শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন

‘ওয়ার্ক পারমিট’ ভিসায় ইউরোপ

  • আপডেট সময় বুধবার, ১০ মে, ২০২৩

ভালো জীবন-যাপনের আশায় বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অনেকে ইউরোপের নানা দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে এই মহাদেশটি সম্পর্কে এ দেশের সাধারণ মানুষের প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে অনেকটা ‘হাইপ’ বললে ভুল হবে না।

ইউরোপের সীমানা কেবল জার্মানি, গ্রেট ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম কিংবা লুক্সেমবার্গের মতো কয়েকটি উন্নত দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

ইউরোপে এখনো অনেক দেশ রয়েছে যেগুলো অর্থনৈতিক দিক থেকে তুলনামূলকভাবে অনুন্নত। এমনকি, সামাজিক সূচকেও সেসব দেশ বেশ পশ্চাৎপদ। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় জীবনযাত্রার মান ও গড় আয়ের দিক থেকে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো অনেক পিছিয়ে।

রাজনৈতিকভাবে পশ্চিম ইউরোপ ও পূর্ব ইউরোপের সীমারেখা টানা হয় গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত বিরাজমান সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে। ইউরোপের পূর্বপ্রান্তের দেশগুলোতে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু ছিল।

অন্যদিকে, মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো গণতন্ত্র ও মুক্তবাজার অর্থনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। যদিও ভৌগলিকভাবে গ্রিস দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ, তবুও গ্রিসকে পূর্ব ইউরোপীয় দেশ বলা হয় না। কেননা, সেখানে কখনো সমাজতান্ত্রিক শাসন ছিল না।

বাল্টিক সাগরের তীরের লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্তোনিয়া ভৌগলিকভাবে পূর্ব ইউরোপের দেশ না হলেও এক সময় এসব দেশ প্রত্যক্ষভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসনে থাকায় এ দেশগুলোকে পূর্ব ইউরোপের দেশের বিবেচনায় রাখা হয়।

আরও অভিযোগ রয়েছে, একই ওয়ার্ক পারমিটের ডকুমেন্টে নাম ও অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে একাধিক ব্যক্তির কাছে দেয় বিভিন্ন এজেন্সি।

কারো অভিযোগ, অনেক সময় দেখা যায় কাগজে-কলমে বা ওয়েবসাইটে কিছু প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, ভিসা পাওয়ার পর শ্রমিকরা যখন সেসব দেশে যান তখন অনেক ক্ষেত্রে সেসব প্রতিষ্ঠানের বাস্তবিক অস্তিত্ব খুঁজে পান না। পরবর্তীতে টেম্পরারি রেসিডেন্ট পারমিটের আবেদন করতে গিয়ে বিড়াম্বনায় পড়েন অনেকে। বৈধ ভিসা নিয়ে ইউরোপে আসলেও অনেকে পরবর্তীতে অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন।

কারো অভিযোগ, এজেন্সিগুলো যে বেতন কাঠামোর কথা বলে তাদেরকে পূর্ব ইউরোপের দেশে পাঠাচ্ছেন, কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার পর তারা জানতে পারছেন তাদের বেতন আরও কম। এছাড়াও, মূল বেতন থেকে ট্যাক্স নেওয়ার পর তাদের যে বেতন জমা হচ্ছে তা পরিমাণের দিক থেকে খুবই অল্প।

গড় হিসাবে পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশের সাধারণ মানুষের আয় প্রতি মাসে ২৫০ থেকে ৪৫০ ইউরোর কাছকাছি। কোনো কোনো দেশে সাধারণ মানুষের আয় ২০০ ইউরোরও নিচে। কোনো দেশে অবশ্য মাসিক ৫০০ ইউরোর বেশি বেতন কাঠামো রয়েছে।

সঠিক তথ্যের অভাবে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ অনেক সময় নানা বিভ্রান্তির শিকার হন। অথচ আগে থেকে যদি কারো এ বিষয়ে যথার্থ ধারণা থাকে তাহলে এসব সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে সত্যিকার অর্থে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাইরের দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য কাজের সুযোগ কতটুকু?— এ প্রশ্নের উত্তরে হাঙ্গেরির ইউনিভার্সিটি অব পেচের জিওগ্রাফি শিক্ষক অধ্যাপক ড. আন্দ্রাস ট্রচসচায়ানি দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, সামগ্রিকভাবে যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর চেয়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে মজুরি অনেক বেশি।

ড. আন্দ্রাস বলেন, ‘হাঙ্গেরি তথা পূর্ব ইউরোপের একটি দেশে কোনো কাজের জন্য যে পরিমাণ বেতন দেওয়া হয় জার্মানি কিংবা অস্ট্রিয়াসহ পশ্চিম ইউরোপের দেশে ঐ একই কাজ করলে কমপক্ষে দ্বিগুণ বেতন পাওয়া যায়।’

‘তাই হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড ও সার্বিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের দেশ থেকে প্রতি বছর অনেকে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ফ্রান্স, ইতালিসহ পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে পাড়ি জমান,’ যোগ করেন তিনি।

