বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন

কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ বাংলাদেশি পর্যটকদের

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

বিদেশে গিয়ে ঘুরতে বের হলে প্রায় সবাই-ই পাসপোর্ট সঙ্গে রাখেন। তবে রাতের বেলা অনেকেই পাসপোর্টসহ নথিপত্র হোটেলে বা আবাসস্থলে রেখেই বাইরে বের হয়ে যান। আর কলকাতায় পাসপোর্ট সঙ্গে না রেখে এভাবে ঘুরে বেড়ানোর সময় হয়রানির শিকার হচ্ছেন বহু বাংলাদেশি নাগরিক। এমনকি, তাদের কাছে পাসপোর্ট না পেলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন পুলিশের কতিপয় সদস্য। হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।

কলকাতার নিয়ম অনুযায়ী, ভারতীয় নাগরিকদেরও তার নাগরিকত্বের পরিচয় সঙ্গে রাখতে হয়। পুলিশের সন্দেহ হলে যে কাউকেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। সেই সময় ভারতীয় ব্যাক্তিটি যদি তার সরকারি পরিচয়পত্র (ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড) দেখাতে না পারেন, তবে পুলিশের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আসা অনেকেই এ বিষয়ে জানেন না। যে কারণে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

ঠিক এমনই একটি ঘটনা ঘটে গত ১৭ নভেম্বর। ট্যুরিস্ট ভিসায় তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় ঘুরতে যান। তাদের ভাষ্যমতে, এর আগেও বেশ কয়েকবার তারা কলকাতায় গিয়েছেন, কিন্তু কখনোই এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়নি।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রীতিমতো ধমক দিয়ে পুলিশের গাড়িতে বসিয়ে, কলকাতা নিউমার্কেটের এগলি-ওগলি ঘুরিয়ে, জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে, শেষপর্যন্ত অর্থও দাবি করা হয় তাদের কাছে।

ওই তিন বাংলাদেশি বলেন, খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তারা রাত ১২টার পর মির্জাগালিব স্ট্রিটে হাঁটতে বের হন। ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে একটি পুলিশের গাড়ি (নাম্বার WB 02 AF5494) তাদের সামনে এসে দাঁড়ায় ও তিনজন পুলিশ গাড়ি থেকে নেমে তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করে।

একপর্যায়ে পাসপোর্ট দেখতে চাইলে বাংলাদেশিরা পুলিশকে বলেন, রাতে খেতে বের হয়েছিলাম, পাসপোর্ট তো সঙ্গে আনিনি। তখনই পুলিশ বলে, গাড়িতে উঠুন, থানায় যেতে হবে। থানায় যাওয়া বাদে সমাধান আছে কি না জানতে চাইলে, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কলকাতা পুলিশ ফাইনের নামে অর্থ হাতানোর চেষ্টা করে।

ওই তিন বাংলাদেশির দাবি, ফাইন হিসেবে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২ হাজার রুপি দাবি করেন ‍পুলিশ সদস্যরা। কিন্তু ওই প্রস্তাব না মানায় জেলে পাঠানো হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।

তিন বাংলাদেশির একজনের ভাষ্য, একপর্যায়ে সাদা ইউনিফর্মের পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে নির্মল নামে ড্রাইভারকে বলেন, এদের সঙ্গে সহজ কথায় কাজ হবে না। তুই গাড়ি থানায় নে, আমি দেখতেছি। এদের বিরুদ্ধে তো আমিই জিডি লিখবো। এমন দুই-তিন পাতার জিডি লিখবো যে, জেলে ঢুকিয়ে ছাড়বো। পাসপোর্টে লাল সিল দেবো। এদের জেলে ঢুকাতে না পারলে আমি চাকরিই ছেড়ে দেবো।

পরে ফোনের মাধ্যমে কলকাতার এক পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই তিন বাংলাদেশি। পরিচিত ওই ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরপরই তাদেরকে ‘ফাইন’ ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়।

