1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
এক দশকে বসবাসের অযোগ্য হবে ঢাকাসহ পাঁচ মহানগরী
রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

এক দশকে বসবাসের অযোগ্য হবে ঢাকাসহ পাঁচ মহানগরী

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১

প্রতি বছর বাংলাদেশের বড় শহরগুলোর তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে আশঙ্কাজনক মাত্রায়। এই ধারা ঠেকানো না গেলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের পাঁচটি প্রধান জনবহুল মহানগরী আগামী এক দশকের মধ্যেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে। শহরগুলো হলো—ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট। তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ অস্বাভাবিক জনঘনত্ব, কংক্রিটের বাড়িঘর, এয়ারকন্ডিশনিং, কলকারখানার আধিক্য, পরিবহন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলাভূমি ভরাট ও গাছপালা কেটে ফেলা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০ বছর পরে বড় বড় শহরের তাপমাত্রা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় পাঁচ থেকে ছয় ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় এই আশঙ্কার চিত্র বেরিয়ে এসেছে। কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের মোট ছয় জন গবেষক এতে যুক্ত ছিলেন। আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘সাসটেইনেবল সিটিজ অ্যান্ড সোসাইটি’তে গবেষণাটি প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়েছে গত মাসে।

 

 

 

এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আশরাফ দেওয়ান ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা গত দেড় বছর ধরে ছয় জন গবেষক স্যাটেলাইট ইমেজসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণে দেখতে পেয়েছি, বাংলাদেশের গ্রামের তুলনায় শহরের তাপমাত্রা অনেকটাই বেশি, যেমন ঢাকায় গড়ে ২ দশমিক ৭৮, চট্টগ্রামে ১ দশমিক ৯২, খুলনায় ১ দশমিক ২৭ , সিলেটে ১ দশমিক ১০ এবং রাজশাহীতে দশমিক ৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটের গত ২০ বছরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে আমলে নিয়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকরা।

প্রায় ৮ হাজার স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করা ঐ গবেষণায় দেখা গেছে, নগরায়ণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বড় শহরগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির এলাকা দ্রুত বাড়ছে। ‘উষ্ণ নগরদ্বীপ’ বা আরবান হিট আইল্যান্ড তৈরি হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ৭০ শতাংশ এলাকায় উষ্ণ দ্বীপ তৈরি হচ্ছে। চট্টগ্রামে তা ৬০ শতাংশ।

এক দশকে বসবাসের অযোগ্য হবে ঢাকাসহ পাঁচ মহানগরী!

গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে চট্টগ্রামের তাপমাত্রা রাজধানী ঢাকার রাতের তাপমাত্রার চেয়েও বেড়েছে। এতদিন মনে করা হতো, শুধু ঢাকার কিছু কংক্রিটময় ও সবুজহীন এলাকায় এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ গবেষণায় দেশের অন্য বড় শহরগুলোতেও এ প্রবণতা দেখা গেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, নগরাঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। কারণ আগামী ৩০ বছর অর্থাত্ ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ নগরে বসবাস করবে। গবেষকরা বলছেন, ততদিনে বাংলাদেশও একটি নগররাষ্ট্রে পরিণত হবে।

প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. আশরাফ দেওয়ান বলেন, একেক শহরে একেক হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে ভিন্ন কারণ রয়েছে। জনসংখ্যা কত, তার ঘনত্ব কেমন, মানুষের কর্মকাণ্ড কী ধরনের—এসবের ওপর নির্ভর করে, কোথায় তাপমাত্রা কেমন হবে। ঢাকার তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি বাড়ার পেছনে এর জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলাভূমি ভরাট ও গাছপালা কেটে ফেলা দায়ী। আর ঢাকাসহ অন্য বড় শহরগুলোতে উষ্ণ নগরদ্বীপ তৈরি হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে আশরাফ দেওয়ান জলাভূমি ভরাট করা এবং গাছপালা কেটে ফেলাকে দায়ী করেন। একই সঙ্গে শহরের ভবন নির্মাণের সামগ্রী হিসেবে পোড়ানো ইট এবং সিমেন্ট-বালির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এসব বস্তুতে তাপমাত্রা দীর্ঘ সময় আটকে থাকছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) হিসাবে, ঢাকা শহরের ৭৫ শতাংশ এলাকা বর্তমানে কংক্রিট দিয়ে ভরাট হয়ে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকার সবচেয়ে উত্তপ্ত এবং দ্রুত তাপমাত্রা বেড়েছে, এমন এলাকাগুলোর মধ্যে শীর্ষে উঠে এসেছে মিরপুর-কাফরুল এলাকা। এরপর তেজগাঁও, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, পুরান ঢাকার বেশির ভাগ এলাকা, উত্তরা ও টঙ্গী। আর ঢাকার আশপাশের এলাকার মধ্যে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সদরে সবচেয়ে উত্তাপ বেড়েছে। এই এলাকাগুলোতে একসময় বনভূমি বেশি ছিল। কিন্তু সেখানে বন কেটে শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। তৈরি হয়েছে পোশাক-কারখানা। তাই একই সঙ্গে শিল্পের তাপ ও জনসংখ্যার চাপ বেড়েছে। তবে রূপগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সোনারগাঁও এবং কালীগঞ্জ এখনো অপেক্ষাকৃত শীতল এলাকা হিসেবে টিকে রয়েছে। গবেষক ড. আশরাফ দেওয়ান বলেন, গত দুই যুগ ধরে শহরগুলোর পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের তাপমাত্রাও বাড়ছে।

 

এক দশকে বসবাসের অযোগ্য হবে ঢাকাসহ পাঁচ মহানগরী!

রাতে বঙ্গোপসাগর থেকে যে শীতল বায়ুর প্রবাহ চট্টগ্রাম শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যেত, সেটি উষ্ণ হয়ে উঠেছে। এর ফলে রাতে শহরটির তাপমাত্রা আগের চেয়ে বাড়ছে। খুলনায় নগরায়ণ অন্য শহরগুলোর তুলনায় কম হওয়ায় এবং নদী-জলাভূমি বেশি থাকায় সেখানে তাপমাত্রা কমেছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com