‘এর ফলে এ সব দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে বিশেষ করে, নির্মাণ বা কৃষিখাতে শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। এ সব কাজে তেমন দক্ষতার প্রয়োজন নেই। কেবল শারীরিক শক্তির প্রয়োজন।’

সাইপ্রাসপ্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মাহাফুজুল হক চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অতীতে বাংলাদেশ থেকে অনেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় সাইপ্রাসে এসেছেন। মূলত কৃষি ও  পশুর খামারে ও একই সঙ্গে বাসা-বাড়ির কাজে বাংলাদেশ থেকে অনেকে শ্রমিক হিসেবে সাইপ্রাসে এসেছিলেন। এ সব কাজে শারীরিক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। কিন্তু, ইউরোপিয়ান বা আফ্রিকানদের মতো আমরা শারীরিকভাবে তেমন শক্তিশালী নই। তাই খুব বেশি বাংলাদেশি এ সব কাজে বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেননি।’

তার মতে, ‘এজেন্সিগুলো যে ওয়ার্ক পারমিটের কথা বলে সেগুলোর বেশিরভাগই নামেমাত্র ওয়ার্ক পারমিট। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এজেন্সিগুলো কৃষিখামারের মালিকদের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে চুক্তি করেন যে তাদের কিছু লোক ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় সাইপ্রাসে আসবেন এবং সেখানে পৌঁছানোর পরে তারা মালিকের কাছ থেকে রিলিজ নিয়ে নিবেন।’

‘এ ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায়, এজেন্সিগুলো কৃষিখামারের মালিকদের প্রায় দুই থেকে তিন হাজার ইউরো দেন। অথচ এজেন্সিগুলো তাদের ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার কথা বলে সাত থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে,’ যোগ করেন তিনি।

তিনি জানিয়েছেন, সাইপ্রাসে আসার পর প্রথম এক বছরের মধ্যে যদি কেউ অন্য কোনো মালিকের সন্ধান পান তখন তিনি তার মাধ্যমে ভিসা ট্রান্সফার করতে পারেন। তবে এই এক বছর তাকে ১,৬০০ ইউরোর ইন্স্যুরেন্স চালাতে হয়। আর যদি কোনো কারণে তিনি মালিক খুঁজে না পান কিংবা ইন্স্যুরেন্স চালাতে না পারেন তাহলে তিনি নতুন করে রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারেন না। তখন বাধ্য হয়ে তাকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে হয়। যদিও বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন খুব কম সংখ্যায় সাইপ্রাসের আদালতে গৃহীত হয়।

‘সাইপ্রাসে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় এসে ভিসা কন্টিনিউ রাখতে পেরেছেন এমন বাংলাদেশির সংখ্যা পুরো সাইপ্রাসে ৫০ জনও পাওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে শিক্ষার্থী মাহাফুজুল হক চৌধুরী বলেন, ‘তাই আমি এ ধরনের ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কাউকে সাইপ্রাস না আসার অনুরোধ করছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, তিনি কয়েক মাস আগে ঢাকার এক এজেন্সির মাধ্যমে সার্বিয়ায় ট্যুরিস্ট ভিসায় এসেছেন। এজেন্সি থেকে তাকে জানানো হয় সার্বিয়াতে পৌঁছানোর পর ভিসার ক্যাটাগরি পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।

তিনি আরও জানিয়েছেন, সেই এজেন্সি মূলত সার্বিয়ার একটি অবকাঠামো নির্মাণ সংস্থা থেকে ইনভাইটেশন লেটার নিয়ে তাকে ডি ক্যাটাগরিতে ভিসার আবেদন করতে বলেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এ ধরনের ভিসা নিয়ে বাইরে যাওয়ার জটিলতা রয়েছে। এমনকি, এ ধরনের ভিসায় সহজে ম্যানপাওয়ারের জন্য আবেদন করা যায় না। এজেন্সিগুলো ইমিগ্রেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে আমাকে সার্বিয়াতে পাঠায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এজেন্সি আমাকে বলেছিল সার্বিয়াতে পৌঁছানোর পর তারা আমার জন্য সেই কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে। সেখানে প্রতি মাসে আমার বেতন হবে ৫৭০ ইউরো। কিন্তু, এখানে আসার পর দেখি বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমনকি সার্বিয়া যে ইইউভুক্ত দেশ নয় সেটাও আমি আগে জানতাম না।’

‘তাই এখন চিন্তা করছি অবৈধ পথে প্রথমে রোমানিয়া যাব এবং সেখান থেকে হাঙ্গেরি হয়ে ইতালি বা ফ্রান্সে যাওয়ার চেষ্টা করব,’ যোগ করেন তিনি।

