রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট : এশিয়া মহাদেশ

  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪
ড্যান ব্রাউনের ইনফার্নো পড়েছিলেন তো? যদি পড়ে থাকেন তবে তুরস্ক নামক দেশটির অনেক কিছুই আপনার জানা থাকবার কথা। আচ্ছা, বই না হয় পড়া হলো না। কিন্তু ট্রয় নগরীর কিংবদন্তী নিশ্চয় শুনেছেন? হ্যাঁ! আধুনিক তুরস্কেরই অংশ ঐতিহাসিক সেই নগরী। এ এমন এক দেশ যেখানে মিশেছে নানা সভ্যতা, নানা ঐতিহ্য। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট নিয়ে ধারাবাহিক পরিচিতির এশিয়া পর্বের সবশেষ দেশ হিসেবে থাকছে তুরস্ক।

বিচিত্র এই দেশ থেকেই এশিয়ার শেষ আর ইউরোপের শুরু ধরে নেয়া যায়। ভৌগলিকভাবে তুরস্কের অবস্থান যেমন এশিয়ার মাঝে আছে, তেমনই আছে ইউরোপের মাঝেও। বিচিত্র এই দেশ তুরস্কে ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট মোট আঠারটি। এবং এর মাঝে এমন কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে যা সম্পর্কে জানলে কেবল বিষ্মিতই হতে হয়।

কেমন হবে উষ্ণ এক হ্রদে নেমে আপনি জানতে পারেন এটা ঠিক একই হ্রদ যেখানে খ্রিস্টেরও জন্মের দুইশত বছর আগে আতালিদ রাজারা গোসল করেছিলেন? বিষয়টি মোতেই অসম্ভব না যদি আপনি দক্ষিণপশ্চিম তুরস্কের দেনজলি প্রদেশের পামুক্কেলে থাকেন। বর্তমান নাম শুনতে খানিক অদ্ভুত লাগলেও এর প্রাচীন নামটি অনেকের কাছেই পরিচিত। এটি তুরস্কে রোমান এবং গ্রিক সম্রাজ্যের নিদর্শন হিয়েরাপোলিস শহর, যার জন্ম আজ থেকে প্রায় ২২০০ বছর আগে।

এই শহরটি তৈরি হয়েছিল হ্রদের ওপর ভাসমান শহর হিসেবে। হাজার বছর ধরে জমে থাকা এই পানি এখানে তৈরি করেছে অনন্য সুন্দর এই নিদর্শনের। যার সৌন্দর্য বর্ণনায় আসলে কোন উপমাই যথেষ্ট নয়। প্রাচীন হিয়েরাপলিস শহরটি এই হ্রদের পানিতেই ধ্বংস হয়েছিল। পামুক্কেলে অঞ্চলটি তাই মানব সভ্যতা আর প্রকৃতি এই দুয়ের এই অসাধারণ বন্ধন বলেই পরিচিত সবার কাছে।

আধুনিক তুরস্ক থেকে বেশ দূরের শহর আদ্রিনের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত এই সেলিমিয় মসজিদ। জায়গাটি বুলগেরিয়া এবং গ্রিস সীমান্তের একেবারেই কাছাকাছি জায়গায়। মসজিদ এবং মসজিদ সংলগ্ন সোশ্যাল কমপ্লেক্স দুইই জায়গা করে নিয়েছে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে। মসজিদটি নির্মাণ করা হয় ১৫৬৯ থেকে ১৫৭৫ সালের মধ্যে। তুরস্কের মসনদে তখন অটোমান শাসনকাল চলছিল।বিখ্যাত অটোমান স্থাপত্যবিদ মিমার সিনান এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। যিনি এই মসজিদ সম্পর্কে বলেছিলেন, এটিই তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্থাপনা। প্রায় ২৭০ ফিট উঁচু মিনারটি আদ্রিন শহরের দিগন্তরেখায় সবসময়ই বাড়তি সৌন্দর্য যোগ করে।

সাফরানবলু শহর

রাজধানী আঙ্কারা থেকে উত্তরে কয়েকঘন্টা গেলেই দেখা পাবেন অসাধারণ এক শহরের। অসাধারণ এই শহর পুরোপুরি স্থান করে নিয়েছে ইউনেস্কোর তালিকায়। ত্রয়োদশ শতকে এই শহরটি উন্নতির একেবারে চূড়ায় উঠে। এই শহরটি বিশাল অটোমান সম্রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে একটি বাণিজ্যপথ হিসেবে ব্যবহৃত হত। বলা চলে এটি ছিল সেই পথের একটি প্রধান স্টপেজ।পরবর্তী একশ বছরে এই অঞ্চলের ব্যাপক উন্নতি ঘটানো হয়। তুরস্কের আদি এবং বর্তমান ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক যাত্রা, সেই সাথে তুরস্কের বাণিজ্য সম্পর্কে জানার জন্য এই সাফরানবলু শহরের জুড়ি মেলা ভার। আর সেই সাথে শহরে ছড়িয়ে থাকা অজস্র অটোমান নিদর্শন তো আছেই।

খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ১৬০০ থেকে ১৮০০ বছর আগের কথা। হিট্টি জনগোষ্ঠীদের বিশাল সম্রাজ্যের মাঝামাঝি এক জায়গায় রাজধানী গড়ে তোলার প্রয়োজন। তখন যে শহরের গোড়াপত্তন ঘটে তার নাম হাট্টুসা। যার বর্তমান অবস্থান কৃষ্ণসাগরের পাশে তুরস্কের বগাজকেল অঞ্চলে। ধারণা করা হয় বর্তমান তুরস্কের আদি নিবাসী ছিল এই হিট্টিরাই। এমনকি তুরস্কের মানুষের গড় উচ্চতা হিট্টিদেরই সমান। হিট্টিদের এই উচ্চতার মিল অবশ্য ইরাক-ইরান পর্যন্ত পাওয়া যায়। তাই তাদের মূল উৎপত্তি কোথায় তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে আয়। তবে রাজধানী হিসেবে তাদের শহর ছিল এই হাট্টুসা। আর এর সিংহদ্বার এখনো পর্যটকদের ঠিক পুরাতন এক রাজকীয় অনুভূতি জাগায়।

প্রাচীন ইস্তানবুল

আচমকা যদি প্রশ্ন করা হয়, তুরস্কের রাজধানীর নাম কি? আঙ্কারার চেয়ে ইস্তানবুল নামটিই বেশি আসবে। তুরস্ক নিয়ে মানুষের আর কিছু জানা না থাকলেও এই শহরটির নাম জানা আছে। ইস্তানবুল শহরটির অবস্থান এশিয়া এবং ইউরোপ দুই মহাদেশেই রয়েছে। এবং ১৯২৯ সাল পর্যন্ত এটিই ছিল তুরস্কের রাজধানী। বাজেন্টাইন, কন্সট্যান্টিনোপল সহ আরো হাজারো ইতিহাসেরসাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে ইস্তাম্বুল শহরটি। ঐতিহ্যবাহী এই শহরের চারটি আলাদা আলাদা জায়গাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো।

  • প্রত্নতাত্ত্বিক পার্ক : এতে আছে বিখ্যাত তোপকাপি প্রাসাদ। যা না দেখলে বলা যেতে পারে তুরস্ক ভ্রমণ অসম্পূর্ণ, বিখ্যাত ব্লু মসজিদ, সেই সাথে কন্সট্যান্টটাইনের বিখ্যাত মল্লযুদ্ধের মাঠ।
  • সুলায়মানি কোয়ার্টার : এখানে অন্তর্ভুক্ত আছে গ্র্যান্ড শাহজাদ এবং সুলায়মানি মসজিদ
  • জেরেক কোয়ার্টার
  • দুর্গ নগরী : এখানে আপনি পাবেন দ্বিতীয় থোডিয়াসের নির্মিত দূর্গের ধ্বংসাবশেষ, সেই সাথে বাজেন্টাইন সম্রাজ্যের অসংখ্য নিদর্শন।

ট্রয় নগরী

হেক্টর এবং গ্রিক বীর অ্যাকিলিসের উপাখ্যান পড়েননি এমন লোক পাওয়া দুষ্কর। ট্রয়ের এই ইতিহাস নিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রও। গ্রিকরা হেলেনকে উদ্ধার করতে যে ট্রয় নগরে ভিড় করেছিল, আধুনিক পৃথিবীর মানচিত্রে সেই ট্রয়ের অবস্থান তুরস্কে। প্রায় বছরখানেক যুদ্ধের পর গ্রিকরা চলে যাবার আগে ট্রোজানদের উপহার হিসেবে তারা দিয়ে গিয়েছিল একটি ঘোড়া। যা এখনো আছে কালের সাক্ষী হয়ে।এই ঘোড়া নিয়ে নানা কিংবদন্তী চালু থাকলেও কোনটি আসলে সত্য তা বলা যায়নি কখনই। তবে যা নিশ্চিত তা হল, ট্রয় নগরী এখন পর্যন্ত মানব সভ্যতার প্রায় ৪০০০ বছরের পুরাতন গল্প বলে। আর এখানে গেলে ২০০৪ সালে ব্র্যাড পিট অভিনীত চলচ্চিত্র ‘ট্রয়’এর বিভিন্ন দৃশ্যও দেখতে পাবেন সহজে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com