১। সপ্তদশ শতাব্দীতে ওমান একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য ছিল। পর্তুগাল ও ব্রিটেনের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে চলত তারা। উনবিংশ শতাব্দীতে তাদের প্রভাব পাকিস্তান ও ইরান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিংশ শতাব্দীতে এসে এই প্রভাব কমতে শুরু করে। সালতানাতের ওপর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ছায়া দেখা দেয়।
২। ৩ লাখ ৯ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ৪৫ লাখ মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ৭০ তম বৃহত্তম দেশ।
৩। আদর্শ আরবি ভাষা ওমানের সরকারি ভাষা। আনুষ্ঠানিক ও সরকারি কর্মকাণ্ডে কথ্য ও লিখিত ভাষা হিসেবে আদর্শ আরবি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তায় স্থানীয় আরবি উপভাষাগুলিই বেশি ব্যবহৃত হয়।
৪। দেশটির প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। বিশেষ করে এখানে সংখ্যালঘু মুসলমান গোত্র ইবাদি জাতির লোকেরা বাস করে। এরা শিয়া ও সুন্নীদের চেয়ে স্বতন্ত্র।
৫। ওমান উপসাগরের তীরে অবস্থিত মাসকাট ওমানের রাজধানী এবং গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী।
![](https://banglai-bissho.com/wp-content/uploads/2019/08/sunset-3259621_1920-1024x683.jpg)
সাগর আর পাহাড়ের মাঝখানে আটকে থাকা মাসকাট শহরটি প্রাচীন ইতিহাস এবং সমৃদ্ধ ইসলামী ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে এর অসাধারণ সব দুর্গ, রাজপ্রাসাদ আর মসজিদের মাধ্যমে। মাসকাট একসময় পর্তুগিজদের দখলে ছিল। সেই সুবাদে শহরে পর্তুগিজ রীতিতে নির্মিত অনেক ভবনের দেখা মেলে। তবে শহরের স্থাপত্যগুলোতে পর্তুগিজ ছাড়াও আরব, পার্সিয়ান, ইথিওপিয়ান, ভারতীয় এমনকি আধুনিক পাশ্চাত্য ধাঁচও চোখে পড়ে।
দেশটির বেশিরভাগ জায়গায় পাহাড় আর মরুভূমি। তাই এদেশের শতকরা ৫০ ভাগ লোক রাজধানী মাসকাট ও বাটিনাহ শহরে বাস করে।
৬। এখানে সারা বছর খুব গরম পড়ে এবং আবহাওয়া খুবই শুকনো। তবে সমুদ্রতীরের জলবায়ু আর্দ্র।
৭। দেশটির উপকূল এলাকার ৫০ মাইলের মধ্যে মরুভূমির বালুর ভেতরে এখনও অনেক প্রাণীর ফসিল পাওয়া যায়। পুরাতত্ত্ববিদগণ বলেন, হাজার বছর পূর্বে ওমান ছিল একটি সমুদ্রবেষ্টিত দেশ।
৮। তেল ও গ্যাস আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত ওমানের লোকদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকাজ আর মাছধরা। দেশের প্রধান কৃষিপণ্য খেজুর। তবে তেল এদেশের প্রধান সম্পদ।
৯। সাধারণত ওমানের লোকেরা খুব অতিথিপরায়ণ। অতিথিকে খেজুর, এলাচ দিয়ে তৈরি কফি (কাহওয়া) এবং অন্যান্য ফল দিয়ে তারা আপ্যায়ন করে থাকে।
১০। ওমানের মেয়েরা বিয়ে বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে আমাদের দেশের মেয়েদের মতোই মেহেদি দিয়ে হাত রাঙায়।
১১। পৃথিবীতে আরবি ঘোড়ার খুব কদর। ওমানের লোকেরা ঐতিহ্যগতভাবে আরবি ঘোড়া পালন করে।![](https://banglai-bissho.com/wp-content/uploads/2019/08/r0_56_2784_1825_w1200_h678_fmax-1024x651.jpg)
১২। ঈদ উৎসব ছাড়াও বছরের শুরুতে ওমানে মাস্কাট উৎসব পালিত হয়। তখন বিভিন্ন জায়গায় নাচগানের আসর বসে। ওমানের আরো একটি উৎসবের নাম খারিফ। আগস্ট মাসে এই উৎসব পালিত হয়।
