করোনা মহামারির সময় বাকি সবার মতো ঘরবন্দী হয়ে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের জন ফ্যাবিয়ানো। করপোরেট চাকরি আর দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততায় খানিকটা ফুরসত পেলে প্রকৃতি ও প্রাণীর ছবি তোলার শখ তাঁর। ঘরবন্দী দিনে তা–ও করার জো ছিল না। পোষা কুকুর ভিয়োলাকে নিয়েই কাটছিল সময়। সে সময় শুরু করেন আলোকচিত্র বিষয়ে পড়াশোনা। ভালো একটা ক্যামেরা কেনার টাকাও জমাতে শুরু করেন।
ছবি তোলার শখ মনে পুষে ফ্যাবিয়ানোর আরও দুটি বছর কেটে যায়। ২০২২ সাল। পাক্কা সিদ্ধান্ত নিয়ে চাকরি ছাড়েন। এরপর পথে নামেন ছবি তুলতে। তাঁর ছবির বিষয় কুকুর। এখন দেশ-বিদেশ ঘুরে কুকুর আর মানুষের বন্ধুত্বের গল্প ক্যামেরাবন্দী করেন। এটাই এখন জন ফ্যাবিয়ানোর পেশা।
ফ্যাবিয়ানো গত দুই বছরে কখনো গ্রিনল্যান্ডে গিয়ে শুভ্র তুষারের মধ্যে স্লেজ কুকুরের ছবি তুলেছেন, কখনো গেছেন জার্মান শেফার্ডকে ফ্রেমবন্দী করতে জার্মানি, আবার কখনো ভারতের অলিগলি চষে বেড়িয়েছেন বেওয়ারিশ কুকুরের গল্পের খোঁজে। গ্রিনল্যান্ডে কুকুরের স্লেজ টানার একটি ছবি তাঁকে এনে দিয়েছে ২০২৪ সালের ডগ ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডে প্রথম পুরস্কার।
ফ্যাবিয়ানো ছবি তুলতে গিয়ে দেখেছেন অঞ্চলভেদে কুকুরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের বৈচিত্র্য। যেমন কোস্টারিকায় বেওয়ারিশ কুকুরদের এক আশ্রয়কেন্দ্রে ছবি তুলতে গিয়ে তাঁর মনে হয়েছিল, এ যেন ‘ল্যান্ড অব স্ট্রে ডগ’। সেখানে প্রায় ১ হাজার ৮০০ পথকুকুর ছিল। পুরো আশ্রয়কেন্দ্রকে তাঁর একটি ছোটগল্পের সংকলন মনে হয়েছে। আবার এর আগে ২০২৩ সালের মার্চে জার্মানিতে গিয়ে এক নারীর সঙ্গে ফ্যাবিয়ানোর পরিচয়। যিনি ১০টি জার্মান শেফার্ড পোষেন এবং প্রতিটি কুকুরের সঙ্গেই দারুণ বন্ধুত্ব। ফ্যাবিয়ানোর সবচেয়ে স্মরণীয় সফরের একটি বোধ হয় অস্ট্রেলিয়ায়। সে সফরে গিয়ে তাঁর মতোই এক কুকুরপ্রেমীর সঙ্গে ৪০ দিন ক্যাম্পারভ্যানে ভ্রমণ করেন ফ্যাবিয়ানো।
কুকুরদের ছবি তোলা মোটেই সহজ নয় বলে মনে করেন ফ্যাবিয়ানো। মনের মতো ছবির জন্য কুকুরের পেছন পেছন ছুটতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো টানা এক সপ্তাহ ছবি তুলতে পারি না। এক দিন ছবি তুললেই পরদিন হাঁটু আর ঊরুর পেশি জানান দেয় আগের দিন কতটা ধকল গেছে।’
ফ্যাবিয়ানো তাঁর পোষা কুকুর ভিয়োলাকে নিয়েও ঘুরে বেড়ান। সম্প্রতি কোস্টারিকায় বেড়ানোর সময় প্রেমিকা স্টেফ আর কুকুর ভিয়োলাকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। তিনি জানান, তাঁর অনেক দুঃসময়ের সঙ্গী ভিয়োলা। মন খারাপের সময়গুলোতে যখন নিজেকে উদ্দেশ্যহীন মনে হতো, তখন ভিয়োলার সঙ্গে সময় কাটাতেন। ভিয়োলার সঙ্গ তাঁকে জীবনের খারাপ সময় থেকে বের হতে সাহায্য করেছে।
ছবি তোলার পাশাপাশি প্রাণী অধিকার বিষয়েও সোচ্চার ফ্যাবিয়ানো। দেশে দেশে প্রাণী অধিকারকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন, অংশ নেন নানা কর্মসূচিতে।