শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১০ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

করোনায় স্বপ্নভঙ্গ : দেশে ফিরছেন অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী

  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১

স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। বারবার বিফল হলেও শেষ পর্যন্ত সফল হওয়ার অপেক্ষা করেন। কিন্তু করোনার কারণে বর্তমানে অনেক কিছুই স্বাভাবিক নেই। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার কাজও স্বাভাবিক সময়ের মতো হচ্ছে না। এ কারণে অনেকেই নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন না। অনেকে বিলম্বে হলেও সফল হয়েছেন। তবে কেউ কেউ সিটিজেনশিপ আবেদন করলেও তা সময়মতো পাননি। আবার কেউ কেউ গ্রিন কার্ড নবায়ন করতে গিয়েও সময়মতো পাননি। গ্রিন কার্ডধারীদের কেউ কেউ দুই বছরের অনুমতি নিয়ে দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু সময়মতো ফিঙ্গারপ্রিন্টের নোটিশ না আসায় সেটা দিয়ে যেতে পারেননি। আগেই দেশে চলে গেছেন। কিন্তু দেশে যাওয়ার পর ডেট পেয়েছেন। এ অবস্থায় হয় তাকে ফিরে এসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হবে, নয়তো তার আবেদন বাতিল হবে। প্যান্ডামিকের কারণে অনেককেই এ ধরনের সমস্যার মধ্যে সময় পার করতে হয়েছে। যাদের নথিপত্র রয়েছে, করোনার কারণে বিলম্ব হলেও সেটাকে তারা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। কিন্তু সমস্যায় পড়েছেন তারা, যাদের কেস এখনো অ্যাপ্রুভ হয়নি বা তাদের কোনো নথিপত্র নেই।

যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর অনেকেই আশা করেছিলেন, এখানে বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন করবেন। কোর্টে আবেদন অ্যাপ্রুভ হলে থেকে যাবেন। অনেকের মামলা চলমান রয়েছে। মামলা শেষ হলে যদি অ্যাপ্রুভ হয়, তাহলে এখানে থাকবেন আর অ্যাপ্রুভ না হলে দেশে ফিরে যাবেন। সেই হিসাব করে অর্থকড়িও সঙ্গে এনেছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় ও ভার্চুয়ালি হওয়ায় অনেক মামলার কাজই বিলম্বিত হচ্ছে। নথিপত্রহীন যেসব মানুষ আবেদন করেছিলেন, তারা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় তাদের অনেকেই আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারেননি। কোর্টে কেস থাকার পরও তা সারেন্ডার করে দেশে ফিরে গেছেন। আবার অনেকেই দেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জানা গেছে, অনেকেই আশায় ছিলেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকবেন। এখানে থেকে কেস অ্যাপ্রুভ হলে স্বপ্নের আমেরিকায় সুখে দিন কাটাবেন। সে জন্য ধৈর্য ধরে বেশ কিছুদিন ছিলেনও। কিন্তু মামলার শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় এবং অনুমোদন হবে কি না তা নিশ্চিত না হওয়ায় তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। সম্প্রতি এমন কয়েকজন দেশে ফিরে গেছেন।

এদিকে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, তারা এখানে এসে কয়েক মাস থাকেন, বাচ্চাদের এখানে রেখে পড়াশোনা করান। বাচ্চাদের স্কুলের লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর তারা কলেজেও ভর্তি হয়। এরপর অনেকেই চেষ্টা করে এখানে থেকে যাওয়ার। কিন্তু কেউ পারে আবার কেউ পারে না।

করোনার কারণে এ ধরনের কিছু মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। এ রকম বাংলাদেশি একটি পরিবার দেশ থেকে অর্থ এনে খরচ চালায়। এখানে কোনো চাকরিবাকরি করতে না পারায় একসময় জমানো অর্থ সব শেষ হয়ে যায়। তারা চেষ্টা করেন পরিবার নিয়ে একটি বেসমেন্টে থাকার। কিন্তু কোনো সুবিধা করতে পারেননি। অনেক চেষ্টা ছিল এখানে স্থায়ী হবেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হননি। দেশে প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক তারা। কিন্তু এখানে আয়েশি ও আরামের জীবন না হওয়ায়, অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এখানে আর না থাকার সিদ্ধান্ত নেন। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় এখন দেশে ফিরে যাচ্ছেন। আগামী মাসে চারজনের পরিবারের সব সদস্য দেশে ফিরে যাবেন।

এ ব্যাপারে ওই পরিবারের একটি সূত্রে জানা গেছে, পরিবারটি এখানে কোনো কাজ করত না। কম ভাড়ায় বেসমেন্টে ছিল। কিন্তু এখন দেশে করোনার কারণে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় তাদের দেশের ব্যবসায় আগের মতো আয় নেই। তাই দেশ থেকে অর্থ এনে এখানে যে খরচ চালাতেন, সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। আবার প্যান্ডামিকের কারণে এখানেও কাজ না পাওয়ায় পরিবারটি বাসা ছেড়ে দিয়ে চলতি মাসের শেষ দিকে একবারে দেশে চলে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে কেস অ্যাপ্রুভ না হওয়ায় অনেকেই এখানে কষ্ট করে থাকতে চাইছেন না। তারা দেশে ফিরে যেতে চাইছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে তাদের কেসের ফলাফল হয়তো আগেই হতো। কিন্তু এখন অনেক কেসের শুনানির তারিখ এক থেকে দুই বছর, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও বেশি দিন পিছিয়ে গেছে। এ অবস্থায় তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, এখানে থাকা আর ঠিক হবে না। যাদের নথিপত্র আছে এবং যারা ডব্লিউ-টুতে আমেরিকায় করোনার সময়ে চাকরি হারিয়েছেন, তারা ফেডারেল সহায়তা, বেকার ভাতা, স্টিমুলাস সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা পেয়েছেন। এ কারণে তাদের তেমন কষ্ট না হলেও যারা নথিপত্রহীন, কোনো স্ট্যাটাস এখনো নেই, তাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। অনেকেই বিভিন্নজনের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে চলেছেন। যারা ক্যাশে কাজ করেন, তারা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। যদিও নিউইয়র্ক স্টেটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নথিপত্রহীনদের জন্য কিছু সুবিধা দেওয়া হবে। ন্যূনতম ৩২০০ ডলার ও সর্বোচ্চ ১৫৬০০ ডলার দেওয়া হবে। কিন্তু এগুলো তারাই পাবেন, যাদের কাজের প্রমাণ রয়েছে এবং ট্যাক্স ফাইল করেছেন। বেশির ভাগ নথিপত্রহীন মানুষ ট্যাক্স ফাইল করেন না। যারা ট্যাক্স ফাইল করেন না, তারা তেমন কোনো সুবিধাই পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে তাদের অবস্থা খুবই করুণ।

ঠিকানা রিপোর্ট 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com