শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৮ অপরাহ্ন

কাটছেই না ডলার সংকট; রিজার্ভে চাপ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩

ডলার সংকট কাটছেই না। সংকট কাটাতে নানা উদ্যোগের পরও দিন দিন তা তীব্রই হচ্ছে। বর্তমানে যা চরম আকার ধারণ করেছে। মূলত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে ডলার সংকটের সূত্রপাত। এর পর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক একের পর এক সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমদানিতে আরোপ করা হয় কড়াকড়ি শর্ত। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। উল্টো জরুরি আমদানিতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। এতে চাপ বাড়ছে রিজার্ভের ওপরে। প্রতিনিয়ত কমছে রিজার্ভ।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে কোনো ব্যাংকের কাছে সস্তায় কিংবা স্বাভাবিক দামেও ডলার বিক্রি করা হবে না। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এতে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৫ বিলিয়নের ডলারের ঘরে। আর যা বিপিএম ৬ অনুযায়ী আমাদের খরচ করার মতো রিজার্ভ এখন ১৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত (৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন) ৫৩২ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরজুড়ে দেশে ডলারের তীব্র সংকট ছিল। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ডলার না থাকায় রিজার্ভ থেকে অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রি করা হয়। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয় রিজার্ভ থেকে। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ছয় হাজার কোটি টাকা আয় করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। যদিও ব্যবহারযোগ্য রির্জাভ আরও কম। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, খরচ করার মতো রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। আর দুই বছর আগে ২০২১ সালের আগস্টে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। এর পরের বছর ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট রিজার্ভ ছিল ৩৯ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার।

সম্প্রতি রেমিট্যান্স কেনায় বাড়তি প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এতে প্রতি ডলার রেমিট্যান্স থেকে প্রবাসীদের স্বজনরা পাচ্ছেন বাড়তি প্রণোদনা। রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের দাম হয়েছে ১১৫ টাকা। যদিও সংকট থাকায় গোপনে আরও বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনছে ব্যাংকগুলো, যা খোলাবাজারের দরের চেয়ে বেশি। পাশাপাশি হুন্ডি দরের প্রায় কাছাকাছি।

সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা হুন্ডি (অবৈধ পথ) এড়িয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। এতে রেমিট্যান্সে নতুন জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি ডলার সংকট কমিয়ে রিজার্ভ বাড়াতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এদিকে, চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনে প্রায় ৭৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। প্রদিদিন গড়ে আসছে প্রায় ৮ কোটি (৭ দশমিক ৯৪ কোটি) ডলার। এভাবে রেমিট্যান্স আসার ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে রেকর্ড ২৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। যা নতুন রেকর্ড তৈরি করবে। এর আগে সবশেষ গত আগস্টে ২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল রেমিট্যান্স।

রেমিট্যান্সের প্রতি ডলারে ১১৫ টাকার বেশি নয়: রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১২২ টাকার বেশি দর দেওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে আসার পরই জরুরি বৈঠকে বসে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা। গত ৮ নভেম্বর যৌথ বৈঠকে নতুন সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠন দুটি। সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে প্রবাসী আয়ে ব্যাংকের নিজস্ব প্রণোদনাসহ ডলারের দর কোনোভাবেই ১১৫ টাকার বেশি দেওয়া যাবে না।

নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও ডলার সংকট কমছে না। বিপরীতে বেড়েই চলেছে ডলারের দাম। এবিবি ও বাফেদা গত ১ সেপ্টেম্বর প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় নির্ধারণ করে। এর সঙ্গে রেমিট্যান্সে ব্যাংকগুলো নিজেদের মতো করে প্রণোদনা দিতে পারবে বলে জানানো হয়। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক এ দরে ডলার পাচ্ছে না। এখন ১২২ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত দরে ডলার কিনছে অনেক ব্যাংক।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com