১৩। এদেশের ছেলেরা সাধারণত সাদা জোব্বা পরে। আর মেয়েরা সাধারণত পোশাকের সঙ্গে হিজাব পরে।
১৪। মরু অঞ্চলে চাষের জমি পাওয়া কঠিন। এ জন্য বর্তমানে এদেশে অনেক গ্রিনহাউস তৈরি করে তার ভেতরকার নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়ায় শাকসবজি ফলানো হচ্ছে।
১৫। পর্যটকদের কাছে ওমান খুব প্রিয়। মরুভূমি, সমুদ্র উপকূল আর পাহাড় দেখার জন্য প্রচুর পর্যটক এখানে আসে। তাদের জন্য অন্য একটি আকর্ষণ ওয়াদি। পাহাড়ের মাঝখানের শুকনো উপত্যকাগুলোর নাম ওয়াদি। এগুলো বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরে উঠে নদীর রূপ নেয়।![](https://banglai-bissho.com/wp-content/uploads/2019/08/oman-3550770_1920-1024x678.jpg)
১৬। এছাড়াও পক্ষীপ্রিয় মানুষদের জন্যও ওমান জনপ্রিয়। এখানে স্থানীয় প্রায় ৮০ প্রজাতির এবং অতিথি আরও প্রায় ৪০০ প্রজাতির পাখি দেখা যায়।
১৭। ওমানের চুনাপাথরের পাহাড়ী গুহাগুলিও বিখ্যাত। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গুহা মাজলিস আল জিন এখানে অবস্থিত।
১৮। এই দেশটি একসময় ছিল প্রাচীন সিল্করুটের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর।
১৯। ১৯৭০ সাল থেকে সুলতান কাবুস বিন সৈয়দ দেশটি শাসন করছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ক্ষমতায় আছেন।
২০। দেশটির রাজধানী মাস্কাটের কাসর আল আলম স্ট্রিটে রয়েছে পর্তুগিজদের তৈরি দু’টি দুর্গ-আল জালালি দুর্গ এবং আল মিরানি দুর্গ। এই দুর্গ দু’টির মাঝখানে অবস্থিত “কাসর আল আলম” রাজপ্রাসাদ।
![](https://banglai-bissho.com/wp-content/uploads/2019/08/oman-2606135_1920-1024x765.jpg)
নীল আর সোনালি স্তম্ভের অনিন্দ্যসুন্দর এই প্রাসাদটি ওমান সালাতানাতের বর্তমান সুলতান কাবুসের অফিস।
২১। তবে মাসকাট শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক সম্ভবত সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মসজিদ। মাসকাটের পশ্চিমাংশে অবস্থিত এই মসজিদটি সুলতান কাবুসের শাসনামলের ত্রিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে নির্মিত হয়। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটির সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব এর মেঝেতে বিছানো পার্সিয়ান কার্পেটটি। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্পেট।![](https://banglai-bissho.com/wp-content/uploads/2019/08/oman-3658913_1920-1024x678.jpg)
২২। ওমানে বহু বিদেশীর বাস। এখানকার ৪৫ লক্ষ লোকের মধ্যে প্রায় ১৫ লক্ষ লোক ওমানি নাগরিক নন। এরা মূলত ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইরান থেকে আগত বিদেশী কর্মী।
২২। দেশটির শতকরা ১ ভাগেরও কম জায়গা কৃষিকাজের উপযোগী। এর বেশিরভাগই খেজুরবাগান। খেজুর ছাড়াও টমেটো, তরমুজ এবং কলার চাষ হয় এদেশে। দেশের ভেতরে কোনও নদী বা খাল নেই।
২৩। ওমানের সরকারী মুদ্রা রিয়াল।
২৪। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ২০ হাজার মার্কিন ডলার।
২৫। ওমানের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৯৬৮।