকাচুয়ান প্রদেশগুলোতে ব্যবসায়ীরা স্থানীয়ভাবে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে পারেন। অস্ট্রেলিয়াতে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে রাজ্যগুলোকে অভিহিত করা হয় স্টেট নামে, একইভাবে কানাডায় এসব রাজ্যকে কিংবা প্রদেশকে সরকারীভাবে অভিহিত করা হয় প্রভিন্স নামে।
কানাডায় অভিবাসনের ক্ষেত্রে প্রভিনসিয়াল নমিনি প্রোগ্রাম বা পিএনপি একটি বহুল উচ্চারিত শব্দমালা। এ দেশের প্রদেশগুলো তাদের নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পেশার ও দক্ষতাসম্পন্ন অভিবাসীদেরকে কানাডায় নিয়ে আসতে পারে। যদি যথাযথভাবে সব শর্ত পূরণ করা যায় তাহলে অনেক ক্ষেত্রে এটিও হতে পারে একজন মানুষের জন্য কানাডায় অভিবাসনের উপযুক্ত উপায়।
এছাড়াও কানাডায় কেয়ারগিভার কিংবা সেবক/সেবিকা হিসেবে অভিবাসনের জন্য আছে বিশেষ সুযোগ। শিশু, বৃদ্ধ কিংবা অসুস্থ মানুষদের বিশেষায়িত সেবা দেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, যথাযথ অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা থাকলে শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে খুব সহজেই কানাডায় অভিবাসী হওয়া যায়। পাশাপাশি ফেডারেল স্কিলড ট্রেডস প্রোগ্রামের আওতায় বিশেষায়িত কর্মজীবিরাও কানাডায় অভিবাসী হওয়ার সুযোগ পায়। যেমন ইলেকট্রিশিয়ান, বুচার, শেফ, হেয়ার ড্রেসার এসব কাজ জানা লোকদের জন্য কানাডার দ্বার অবারিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বাংলাদেশের সমাজে যারা এসব কাজে দক্ষ তারা ইংলিশ ভাষায় দুর্বলতা এবং তাদের পেশাসংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত শিক্ষার সনদের অভাবে এসব ক্ষেত্রে আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন না।
উপরের এসব নানা খাতে কানাডায় আসা যায়। তবে অভিবাসনের মূল যে খাত, সর্বপ্রধান সে প্রোগ্রামের নাম হলো স্কিলড ওয়ার্কার প্রোগ্রাম অথবা ফেডারেল স্কিলড ওয়ার্কার প্রোগ্রাম। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী এ প্রোগ্রামে আবেদন করার উপায়কে বলা হয় ‘এক্সপ্রেস এন্ট্রি’। একজন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন দক্ষ পেশাজীবি মানুষের জন্য কানাডায় অভিবাসনের জন্য এটিই হলো প্রণিধানযোগ্য উপায়।
এক্সপ্রেস এন্ট্রি পদ্ধতিতে স্কিলড ওয়ার্কার হিসেবে কানাডায় অভিবাসনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল শর্তপূরণের মাধ্যমে নির্ধারিত সংখ্যক পয়েন্ট বা স্কোর অর্জন করতে হয়। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় মৌলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রথমতঃ ইংলিশ ভাষায় দক্ষতা, যা আইইএলটিএস পরীক্ষার স্কোর দিয়ে অর্জন করতে হয়। পাশপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত অভিজ্ঞতা, আবেদনকারীর বয়স, কানাডায় কোন কাজের অফার এবং সেদেশে টিকে থাকার যোগ্যতা কিংবা এডাপ্টিবিলিটি এসব খাতে নানা মাত্রাভেদে নানারকম পয়েন্ট দেয়া হয়। সবগুলো পয়েন্ট মিলে যদি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় তাহলে অতি সহজেই একজন মানুষ কানাডায় অভিবাসনের জন্য আবেদন করতে পারেন।
অভিবাসন নিঃসন্দেহে একজন মানুষের জীবনে অনেক বড় একটি সিদ্ধান্ত। এর সাথে জড়িয়ে থাকে পরিবারের অনেকগুলো মানুষের আশা-আকাঙখা, ভবিষ্যতের স্বপ্ন ইত্যাদি। আমাদের দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ একটু অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য পরদেশে প্রবাসের জীবন বেছে নেন। যথাযথ যোগ্যতা না থাকাতে এবং অনেক যময় পর্যাপ্ত তথ্যের কিংবা জানার অভাবে তারা অনেকেই এমন দেশে জীবনের বড় একটা অংশ কাটিয়ে দেন যেসব দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেয়া হয় না, নাগরিকত্ব দেয়া হয় না। অথচ কর্মজীবনের শুরুতে কিছুটা চেষ্টা এবং সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই হতে পারে একজন মানুষের জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার সূচনা।
বর্তমান বিশ্ব খুব দ্রুতই ছোট হয়ে আসছে, যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ভৌগোলিক সীমানার প্রভাব কমছে। কিন্তু তার পাশাপাশি উন্নত একটি দেশের সুযোগ সুবিধা ও উন্নত সমাজের নিশ্চয়তার প্রয়োজনীয়তা কমেনি বরং বেড়েছে। সুতরাং আপনি যদি অভিবাসনের চিন্তা করেন, যদি পৃথিবীকে ঘুরে দেখার স্বপ্ন দেখেন তাহলে এ মুহুর্ত থেকেই আপনাকে প্রচেষ্টা করতে হবে। ইংলিশ কথোপকথন ও যোগাযোগে সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করাই হতে পারে আপনার অভিবাসনের প্রথম পদক্ষেপ। এর পাশাপাশি অন্যান্য ভাষাতেও দক্ষতা আপনাকে কর্মজীবনে সহায়তা করবে। উদাহরণস্বরুপ কানাডার আরেকটি সরকারী ভাষা হলো ফ্রেঞ্চ যা জানা থাকলে কানাডায় অভিবাসনের জন্য তা সহায়ক হতে পারে।
ভাষাগত দক্ষতার পাশাপাশি গাড়ি চালানো এবং কম্পিউটারের নিত্যপ্রয়োজনীয় সফটওয়ার ব্যবহারে দ্ক্ষতা অর্জনের মতো স্কিলগুলোও অভিবাসী জীবনকে সহজ করে তোলে। একজন আত্মবিশ্বাসী, দক্ষ এবং উম্মুক্ত মানসিকতার মানুষের জন্য বর্তমান পৃথিবীতে প্রকৃতপক্ষে স্বপ্ন দেখার শুরু আছে, কিন্তু শেষের কোন সীমানা নেই। আমাদের প্রিয় দেশটি থেকে যোগ্য মানুষেরা পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ুক, এবং সততা ও দক্ষতার সাথে সবাই যার যার কর্মক্ষেত্রে সফল হয়ে উঠুক আমরা এ প্রত্যাশাই করি।