তাহলে বন্ধুরা চলুন, কলম্বিয়া সম্পর্কে আরো কিছু জানা-অজানা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
১। আমেরিকা মহাদেশদ্বয়ে ইউরোপীয়দের আগমনের আগে পর্যন্ত বর্তমান কলম্বিয়া যেখানে অবস্থিত, সেই অঞ্চলটিতে বেশ কিছু আদিবাসী আমেরিকান জাতি বাস করত। এদের মধ্যে “চিবচা” জাতি অন্যতম। ১৬শ শতক থেকে ১৯শ শতক পর্যন্ত কলম্বিয়া স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৮১৯ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পরে এটি একটি নির্বাচিত সরকার-শাসিত প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
২০শ শতকের মধ্যভাগে গৃহযুদ্ধ কলম্বিয়ার সমাজব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ধনী শিল্পোন্নত দেশগুলিতে মাদকদ্রব্যের, বিশেষত কোকেনের চাহিদার ফলে কলম্বিয়াতে অবৈধ মাদক চোরাচালান ব্যবসা প্রসার লাভ করে। কলম্বীয় সরকার মাদক উৎপাদন সীমিত করার এবং বিরোধী গেরিলা বাহিনীর সাথে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ২১শ শতকের শুরুতে এসেও সহিংসতা কলম্বীয় নাগরিকদের জীবনের নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনা ছিল।
২। ১১ লাখ ৪১ হাজার ৭৪৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ৫ কোটি মানুষের বসবাস।
৩। দেশটির সরকারী ভাষা স্প্যানিশ। তবে দেশটির কিছু অঞ্চলে ইংরেজি হচ্ছে সরকারী ভাষা।
৪। কলম্বিয়ার প্রধান ধর্ম হচ্ছে খ্রিস্টধর্ম। দেশটির প্রায় ৯২ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী।
৫। কলম্বিয়ার রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর বোগোটা। শহরটি সমুদ্রতল থেকে প্রায় ২৬৪০ মিটার উঁচুতে আন্দেস পর্বতমালার একটি পর্বতবেষ্টিত মালভূমির উপর অবস্থিত। ১ হাজার ৫৮৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরতিতে মোট ৮২ লাখ মানুষের বাস।
৬। কলম্বিয়া প্রধানত একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। তবে আবহাওয়ার ভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে দেশটিকে ৬টি ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালে দেশটির তাপমাত্রা থাকে ১৭-২৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এবং শীতকালে তা গিয়ে দাড়ায় ১২-১৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে।
৭। কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র দেশ যার ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর, উভয় জলভাগেই তটরেখা আছে।
৮। কলম্বিয়াতে প্রশান্ত মহাসাগরের ২০০০ মাইলেরও বেশি সমুদ্র উপকূল রয়েছে।
৯। দেশটিতে ৩০০ টিরও বেশি সমুদ্র সৈকত আছে। যেগুলো স্থানীয় এবং পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত।
১০। দেশটির পূর্বদিকে অবস্থিত কলম্বিয়াস জঙ্গল দেশটির মোট আয়তনের ৫০ শতাংশেরও বেশি দখল করে আছে। এতো বড় অঞ্চলে দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ বাস করে। এরা মূলত স্থানীয় ইন্ডিয়ান উপজাতি।
১১। কলম্বিয়ার এক-তৃতীয়াংশ অ্যামাজন রেইনফরেস্ট দিয়ে ঢাকা।
১২। কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশ।
১৩। দেশটিতে ১৮০০ টিরও বেশি পাখির প্রজাতি পাওয়া যায়।
১৪। কলম্বিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জীব বৈচিত্র্যময় দেশগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়, দেশটিতে ৩০০ টিরও বেশি ইকোসিস্টেম রয়েছে।
১৫। “কানো ক্রিস্টালস” নদীটিতে নানা সময় নানা ধরণের রঙ দেখতে পাওয়া যায়, এর কারন নদীটিতে অবস্থিত ফুল, মাছ এবং সুন্দর সুন্দর সব শিলা পাথর। এটি কোন ভাবেই আশ্চর্যের নয় যে, নদীটিকে “তরল রংধনু” বলা হয়ে থাকে।
১৬। কলম্বিয়াতে মোট ৫৮ টি জাতীয় উদ্যান রয়েছে, যা দেশটির মোট আয়তনের প্রায় ১১ শতাংশ।
১৭। দেশটিতে রাতের খাবারের পর ছোট বাচ্চাদের কফি খাওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। তবে বড়রা কড়া ব্ল্যাক কফি খেয়ে থাকেন, যেখানে ছোটরা খায় হালকা দুধ মিশ্রিত কফি।
১৮। বিশেষ বিশেষ ঘটনার সময়, কলম্বিয়ান সরকার এলকোহল এর ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এটা করা হয় ভায়োলেন্স কমানোর জন্য। বিশ্বকাপ ফুটবলের পাশাপাশি রাজনৈতিক নির্বাচনের সময় এই নিয়মটি কার্যকর করা হয়।
১৯। কলম্বিয়ান আইন অনুযায়ী দেশটির প্রত্যেকটি টিভি এবং রেডিও চ্যানেলে প্রতিদিন সকাল ৬টা এবং সন্ধ্যা ৬টায় দেশটির জাতীয় সংগীত বাজানো বাধ্যতামূলক।
২০। কলম্বিয়া এতো বেশি জীববৈচিত্র্য সম্পন্ন দেশ যে, এখানে এমন অনেক প্রাণী রয়েছে যেগুলো পৃথিবীর আর কোন দেশেই পাওয়া যায়না।
২১। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, অ্যামাজন নদীতে পাওয়া গোলাপি রঙের ডলফিন।
২২। দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম মোটরসাইকেল রুট কলম্বিয়াতে অবস্থিত। এটি ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে বিসৃত।
২৩। কলম্বিয়ানরা কখনোই সরাসরি কোন কথায় “না” বলে না। এর বদলে তারা কেন কাজটি করতে অপারগ সেটি ব্যাখ্যা করে।
২৪। বিশ্ববিখ্যাত পপ তারকা সাকিরার জন্ম কিন্তু এই কলম্বিয়াতেই।
২৫। দেশটির রাজধানী বোগোটাতে প্রায় সবগুলো রাস্তাতেই চোখে পড়বে স্ট্রীট আর্ট। গ্রাফিতি এই দেশে অবৈধ কোন কাজ নয়।
২৬। ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে, কলম্বিয়া বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের খেতাব পেয়েছিল।
২৭। কলম্বিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল।
২৮। কলম্বিয়ার সরকারী মুদ্রা পেসো।
২৯। ২০১৯ সালের এক হিসাবে দেশটির মোট জিডিপি $৩৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ৭ হাজার মার্কিন ডলার।
৩০। কলম্বিয়ার ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৫৭।