কলকাতার নিউমার্কেট চত্বরে আরও কয়েকজন বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত সাড়ে ১০-১১টার দিকে তারা যখন ভাতের হোটেলগুলো থেকে খেয়ে বের হচ্ছেন, তখনই পুলিশি হয়রানি মুখে পড়ছেন তারা। পুলিশ তাদের প্রথমে জিজ্ঞেস করছে, কোথায় থাকেন? পরিচয়ে বাংলাদেশি বলা হলে, পাসপোর্ট দেখতে চাওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশিরা পুলিশকে বলছেন, রাতে খেতে বের হয়েছিলাম, পাসপোর্ট তো সঙ্গে নেই। তখনই পুলিশ বলছে তাদের থানায় নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। তাছাড়া টাকা বিনিময়ে সমাধান করার প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে অহরহ।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার এক বাসিন্দা বলেন, রাতের বেলা বাবাকে নিয়ে খেতে বের হয়েছিলাম। তারপরই এই হয়রানির শিকার হই। পরে বাকবিতণ্ডা হওয়ায় আমাকে ও আমার বাবাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এক ঘণ্টা পুলিশের গাড়িতে আমাদের ঘোরানো হয়।

‘অবস্থা বেগতিক দেখে আমি বলি, কী করতে হবে বলুন। আমার বাবা অসুস্থ, আমাদের ছেড়ে দিন। তখন পুলিশ দশ-দশ করে বিশ হাজার রুপি দাবি করে। পরে ১২ হাজার রুপি নিয়ে তারা আমাদের কিড স্ট্রিটে (ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম) নামিয়ে দিয়ে যায়।’

এদিকে, এসব বিষয় নিয়ে রীতিমতো চরমভাবে বিরক্ত ‘মারক্যুইস স্ট্রিট-ফ্রিস্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’। মূলত বাংলাদেশিদের সহযোগিতার জন্য এই সোসাইটি গঠিত হয়েছিল। সেই সোসাইটির সঙ্গে যারা জড়িত, তারা ওই অঞ্চলের হোটেল ব্যবসায়ী, ট্রাভেল, মানি এক্সচেঞ্জ ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত।

ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্য মনতোষ সরকার জানিয়েছেন, এটা মোটেও ভালো কাজ না। আমরা কয়েকটা ঘটনা জানতে পেরেছি। স্থানীয় নিউমার্কেট থানা, পার্কস্টিট থানা ও কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তর লালবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারাও সব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।

নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ী মনোতোষ সাহা বলেন, পুরো নিউমার্কেট চত্বরটি বাংলাদেশি নির্ভর। কলকাতায় বাংলাদেশিরা এলে এই অঞ্চলেই ওঠেন। আর তাদের কারণেই এই অঞ্চলে ব্যবসা-বানিজ্য সচল থাকে। এমনিতেই ভারতীয় ভিসা না পাওয়ায় বাংলাদেশিরা এখানে কম আসছেন। তার ওপর এই হয়রানির শিকার হলে, তা লজ্জাজনক। এটা মোটেও বরদাস্ত করা যাবে না। প্রয়োজনে আমরা লোকাল থানায় ডেপুটেশন দেবো।

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী শুভজিৎ চক্রবর্তী বলছেন, অবশ্যই স্থানীয় বা বিদেশি যেই হোক না কেনো, তার পরিচয়পত্র পকেটে রাখা উচিত। এটাই নিয়ম। আর বিদেশে ভ্রমণে গেলে পাসপোর্ট ছাড়া বের হওয়া মোটেই উচিত না। যখনই ভারত তথা কলকাতার কোনো সড়কে বাংলাদেশিরা পা রাখবেন, সঙ্গে পাসপোর্ট রাখতে হবে।

তবে পুলিশ সহযোগিতা না করে সমস্যা সৃষ্টি করার বিষয় আইনজীবী বলেছেন, অবশ্যই এটা লজ্জার বিষয়। তবে সব পুলিশ সমান নয়। পুলিশ যেমন আমাদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে, তেমন তাদের কারণে বাংলাদেশিরাও কলকাতায় নিরাপদে থাকেন। এমন বহু উদারহরণ আছে। ফলে সবাই সমান নয়। তবে যা হচ্ছে তাও, অপ্রত্যাশিত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com