বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন
Uncategorized

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট : ইউরোপ

  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ মে, ২০২১

জার্মানি বলতেই হিটলারের কথা মনে আসা মোটেই অস্বাভাবিক নয় । একই সঙ্গে আলবার্ট আইনস্টাইন, কার্ল মার্ক্স-এর কথাও মনে আসে। জার্মানি এমন এক দেশ যারা দুটো বিশ্বযুদ্ধেই খুব সক্রিয়ই ছিল না কেবল, বলা চলে তাদের জন্যে বিশ্ব দুটো যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। যদিও দুই ক্ষেত্রেই তাদের বেশ শোচনীয়ভাবে পরাজিত হতে হয়েছে। দুই বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা সামলেও এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র মহাপণ্ডিতদের দেশ জার্মানি।

মিউজিয়াম আইল্যান্ড, বার্লিন
মিউজিয়াম আইল্যান্ড, বার্লিন। ছবি : উইকিমিডিয়া কমন্স

মিউজিয়াম আইল্যান্ড (Museum Island)

জাদুঘর সবসময়ই ঘোরার জন্য আদর্শ জায়গা । আর যদি সেটা পশ্চিম ইউরোপের কোনো দেশে হয় তাহলে তো কথা নেই ।  ফ্রান্সে যেমন ল্যুভর, ইংল্যান্ডে যেমন ব্রিটিশ মিউজিয়াম, জার্মানির বুকে তেমন আছে মিউজিয়াম আইল্যান্ড । নাম থেকেই একটি বিষয় স্পষ্ট, এটি কেবল একটি জাদুঘর না, বরং জাদুঘরের সমষ্টি বলা যায় । মিউজিয়াম আইল্যান্ডে মোট জাদুঘর ৫টি। পারগামন মিউজিয়াম, বোড মিউজিয়াম, নুয়েস মিউজিয়াম, আল্ট ন্যাশনাল গ্যালারি এবং আল্টস মিউজিয়াম। জার্মানির রাজধানী বার্লিনেই অবস্থিত এই জাদুঘরে গড়া এলাকাটি ।

 

এখানে কেবল জার্মান ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সমাবেশই ঘটেনি বরং প্রাচীন মিশর, বাজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মত জায়গা থেকেও এসেছে বিভিন্ন নিদর্শন । এছাড়া রোমান সাম্রাজ্যের নানাবিধ দিক তো আছেই। ইতিহাসের পাশাপাশি স্থাপত্যবিদ্যার অজস্র নিদর্শন রয়েছে এইসব জাদুঘরে। আছে বধির এবং অন্ধদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাও।

সানসৌসি পার্ক, পটসডাম
সানসৌসি পার্ক, পটসডাম। ছবি : পিন্টারেস্ট
সানসৌসি পার্ক, পটসডাম (Sanssouci Park, Potsdam)

সানসৌসি প্রাসাদ এবং এর সংলগ্ন অঞ্চলটির বয়স প্রায় ২৫০ বছরের কাছাকাছি। এই প্রাসাদ এবং চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এতই মনোমুগদ্ধকর যে, পর্যটকদের মুখে মুখে এই পটসডাম শহরের আরেক নাম হয়ে গিয়েছে বার্লিনের ভার্সাই। ১৭৪০ সালে এই নান্দনিক স্থাপনা নির্মান করা হয় প্রুসিয়ান রাজা ফ্রেডরিক দ্য গ্রেটের গ্রীষ্মকালীন অবকাশের জন্য। এই প্রাসাদটিতে সর্বমোট কক্ষ সংখ্যা ১০টি। অসাধারণ স্থাপত্যকলার কারণে এই ১০ কক্ষেই সানসৌসি প্রাসাদ যেকারো মন জুগিয়ে নিতে সক্ষম।

 

শুধু প্রাসাদের বর্ণনা দিয়েই এখানে ক্ষান্ত হওয়া চলে না। বরং আলাদাভাবে বলতে হয় এর চারপাশের বাগানের কথা। এর গঠনশৈলি এতই অসাধারণ যে, সানসৌসি বাগানের সৌন্দর্য্য সপ্তদশ এবং অষ্টদশ শতকের যেকোন বাগানকে হারিয়ে দিতে পারবে। বিশাল সব ভাস্কর্য, ঝর্ণা আর চৈনিক চাঘরে আপনি অনায়াসে কাটাতে পারেন পুরো এক দিন।

ক্লোগনে ক্যাথিড্রাল
ক্লোগনে ক্যাথিড্রাল। ছবি : ট্রোভার
ক্লোগনে ক্যাথিড্রাল (Cologne Cathedral)

জার্মানির অন্যতম ভুতুড়ে, বৃহত্তম এবং আকর্ষণীয় চার্চ বলা চলে এই ক্লোগনে ক্যাথিড্রাল। গথিক স্থাপত্যকলার অন্যতম সেরা নিদর্শন বলে পরিচিত। এবং বলা চলে জার্মানির সবচেয়ে দর্শনার্থী সমাগম হয় এখানেই। আকাশচুম্বী  চূড়া, কাঁচের তৈরি জানালা, এবং ক্যাথিড্রালের বিভিন্ন বাঁক একে করে তুলেছে বিশ্বের অন্যতম সেরা গথিক স্থাপনা। এর ভেতরে এবং বাইরের অসাধারণ নির্মাণশৈলি আপনাকে বারবার বুঝিয়ে দিবে গথিক স্থাপত্যকলা কেন পৃথিবীতে অনন্য এক বিষ্ময় এবং কেনইবা ক্লোগনে ক্যাথিড্রাল জার্মানির সবচেয়ে বড় ভ্রমণ আকর্ষণের একটি।

 

প্রতি সোম থেকে রবিবার দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে এই ক্যাথেড্রাল। সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যেকোনো সময় আপনি যেতে পারেন এই ক্যাথিড্রালে। তবে ভোরের আলোয় ক্লোগনে ক্যাথিড্রাল সম্ভবত তার সবটুকু রূপ প্রদর্শন করে।

মধ্য রাইন ভ্যালির উচ্চভূমি
মধ্য রাইন ভ্যালির উচ্চভূমি। ছবি : সংগৃহীত
মধ্য রাইন ভ্যালির উচ্চভূমি  (Upper Middle Rhine Valley) 

 

মধ্য রাইন ভ্যালির উচ্চভূমি বা রাইন জর্জ এলাকাটি প্রায় ৬৫ কিলোমিটার বা ৪০ মাইল বিস্তৃত এক এলাকা। কোব্লেঞ্জ থেকে বিনগেন অঞ্চল পর্যন্ত পুরো জায়গাটি প্রাসাদ, ঐতিহাসিক শহর আর চমৎকার সব বাগানে ভর্তি। এটি একটি দেশের ঐতিহ্যগত বৈচিত্র্যতার আদর্শ নিদর্শন বলে সহজেই ধরে নেয়া যায়।

এটি একইসাথে সাংস্কৃতিক, প্রাকৃতিক এবং ভূপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। ২০০২ সালে এই পুরো এলাকাটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই জায়গাটি আবিষ্কার করতে জার্মানির প্রায় অনেকগুলো দশক পার করতে হয়েছে। জার্মানি এলে এই জায়গাটি দর্শন করতে ভুলবেন না যেন।

ওয়ার্টবার্গ প্রাসাদ
ওয়ার্টবার্গ প্রাসাদ, জার্মানি। ছবি : উইকিমিডিয়া কমন্স
ওয়ার্টবার্গ প্রাসাদ (Wartburg Castle)

থিরুঞ্জিয়া অঞ্চলের ওয়ার্টবার্গ প্রাসাদ স্থানীয় জার্মানদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। পাহাড়ের উপরের এক অসাধারণ প্রাসাদ, যা নির্মাণ করা হয়েছিল মধ্যযুগীয় কোন এক কালে। পুরো প্রাসাদ এখনো পর্যন্ত তার মূল আদলেই আছে। যদিও এর ভিতরে বেশ কিছু সংস্কার করতে হয়েছে। আর এই সংস্কারকালে জার্মান ঐতিহ্য ধরে রেখে একে যথাসম্ভব আধুনিক করা হয়েছে। প্রাসাদের বিভিন্ন করিডোর এবং ভূগর্ভস্থ পথ দর্শনার্থীদের একেবারেই অন্যরকম এক অনুভূতি দিবে। বাইরের পর্যটকদের কাছে খানিক অপরিচিত এই জায়গাটি আপনাকে কালের বিভিন্ন আলাদা আলাদা স্থান দেখাবে এক ভ্রমণেই।

রোমান ধ্বংসাবশেষ
জার্মানিতে রোমান ধ্বংসাবশেষ। ছবি : উইকিপিডিয়া
রোমান ধ্বংসাবশেষ (Roman Relics)

কিছুটা মধ্য ইউরোপের অংশ হলেও এখানেও আছে রোমান সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শনের ধ্বংসাবশেষ। দক্ষিণপশ্চিম জার্মানির ট্রায়ার (Trier) অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এইসব অসাধারণ সব রোমান কীর্তি। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকে গড়ে উঠা এই অঞ্চলের পরিচিতি একসময় ছিল ‘দ্বিতীয় রোম’ হিসেবে। বর্তমানে এই শহরটিতে আগের কোন জৌলুশ না থাকলেও রোমান  ধ্বংসাবশেষের বাইরেও জার্মানির সভ্যতা বিকাশের বড় নিদর্শন হিসেবে টিকে আছে।

 

ইউনেস্কোর ধারণা অনুযায়ী এটি জার্মানির সবচেয়ে পুরাতন কিছু শহরের একটি। এখানে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের মাঝে উল্লেখযোগ্য হিসেবে বলা যায়, সেইন্ট পিটার ক্যাথেড্রাল, চার্চ অফ আওয়ার লেডি, একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার, সেইন্ট বারবারা স্নানাগার, কন্সট্যান্টাইনের ব্যাসিলিকা এবং বিখ্যাত পোর্ট নিগ্রা গেইট। এতসব রোমান নির্দশন জার্মানি এসে হাতছাড়া যেন কোনভাবেই না হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com