বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৬ অপরাহ্ন
Uncategorized

করোনাকালে সাগরকন্যায়

  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ জুলাই, ২০২১

ভ্রমণের সবকিছু প্রস্তুত। ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। এরপর যাত্রা শুরু। আমি বের হয়েছি রংপুর থেকে। প্রথমে গেলাম ঢাকায়। সেখান থেকে সদরঘাটের লঞ্চে উঠে বসলাম। জীবনে প্রথমবার লঞ্চভ্রমণের শিহরণই আলাদা। নদীর জলের ওপর দিয়ে এগিয়ে চলা। তার সঙ্গে রাতভর লঞ্চের ছাদে বন্ধুদের গান-আড্ডা-গল্পে কোন সময় যে লঞ্চ তীরে ভিড়ল টেরই পেলাম না। রাতের ভ্রমণ সত্যি দুর্দান্ত! আনলিমিটেড ফানের সঙ্গে নদীর জলের ওপর পড়া রাতের জ্যোৎস্নায় পুলকিত হচ্ছিলাম বারবার। লঞ্চে উঠেই শূচির আনন্দ দেখে কে! খুশিতে বরিশালে বিয়ের সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিল সে!

লঞ্চভ্রমণ শেষ। আমরা পৌঁছে যাই বরিশালে। সেখান থেকে রেদোয়ান, আর বাসে অনভ্যস্ত সাবিনাকে সাথে নিয়ে রওনা হই পটুয়াখালী। আর সেখান থেকে সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। ততক্ষণে প্রায় দুপুর ঘনিয়ে এসেছে। সমুদ্র বাড়ি রিসোর্টে নেমেই দেখা মিলল শামীম আর আব্দুল্লাহর। ভোররাত থেকেই তারা অপেক্ষা করছিল। আমাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ। সব বন্ধু একসঙ্গে হলাম বহু মাস পর। কিছুটা আলাপ সেরে নিই। চলে হায়-হ্যালো পর্ব। তারপর খানিকটা বিশ্রাম! একটু পর বিশ্রামপর্বে বাদ সাধল আবির-শাকিল। চিৎকার-চেঁচামেচি। অপেক্ষা আর নয়। সমুদ্রে যেতে হবে, জলে সাঁতার কাটতে হবে। তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পড়লাম৷ তবে তানভীর নেই সাথে। বেচারা সবকিছু সামলাতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। পুরো ট্যুরের খুঁটিনাটি তানভীরই খেয়াল রেখেছে। বলা যায় সে আমাদের ট্যুর গাইড।

জার্নিতে থাকায় ক্ষুধা টের পাইনি এতক্ষণ। এবার পেট চোঁ চোঁ করছে৷ সেই আগের দিন সন্ধ্যায় খেয়েছিলাম লঞ্চে ওঠার আগে! তারপর খাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছি। একদিন পর স্থানীয় সামুদ্রিক মাছের সুস্বাদু রান্নায় ক্ষুধা নিবারিত হলো ভালোভাবেই।

সমুদ্রের তীর ধরে হাঁটছি। ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে চারিদিকে। তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর সানন্দে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। ওদিকে তপ্ত রোদ। সূর্য তার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মস্তিষ্কে এসে আঘাত করছে তীব্র রোদের ঝিলিক। একটা ছাতা খুঁজছিলাম। কিন্তু ছাতা আবার কোথায় পাই! সে চিন্তা বাদ দিলাম। থাক না; একবারই তো এসেছি এমন ভ্রমণে।একটু না হয় রোদ খেলাম! কিন্তু না। তা হতে দিল না বন্ধুরা। ছাতা একটা জোগাড় হয়েছে শেষে!

সূর্যের দাপট শেষে শুরু হয়ে যায় মিষ্টি রোদের বিকেল। এবার তীরের ঢেউতে রোমাঞ্চকর পরিবেশ। এ পাশে প্রেম-অপ্রেম দ্বন্দ্ব মিলিয়ে আমার শাড়ির আঁচলও খানিকটা ভিজল সমুদ্রের জলে! গোধূলিবেলায় রক্তবর্ণের সূর্যের বিমূর্ত অবস্থান দেখে বারবার প্রশ্ন করছিলাম নিজেকে নিজে, ‘আরও আগে কেন আসিনি সাগরকন্যায়!’

লেখক: মারিহা আক্তার শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com