বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন

এস আলমের কেলেঙ্কারি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্যাংক লুটের ঘটনা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৪

এস আলম গ্রুপের ব্যাংক কেলেঙ্কারি পদ্ধতিগতভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও আলোচিত ব্যাংক লুটের ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, এস আলম ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি যিনি রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ব্যাংক ডাকাতি করেছেন। বুধবার (২৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন ।

গভর্নর বলেন, এতো সুপরিকল্পিতভাবে ও বিস্তৃত আকারে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে পদ্ধতিগতভাবে (সিস্টেমেটিক ওয়েতে) ব্যাংক লুটের ঘটনা এটাই প্রথম। ব্যাংক ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে জনগণের টাকা বের করে নেওয়ার এমন ঘটনা পৃথিবীর কোথাও নেই। এটাকে শিক্ষণীয় মডেল হিসেবে গ্রহণ করা ঠিক হবে না।

বিগত সরকারের বিশেষ আনুকূল্যে এস আলম গ্রুপের দখলে ছিল ৭টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে–বেনামে অন্তত ২ লাখ কোটি টাকা বের করে তার বেশিরভাগই পাচার করেছে। সরকার বদলের পর ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংকে বন্ধক নেই, অথচ সম্পত্তি বিক্রি করার চেষ্টা করছে এস আলম গ্রুপ—এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ সম্পর্কে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, এটা আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করতে হবে। আমরা সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলব। আর এই গ্রুপের সম্পদ যেন কেউ না কেনে। এ সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।

একবারে সবাই টাকা তুলতে যাবেন না

তিনি আরও বলেন, গ্রাহকদের বলব, ধৈর্য ধরেন। একবারে সবাই টাকা তুলতে যাবেন না। তাহলে ব্যাংক টাকা দিতে পারবে না। অনেকে অতিরিক্ত সুদের লোভে টাকা ব্যাংকে রেখেছেন। এখন অধৈর্য হলে হবে না। আমানতের টাকা লস হবে এটা আমরা চাই না। তবে আমরা ছাপিয়ে আর কোনও টাকা দেবো না, কারণ সেটা জাতির জন্য ভালো হবে না। তখন মূল্যস্ফীতি ১০০ শতাংশ হয়ে যাবে। যেটুকু টাকা না তুললে নয় সেটা তোলেন। আগামী ৫–৬ মাসের মধ্যে অবস্থা পরিবর্তন হবে।

গভর্নর আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনও আমানতকারী টাকা হারায়নি। ব্যাংকে আগে সুশাসন ফেরাতে হবে যাতে আমানতকারীদের আস্থা ফিরে আসে। এ জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক খাত সংস্কার নিয়ে গভর্নর বলেন, ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে সেটা করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেখানে যুক্ত থাকবে। মাস খানেকের মধ্যে এটা করা হবে। বিদেশি বিশেষজ্ঞ নেওয়া হবে। শ্রীলঙ্কা কীভাবে সংস্কার করেছে, সেটাও দেখা হবে।

সহায়ক ভূমিকা না দেখালে বোর্ড আবার পরিবর্তন

ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে গভর্নর বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের নতুন বোর্ডকে কর্মপরিকল্পনা দিতে বলেছি। এখানে কাজ করতে হবে, বসে থাকার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সব ধরনের সহায়তা করবে। তারা সহায়ক ভূমিকা পালন না করলে বোর্ড আবার পরিবর্তন করা হবে। সবাইকে নজরদারি করা হচ্ছে। অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এস আলম ছাড়া ব্যাংক খাতে আরও মাফিয়া রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে– জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, অন্যদের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হবে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

মূল্যস্ফীতি কমে আসবে, রিজার্ভ কমার শঙ্কা নেই

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডলারের দর একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। এমন পর্যায়ে থাকলে আগামী ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে; যদিও বন্যা একটু দুশ্চিন্তা তৈরি করছে। তাও আশাবাদী; দু-এক মাস বেশি লাগতে পারে।

তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ থেকে এখন ডলার বিক্রি করা হচ্ছে না। তাই রিজার্ভ কমার শঙ্কা নেই। ভবিষ্যতে রিজার্ভ আরও বাড়বে। সরকারের চাহিদা (ডলার) আন্তব্যাংক মার্কেট থেকে মেটানো হচ্ছে।

সাবেক দুই গভর্নরের দায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আহসান এইচ মনসুর  বলেন, এখানে (বাংলাদেশ ব্যাংকে) সুশাসনের অভাব ছিল। সামনে যে হবে না তেমন নয়। তবে আমার হাত দিয়ে হবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও সংস্কার করতে হবে। কারণ তারাও দায় এড়াতে পারে না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com