লোকাল কুইজিন বা স্থানীয় খাবারের একটা আকর্ষণ সবসময়েই পর্যটকদের মন ভোলায়। কোথাও বেড়াতে গেলে প্রাকৃতিক দৃশ্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখার পর আকর্ষণীয় বিষয় হলো খাবার দাবার ও শপিং। আবার কোথাও যাবার আগে খাবার দাবার কেমন পাওয়া যাবে, সে খোঁজ নিয়ে যাওয়া ও ভালো। কারণ অনেকে নিজস্ব দেশীয় খাবার ছাড়া কিছুই খেতে চান না। অবশ্য অধিকাংশ মানুষ কোনো দেশ ভ্রমনে গেলে সে দেশের স্থানীয় খাবার খেতে বেশি আগ্রহ বোধ করে।
প্রথমেই বলে রাখা ভালো নেপালে প্রায় সব দেশের খাবারই পাওয়া যায়। মেক্সিকান, রাশিয়ান, জার্মান, ভারতীয়, মঙ্গোলীয়, চীনা, জাপানি এমন অনেক দেশের খাবারই এখানকার মাঝারি মানের রেস্টুরেন্টে পাবেন। এর কারণ হলো নেপাল ট্যুরিস্ট কান্ট্রি। তাই পর্যটকদের জন্য সব রকম খাবারের ব্যবস্থাই রাখা হয়েছে। থামেলের মতো ট্যুরিস্ট এলাকাতে বাংলাদেশি খাবারও পাওয়া যায়।
ভর্তা-ভাত, মাছসহ মোটামুটি জনপ্রিয় সব বাংলাদেশি ডিশ এখানে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশি খাবারের একাধিক রেস্টুরেন্ট আছে থামেলে। আর নেপালের স্থানীয় খাবার এবং তিব্বতি খাবার পাবেন ছোটবড় সব রেস্টুরেন্টেই।
নেপালের স্থানীয় খাবারের স্বাদ বেশ ভালো। ভাত বা রুটি যাই খান প্রথমে পরিবেশিত হবে পাঁপড়। পাঁপড়ের সঙ্গে থাকবে ঝাল আচার। নেপালের জাতীয় খাবার হলো ডাল-ভাত। ডাল রান্না হয় ভারি মসলা দিয়ে। মুগডাল আলাদা করেও রান্না হয়। আবার পাঁচমিশালি ডালও পাবেন। ডাল অনেক ঘন। এটা দিয়ে রুটি খাওয়া চলে। ডাল ভাতের সঙ্গে পাবেন সবজি। এটাও পাঁচফোড়ন দিয়ে বেশ ঘন করে রান্না করা হয়। তার সঙ্গে থাকে পনিরের তরকারি। পনির চাকা চাকা করে কাটা। মসলা দিয়ে মাংসের মতো করে রান্না করা। দারুণ সুস্বাদু। এসব খাবার সাধারণ রেস্টুরেন্ট এমনকি রোডসাইড ধাবাতেও পাবেন।
কাঠমান্ডুর সাধারণ এলাকার ছোটখাটো রেস্টুরেন্টে গরুর মাংস পাওয়া যায় না। থামেলের মতো ট্যুরিস্ট এলাকাতে অবশ্য গরুসহ সব ধরনের মাংস ছোট রেস্টুরেন্টেও পাওয়া যায়। মাছ পাওয়া যাবে। তবে মাছের বৈচিত্র্য খুব বেশি নয়। থামেলে মাঝারি ও বড় রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় গাধা, ওয়াইল্ড বোর, মহিষের মাংস।
কাঠমান্ডুতে তিব্বতি খাবারের অনেক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। অন্যান্য রেস্টুরেন্টেও আর কোনো তিব্বতি খাবার না পেলেও মোমো পাওয়া যাবেই যাবে। মোমো হলো এক ধরনের তিব্বতি পিঠা। ফ্রাইড রাইস পাবেন। এগুলো থাই ও নেপালি দুরকম ধরনেই তৈরি হতে পারে।
নেপালে ক্যাসিনো ও বার সরকারিভাবে স্বীকৃত। এখানে ও মিলবে বাফেট ডিনার এবং ড্রিঙ্কস।
এবার আসা যাক শপিং প্রসঙ্গে। কাঠমান্ডু শহর প্রকৃতপক্ষে ৩টি শহর নিয়ে গড়ে উঠেছে। কাঠমান্ডু, ভক্তপুর ও পাটন বা ললিতপুর। ললিতপুর হল নেপালের প্রাচীন রাজবংশের আবাস স্থল। ১২শ’ শতকের রাজপ্রাসাদ ও অভিজাতদের প্রাসাদসহ পুরো এলাকাটি পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এখানে কোনো আধুনিক স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ। এই এলাকার সঙ্গেই রয়েছে কেনাকাটার জন্য বাজার এলাকা।
কাঠমান্ডুর চেয়ে পাটনে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কম। এখানে পাবেন নেপালের বিখ্যাত পশমিনা শাল, নেপালি টুপি, আংগোরা সোয়েটার, শাড়ি, পাথরের মালা, দুল, চুড়িসহ হরেক রকম জিনিস।
পাথরের মালা নেপালের ঐতিহ্যবাহী গয়না। চীনের সামগ্রীতেও ভরপুর নেপালের বাজার। সানগ্লাস, জ্যাকেট, শার্ট, টাই, প্যান্টসহ সব রকম পোশাক সস্তায় মিলবে এখানে।
নেপালের বিভিন্ন সুভ্যেনির যেমন, জপযন্ত্র, কাঠের বুদ্ধ মূর্তি, ছবির ফ্রেম পাবেন এখানে। কাঠের কাজের জন্য পাটন বিখ্যাত। কাঠের তৈরি সামগ্রীতে এই এলাকার বাজার ভরপুর। বিখ্যাত নেপালি ভুজালি, কুকরি, ছুরি মিলবে এখানে।
এখানে বলে রাখা ভালো- ভুজালি বা ছুরি জাতীয় কোনো কিছু বিমানে ফেরার সময় হ্যান্ড লাগেজে বা ক্যাবিন লাগেজে রাখবেন না। তাহলে বিমানবন্দরে তা ফেলে দেওয়া হবে। এগুলো মূল লাগেজে রাখবেন। আরো জানিয়ে রাখা ভালো এখানে ব্যাপক দরদাম চলে। দর কষাকষি চলে থামেল ও ঝামেলসহ যে কোনো শপিং কমপ্লেক্সে।
নেপালের হস্তশিল্পের মধ্যে বিখ্যাত হল মুখোশ ও থাংকা। কাঠের তৈরি বিভিন্ন মুখোশ শোপিস হিসেবে অনবদ্য। পেপার ম্যাশের তৈরি মুখোশও পাবেন। থাংকা কাপড়ে আঁকা ছবি। সিল্ক জাতীয় কাপড়ে আঁকা মূলত বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন দেবদেবীর ছবি থাকে থাংকায়। নকশা করা থাংকা বেশ দামি। কয়েক হাজার নেপালি রুপি দামের এসব থাংকা বিক্রি হয় বিভিন্ন কিওরিওশপ বা শিল্পকর্ম বিক্রি করে এরকম দোকানে। তিব্বতি থাংকার নাম বেশি। তিব্বতি হ্যান্ডি ক্রাফটসের দোকান রয়েছে থামেল, পাটন ও দরবার স্কয়ারে।
তবে কেনাকাটা করে সবচেয়ে আরাম হলো থামেলে। নেপালি শালের ছড়াছড়ি এখানে। আর নেপালি গয়নার দোকান তো থামেলে বলতে গেলে কয়েক’শ। থামেল থেকে হেঁটে দরবার স্কয়ারের দিকে যাবার পথেও পড়বে বিভিন্ন রকম দোকান।
বাংলাদেশের টাকার চেয়ে নেপালের রুপির দাম কম। তাই শপিং করে বেশ শান্তি পাওয়া যায় এখানে।
সকলের হিমালয় দেশ ভ্রমণ সুখকর হোক।
আল আমিন রনি