ঐতিহ্য ও আধুনিকতায় সমৃদ্ধ চীন

খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ সালের স্যাং যুগে গঠিত হওয়া চীন এশিয়ার প্রাচীন দেশ গুলোর মধ্যে একটি। পরিবেশগত দিক থেকেও চীনের প্রকৃতি প্রাচীন ধাঁচের। আর বৈচিত্র্যের দিক থেকে এশিয়াতে চীনের অবস্থান হবে প্রথম সারিতে।

ঐতিহাসিক স্থাপত্য থেকে শুরু করে আধুনিক আকাশচুম্বী দালানকোঠা সবই রয়েছে বিশাল আকৃতির এই দেশে। চীনে প্রথমবার ভ্রমণ করলে যেসব স্থানে যাওয়া উচিৎ সেসব শহরের বর্ণনা নিয়ে আজকের পোস্ট।

সাংহাই

Shanghai1
চীনের সবচেয়ে আধুনিক শহর সাংহাই। পৃথিবীর দীর্ঘতম উঁচু আধুনিক স্থাপত্যের কয়েকটির দেখা মিলবে এই শহরে। ওরিয়েন্টাল পার্ল রেডিও এন্ড টেলিভিশন টাওয়ার বিশ্বের ষষ্ঠতম উঁচু টাওয়ার। যেটি হুয়াংপু নদীর তীরে অবস্থিত। ৪৬৮ মিটার উঁচু এই বিশাল টাওয়ার স্থাপিত হয়েছে ১১টি গোলাকার কাঠামোর উপর। এই টাওয়ারে তিনটি ফ্লোর রাখা হয়েছে শহরের প্যানোরামা ভিউ দেখার জন্য। প্রাচীন এই শহরের অমূল্য সব ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষিত আছে সাংহাই মিউনিসিপাল হিস্টোরি জাদুঘরে। অসাধারণ রকমের আধুনিক কায়দায় সাজানো স্পেস ক্যাপসুলে গিয়ে অভিজ্ঞতা নিতে পারেন ছায়াপথের সব রহস্যময় দৃশ্যের।

পুডং এর সাংহাই ডিজনিল্যান্ড পার্ক পৃথিবীর ষষ্ঠ ও সবচেয়ে নতুন ডিসনি পার্ক। এই পার্কের ভেতরে রয়েছে ৬টি থিমে নির্মিত আলাদা আলাদা বিভাগ – মিকি অ্যাভিনিউ, গার্ডেন অফ ইমেজিনেশন, ফ্যান্ট্যাসিল্যান্ড, অ্যাডভেঞ্চার আইল, ট্রেজার কোভ এবং টমোরোল্যান্ড। পৃথিবীর অন্যান্য ডিজনিল্যান্ড থেকে সাংহাই ডিজনিল্যান্ড কিছুটা আলাদা কারণ। এটি তৈরি করা হয়েছে সম্পূর্ণ চীনা সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে। সাংহাই ডিজনিল্যান্ড পার্কে গেলে অবশ্যই ট্রেজার কোভের পাইরেটস অফ দ্যা ক্যারিবিয়ান: ব্যাটেল ফর দ্যা সাঙ্কেন ট্রেজার ঘুরে দেখবেন।

সাংহাই অ্যাক্রোব্যাটিক ট্রুপের অবাক করা সব শারীরিক কসরতের জন্য সাংহাইয়ের বিশেষ সুনাম রয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত এই শো দেখার জন্য আপনি যেতে পারেন ম্যাগনোলিয়া থিয়েটার বা সাংহাই সার্কাস ওয়ার্ল্ড থিয়েটারে।

সাংহাই শহরের মনোরম দৃশ্য উপভোগের সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হল হুয়াংপু নদীতে রিভার ক্রুজ নেয়া। সারি সারি উঁচু দালান, ইয়াংপু সেতু, ন্যানপু সেতু, ওরিয়েন্টাল পার্ল টাওয়ার সব মিলিয়ে যেন এক শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য।

সাংহাই ম্যাগলেভ নামের ট্রেন ঘণ্টায় ৪৩০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। এই ট্রেন পুডং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লংইয়াং রোড মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত যাতায়াত করে। পুডং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লংইয়াং রোড মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত যেতে ট্রেনটির মাত্র আট মিনিট সময় লাগে।

আরও রয়েছে নানজিং রোডের ঐতিহাসিক বিখ্যাত বাজার। নৌকায় ঘুরে দেখতে পারেন ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ বাড়ি সমৃদ্ধ প্রাচীন ঝুইজিয়াজিয়াও ওয়াটার টাউন।

সিয়ান

Xian
চীনের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত শানজি প্রদেশের রাজধানী সিয়ান। এটি চীনের চারটি প্রাচীন রাজধানীর একটি। ঘুরে দেখতে পারেন সিয়ানের উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ল্যান্ডমার্ক টেরাকোটা ওয়ারিয়র্সদের বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। ১৪ হাজার স্কয়ার ফিটের এই জাদুঘরে আপনি দেখতে পাবেন ৮ হাজার যোদ্ধা, ৫০০ ঘোড়াসহ ১৩০টি যুদ্ধের ঘোড়ার গাড়ি। কিন সম্রাজ্যের সম্রাট কিন শি বিশ্বাস করতেন এইসব তাকে পরকালে নিরাপদ রাখবে।

বেইজিং

Beijing
চীনের রাজধানী শহর বেইজিং। এটিও চীনের চারটি প্রাচীন রাজধানীর একটি। এই শহরেও আপনি খুঁজে পাবেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্ক। যা চীনা সংস্কৃতির অতীত এবং বর্তমানকে উপস্থাপন করে।

বেইজিং শহরে রয়েছে মোট সাতটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। যে কারণে সারা পৃথিবীর পর্যটকদের প্রধান আগ্রহ থাকে বেইজিং এর প্রতি। হেরিটেজ সাইট গুলোর মধ্যে গ্রেট ওয়াল অফ চায়না অন্যতম যা খ্রিস্টপূর্ব ২২১ সাল থেকে ১৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পুরো সময় জুড়ে নির্মাণ করা হয়। গ্রেট ওয়াল অফ চায়না নির্মাণ করেন কিন, হান ও মিং সম্রাজ্যের সম্রাটরা। এই সুবিশাল দেয়ালের দৈর্ঘ্য ২১১৯৬ কিলোমিটার।

বেইজিং শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত “নিসিদ্ধ শহর (ফরবিডেন সিটি)” আরেকটি হেরিটেজ সাইট। ১৫ শতকে নির্মিত এই প্রাচীন প্রাসাদে বসবাস করেছেন মিং বংশের ২৪ জন সম্রাট।

প্রাচীন চীনা প্রাসাদ স্থাপত্য শৈলীর শ্রেষ্ঠ প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় এই ফরবিডেন সিটিতে। এই প্রাসাদটি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। প্রাসাদের বাইরে সামনের দিকের কোর্টটি ব্যবহার করা হত রাজ্যাভিষেক, রাজকীয় বিয়ের মত বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। আর প্রাসাদের ভেতরের অংশ ব্যবহার করা হত সম্রাটদের বসবাস ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের জন্য।

এই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটটি এখন জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে যেখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে নানা ধ্বংসাবশেষ, পেইন্টিং এবং ক্যালিগ্রাফি। ফরবিডেন সিটির ঠিক উল্টো দিকেই রয়েছে তিয়ানানমেন স্কয়ার বা গেট অফ হেভেনলি পিস। ১৭ শতকে নির্মিত এই উদ্যান পৃথিবীর বৃহত্তম সর্বজনীন উদ্যান গুলোর মধ্যে একটি।

ঘুরে দেখার মত বেইজিং এর আরও একটি জায়গা হচ্ছে অলিম্পিক পার্ক। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের পরে এই পার্কটি এখন ব্যবহার করা হচ্ছে সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া এবং বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: