কলগার্ল থেকে বলিউডের নামকরা চিত্রনাট্যকার

১৭ বছর বয়সে শুরু করেন কলগার্ল পেশা। ২৭ বছর বয়স পর্যন্ত এটাই ছিল তার প্রধান কাজ। এরপর জীবন বদলাতে বার ড্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখানে বাধা আসলে হয়ে যান বার সিঙ্গার। এরপরের জার্নিটা রূপকথার মতো। বর্তমানে মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকারী সাগুফতা রফিক।

জন্মদাত্রী মাকে চোখে দেখেননি কখনও। খোঁজও পাননি তার। বাবা-কে; তাও জানেন না। একবেলা খাবার জোটে তো পরের বেলা পেট ভরানো দায়। পালিত মায়ের অর্থাভাবের কষ্ট দেখে অন্ধকার জীবনে পা বাড়ান সাগুফতা। নেমে পড়েন দেহ ব্যবসায়। টানা ১০ বছর দেহ বেচে সংসার চালিয়েছেন তিনি।

ফ্লিম ফেয়ার সূত্রে জানা গেছে, সাগুফতা ছোট থেকে লালিত-পালিত হয়েছিলেন অভিনেত্রী আনওয়ারি বেগমের কাছে। তিনি তাকে দত্তক নিয়েছিলেন। কিন্তু একটা সময় কাজের অভাবে আনওয়ারি আর্থিক দৈন্যতায় পড়ে যান। এই সময় কলগার্লের পেশায় ঢুকে পড়েন সাগুফতা। এমনও সময় আসে যে ভিক্ষাও করতে হয়েছে তাকে।

একসময় পরিচয় হয় মহেশ ভাটের সঙ্গে। তিনি ফোন করে মোহিত সুরির সঙ্গে সিনেমা নিয়ে কথা বলতে বলেন। সাগুফতা জানিয়েছেন, এই ফোনের দিনও তিনি বারে নাচছিলেন। মহেশ ভাট বলেছিলেন, ‘এসব ছেড়ে দাও।’ সাগুফতা জানিয়েছিলেন, ঠিকঠাক কাজ না পেলে তার পক্ষে এসব ছাড়া সম্ভব নয়।

‘ও লমহে’ সিনেমার কাহিনি লেখার আগে তার জীবনের ছোট-ছোট কিছু মুহূর্তকে পরবর্তী সময়ে ‘আশিকি টু’এর কাহিনিতে স্থান দিয়েছিলেন। ‘আশিকি টু’র নায়িকা যখন নায়কের কথায় কাজ ছাড়তে চেয়ে যে সংলাপটি বলেছিল, সেই একই সংলাপই বাস্তবে মহেশ ভাটকে বলেছিলেন সাগুফতা।

এরপর ক্যারিয়ারে একাধিক হিট সিনেমা উপহার দেন তিনি। ‘ও লমহে’, ‘রাজ’, ‘মার্ডার-২’, ‘জিসম-২’, ‘জান্নাত-২’, ‘রাজ থ্রি ডি’, ‘হামারি অধুরি কাহানি’র মতো সিনেমার গল্প লেখা এই অন্ধকারের রাণীর। এছাড়াও ‘সড়ক ২’ এর কাহিনিও তার লেখা। ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল সিনেমাটির।

২০১৯ সালে একটি বাংলা সিনেমারও পরিচালনা করেছিলেন সাগুফতা। সিনেমার নাম ‘মন জানে না’। এটি একটি অ্যাকশন থ্রিলার। বক্স অফিসে খুব একটা চলেনি সিনেমাটি। এর নায়িকা ছিলেন মিমি চক্রবর্তী ও যশ দাসগুপ্ত।

‘আশিকি টু’এর কাহিনি-তে তার জীবনের প্রভাব রয়েছে বলেই দাবি করেন সাগুফতা। তিনি জানিয়েছেন, এই সিনেমার কাহিনির পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে তার অনুভূতির কথা, তার জীবন সংগ্রামের কথা।

বর্তমানে বলিউডের ক্যামেরার পিছনের অন্যতম শক্তিশালী তারকা হিসাবে মানা হয় সাগুফতাকে। অনেকেই বলেন, মহেশ ভাটের সঙ্গে পরিচয়কে ভাঙিয়ে সাফল্যের সিঁড়িতে উঠেছেন সাগুফতা। কিন্তু বিষয়টিকে এভাবে না দেখে, বলা যায়- আস্তাকুড় থেকে এক খাঁটি হিরাকে খুঁজে বের করেছিলেন মহেশ ভাট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: