শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১২ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

উগান্ডা

  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০২১

উগান্ডার সরকারী নাম “রিপাবলিক অফ উগান্ডা”। এটি পূর্বাঞ্চলীয় আফ্রিকায় বিষুবরেখার উপর অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। দেশটির পূর্বে কেনিয়া, উত্তরে সুদান, পশ্চিমে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ-পশ্চিমে রুয়ান্ডা এবং দক্ষিণে তানজানিয়া অবস্থিত। দক্ষিণাঞ্চলের কিছু উল্লেখযোগ্য ভূমি ভিক্টোরিয়া হ্রদের তীর ঘেঁষে অবস্থিত।

উগান্ডা দেশটির ভূপ্রকৃতি অত্যন্ত বিচিত্র। এখানে ঘন অরণ্য, উঁচু পর্বত এবং আফ্রিকার বৃহত্তম হ্রদ ভিক্টোরিয়া হ্রদের অর্ধেকেরও বেশি অবস্থিত। উগান্ডার জনগণ জাতিগতভাবে বিচিত্র। উগাণ্ডার রয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক ও শিল্পকলাসমৃদ্ধ এক সংস্কৃতি। উন্নয়নশীল এই দরিদ্র রাষ্ট্রটি মূলত কৃষিপ্রধান।

তাহলে বন্ধুরা চলুন, উগান্ডা দেশ সম্পর্কে আরো কিছু জানা-অজানা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

১। বর্তমান উগান্ডায় প্রাচীনতম মানব বসতি স্থাপন করেছিল আদিম শিকারি মানুষ। আজ থেকে আনুমানিক ২০০০ বা ১৫০০ বছর আগে বান্টু ভাষাভাষী জনগণ প্রধানত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা থেকে দেশটির দক্ষিণাংশে অভিবাসী হয়ে এসে বসবাস শুরু করে। এই জনগোষ্ঠীর লোকদের লোহার কাজ সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান ছিল। ১৪০০ ও ১৫০০ শতকে রাজত্ব বিস্তারকারী কিতারা সাম্রাজ্য এখানকার প্রাচীনতম রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় সংগঠন। এই সাম্রাজ্যের পর দেশটিতে উত্থান ঘটে বুনিইওরো-কিতারা, বুগান্ডা ও আনকোলে সাম্রাজ্যের। ১৮৯৪ সালে উগান্ডা একটি ব্রিটিশ প্রোটেক্টোরেটে পরিণত হয়। ১৯২৬ সালে এর বর্তমান সীমানা নির্ধারিত হয়। ১৯৬২ সালে এটি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।

২। ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ২৮ লাখ। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ৭৯তম দেশ।

৩। উগান্ডার সরকারী ভাষা দুইটি- ইংরেজি এবং সোয়াহিলি ভাষা। এর মধ্যে সোয়াহিলি ভাষা চারটি দেশের জাতীয় বা সরকারী ভাষা এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের দাপ্তরিক ভাষাগুলির মধ্যে একমাত্র আফ্রিকান ভাষা।

৪। উগান্ডা একটি ধর্মীয়ভাবে বৈচিত্রময় জাতি। যেখানে খ্রিস্টধর্ম সর্বাধিক প্রচলিত ধর্ম। দেশটির প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী। বাকিদের মধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী।

৫। কাম্পালা উগান্ডার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। মার্ছার কর্তৃক কাম্পালাকে পূর্ব আফ্রিকায় বসবাসের জন্য সেরা শহর হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে, যেটি নাইরোবি ও কিগালি থেকে এগিয়ে, মার্ছার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে অবস্থিত একটি বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন পরামর্শক সংস্থা।

দেশটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক ভবন এই শহরটিতেই অবস্থিত। এর মধ্যে কাম্পালা হিলে অবস্থিত উগাণ্ডার গাদ্দাফি জাতীয় মসজিদ। এ মসজিদ উগাণ্ডা তথা পূর্ব আফ্রিকার সর্ববৃহৎ মসজিদ। ২০০৬ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ২০০৭ সালে চালু করা হয়। গাদ্দাফি মসজিদে একসাথে ১৫০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। শহরের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল উগান্ডা মিউজিয়াম, উগান্ডান ন্যাশনাল থিয়েটার, নাকাসোরো মার্কেট এবং সেন্ট বালিকুডেমে মার্কেট।

৬। উগান্ডা বিষুবরেখার উপর অবস্থিত হলেও উচ্চতার কারণে এখানকার জলবায়ু তুলনামূলকভাবে মৃদু। ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি এবং জুন-জুলাই মাসে দুইটি শুষ্ক মৌসুম পরিলক্ষিত হয়।

৭। দেশটিতে একটি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। রাষ্ট্রপতি একইসাথে রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধান। রাষ্ট্রপতি তাকে শাসনকালে সহায়তা করার জন্য একজন সহ-রাষ্ট্রপতি এবং একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন।

৮। আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে উগান্ডায় আইন শৃঙ্খলা খুব কড়া বললেই চলে। তাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা সবসময় ভারী অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করে এবং দেশটিতে সবসময়ই তাদের হাতে ক্রিমিনালদের উপর ক্রাসফায়ারের অনুমতি থাকে।

৯। উগান্ডার মানুষরা জন্মগতভাবে কালো জাতের। তাদের বডি লেঙ্গুয়েজ দেখে কিছুটা ভয়ও লাগে। তবে তারা খুব নরম মনের মানুষ হয়। তারা যেকোনো মানুষকে সহজেই বিশ্বাস করে এবং সহজেই যে কারো সাথে মিশে যেতে পারে। অনেক হাসিখুশি ও রসিক মনের মানুষ হয় এরা।

১০। উগান্ডার মানুষদের জাতীয় খাবার কলা আর ভূট্টা। তারা সাধারণত দিনে তিন বেলা কলা আর ভূট্টা খায়। তবে এর পাশাপাশি অন্যান্য নাস্তাও থাকে।

১১। উগান্ডা এমন একটা দেশ, যেখানে ফ্রি মাইন্ডে চলে সবাই। দেশটিতে অসংখ্য যৌনকর্মী পাওয়া যায়। জোর করে ধর্ষণ ছাড়া বাকি সব সম্পর্ক বৈধ বলে বিবেচনা করে সেই দেশের আইন। তবে এদেশে ধর্ষণের সংখ্যাও একেবারেই কম।

১২। দেশটির মানুষরা অতিথি পরায়ণ। আপনি একবার কোনো অপরিচিত এলাকায় ঘুরতে গেলে তারা নিজদায়িত্বে আপনার সেবা করতে এগিয়ে আসবে। যেনো আপনি তাদের বহুদিনের পরিচিত আত্মীয় ‍বা ঘরের অতিথি।

১৩। গাছ কাটা নিয়ে দেশটিতে একটি নিয়ম আছে। এখানে একটি গাছ কাটলে একই সময়ে আরো তিনটি গাছ লাগাতে হয়।

১৪। কলা, আনারস ও আভোকাডো ফলনে উগান্ডা বিশ্বের প্রথমসারির দেশ।

১৫। উগান্ডায় প্রায় ৭৫০টি পাহাড়ি গরিলা রয়েছে। যেখানে অন্য কোনো দেশেই হাতেগোণ‍া কয়েকটার বেশি গরিলা নেই।

১৬। উগান্ডা আসলেই অত্যন্ত সুন্দর একটি দেশ। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে নিজের চোখেই দেখতে হবে। উগান্ডায় যেতে চাইলে উগান্ডা বিমানবন্দরে পৌঁছে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে, আর ভিসা ফি মাত্র পঞ্চাশ মার্কিন ডলার। আপনি উগান্ডা দেখে যতটা না মুগ্ধ হবেন, ঠিক তার থেকে অনেক বেশি মুগ্ধ হবেন মানুষের ব্যবহারে। সদা হাস্যময় মুখ আর পরোপকারী মনোভাব আসলেই প্রশংসনীয়।

১৭। যেমনটি আগেই বলেছি, এটি আমাদের দেশের মতোই কৃষি প্রধান এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। উগান্ডার সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন বাংলাদেশি কোম্পানি বাণিজ্যিক কৃষিকাজের উদ্দেশ্যে উগান্ডায় জমি ইজারা নিয়েছে।

১৮। উগান্ডার সরকারী মুদ্রা উগান্ডান শিলিং। বাংলাদেশের সাথে তাদের মুদ্রার তফাৎ হচ্ছে, বাংলাদেশে ১ টাকা মানে উগান্ডার প্রায় ৩৩ টাকা।

১৯। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় $৩০.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় প্রায় $৭৬৯ মার্কিন ডলার।

২০। উগান্ডার ডায়ালিং কোড হচ্ছে +২৫৬।

খালিদ হাসান

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com