ক্রোয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি উল্লাহ আহম্মেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ক্রোয়েশিয়া সরকারের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ফলে আমাদের দেশ থেকে সম্প্রতি অনেকে কন্সট্রাকশনসহ বেশকিছু খাতে এ দেশে আসার সুযোগ পেয়েছেন। তবে আশানুরূপ কর্মদক্ষতা না থাকায় অনেক কোম্পানি তাদেরকে চাকরি থেকে বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও অনেক বাংলাদেশি সেনজেনভুক্ত কোনো দেশে অনুপ্রবেশের রুট হিসেবে ক্রোয়েশিয়াকে বেছে নিচ্ছেন। তাই ক্রোয়েশিয়াতে আসতে না আসতে তাদের সবার লক্ষ্য হয়ে ওঠে কিভাবে সীমানা পাড়ি দিয়ে স্লোভেনিয়া কিংবা হাঙ্গেরির ভেতর দিয়ে ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন কিংবা পর্তুগালে চলে যাওয়া যায়।’

‘অনেকে এ যাত্রায় সফল হন, অনেকে আবার পুলিশের হাতে আটক হন,’ যোগ করেন তিনি।

তার মতে, ‘এমন প্রবণতা থাকলে ক্রোয়েশিয়াতে আমাদের সব সম্ভাবনার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে।’

রোমানিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আরফান হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে অনেকে কাজের ভিসায় রোমানিয়াতে এসেছেন। মূলত কৃষিখামার বা নির্মাণ কাজের শ্রমিক হিসেবে তারা রোমানিয়াতে এসেছেন। এছাড়াও ওয়েলডিং থেকে শুরু করে প্লাম্বিং বা ফ্যাক্টরিতে কাজের জন্য রোমানিয়ার অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে।’

‘বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি করার জন্য রোমানিয়ার সরকার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই করেছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমাদের দেশের মানুষ এ সব কাজে তেমন দক্ষ নন। তাই রোমানিয়াতে আসতে না আসতে কয়েক মাসের মধ্যে তাদের অনেকে এ সব কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।’

‘অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে তিমিশোয়ারা কিংবা আরাদের চেক পয়েন্টে অনেক বাংলাদেশি রোমানিয়া কিংবা হাঙ্গেরির পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন,’ বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ডয়েচ ভেলে’র সাংবাদিক অনুপম দেব কানুনজ্ঞ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য ইউরোপের বাজারে ইইউয়ের বাইরে থেকে আসা অভিবাসীদের এখন আর কাজের সুযোগ তেমন নেই বললেই চলে। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা, অভিজ্ঞতা বা উচ্চশিক্ষা থাকলে বৈধ পথে দক্ষ কর্মীরা পশ্চিম ইউরোপের দেশে সহজেই আসতে পারেন।’

‘বাংলাদেশের অদক্ষ শ্রমিকদের বেশিরভাগই এই তথ্য জানেন না। তারা তথ্য পেয়ে থাকেন দালালদের মাধ্যমে এবং স্বপ্ন দেখেন অতীতে ইউরোপে যাওয়া স্থানীয় ও স্বজনদের মাধ্যমে। ফলে তাদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয় যে অবৈধ পথে কোনোভাবে ইউরোপে পৌঁছাতে পারলেই তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়ে যাবে।’

‘কিন্তু এ ধারণা যে কতটা ভুল, তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বসনিয়া, সার্বিয়া, তুরস্ক, গ্রিস, লিবিয়া, মরক্কো ইত্যাদি দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়,’ যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘মাসের পর মাস জঙ্গলে-পাহাড়ে পুলিশের তাড়া খেয়ে কাটিয়ে তারা ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেন। পুলিশের নির্যাতনে পঙ্গু হয়েছেন এমন অনেকের সঙ্গেও দেখা হয়েছে। অথচ এই কষ্টের রাস্তাতেই তাদের খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। এই টাকা খরচ করে দেশেই আয় করা সম্ভব। এমনকি, কারিগরি দক্ষতা অর্জন করে বৈধ পথে আসার চেষ্টা করাও সম্ভব।’

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও লন্ডন ১৯৭১’র প্রতিষ্ঠাতা উজ্জ্বল দাশ ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির জন্যে এ সব দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সৃষ্টির সুযোগ হয়েছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশ সরকার এ সব দেশে শ্রমশক্তি রপ্তানিতে জি টু জি পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে।’

গ্রিসপ্রবাসী বাংলাদেশি গবেষক ও ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ আল আমিন ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘বাইরের দেশগুলোতে অনিয়মিত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সংখ্যা যত বেড়ে যাবে বৈধ উপায়ে সেখান থেকে বিদেশ যাওয়া তত সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে।’

তিনি সবাইকে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিদেশে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ‘এখন ইন্টারনেটের যুগ, আপনি চাইলে নিজে একটু কষ্ট করে খোঁজাখুঁজি করে বের করতে পারবেন আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য। কোন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন সে বিষয়েও সুস্পষ্ট ধারণা নিতে পারবেন।’

‘কোনো এজেন্সির পরিবর্তে সরাসরি ইমেইলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনার ওয়ার্ক পারমিট সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন। পাশপাশি কারিগরি ও প্রশিক্ষণমূলক কাজ ও কোনো একটি বিদেশি ভাষা শিখে বিদেশ যাওয়া উচিত।’

রাকিব হাসান রাফি, শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com