ঈদের ছুটিতে চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা। ঈদের দ্বিতীয় দিনে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখ ছিল এই সমুদ্রসৈকত। সবাই আনন্দ-উল্লাসে মেতেছেন।
রবিবার (২৩ এপ্রিল) কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতের সব স্থানে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভিড়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিন অন্তত অর্ধলক্ষাধিক পর্যটক সৈকতে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালে পর্যটকরা সমুদ্রে নেমে বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতেছেন। কেউ কেউ ওয়াটার বাইকে গভীর সমুদ্রে ঘুরেছেন। আবার কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে এবং প্রিয়জনের সঙ্গে ছবি তুলে আনন্দ করেছেন। দুপুর এবং বিকালেও সমুদ্রে নেমেছেন কেউ কেউ। অনেকে সৈকতের বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করেছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রমজান মাসজুড়ে কুয়াকাটার আসেননি পর্যটকরা। আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলো ফাঁকা ছিল। রেস্তোরাঁগুলোতে বেচাকেনা তেমন হয়নি। এখন ঈদের ছুটিতে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। পর্যটকদের আগমনে ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা বেড়েছে। বেশিরভাগ হোটেলের কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
মাদারীপুরের শিবচর থেকে বন্ধুদের নিয়ে কুয়াকাটায় ঘুরতে এসেছেন নাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ‘ঈদের দ্বিতীয় দিনে প্রচুর পর্যটক সৈকতে নেমেছেন। সবার সঙ্গে মিলেমিশে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছি আমরা।’
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমতলী থেকে ঘুরতে এসেছেন আফিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, ‘কুয়াকাটায় এ পর্যন্ত ২০ বারের বেশি এসেছি। এখানে বার বার আসতে ইচ্ছে হয়। যতবার আসি ততবারই ভালো লাগে।’
সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রিপন হাওলাদার বলেন, ‘ঈদের দ্বিতীয় দিনে কুয়াকাটায় অর্ধলক্ষাধিক পর্যটক এসেছেন। আমাদের বেচাকেনা খুব ভালো হয়েছে। এভাবে বেচাকেনা চললে রমজান মাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
আবাসিক হোটেল সি-ভিউয়ের ম্যানেজার সোলায়মান ফরাজী বলেন, ‘ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে আমাদের হোটেলের সবগুলো কক্ষ বুকিং আছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম ঈদের ছুটিতে এবার রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক এসেছেন। এখনও অনেকে আসছেন। আশা করছি, আমাদের ব্যবসা ভালো হবে।’
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (কুটুম) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, ‘রমজানের একমাস পর্যটকশূন্য ছিল কুয়াকাটা। তবে ঈদের দিন থেকে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। ঈদের দ্বিতীয় কানায় কানায় পূর্ণ ছিল কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। এতে ব্যবসায়ীদের মনে স্বস্তি ফিরেছে।’
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘কুয়াকাটায় অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত হোটেল-মোটেল আছে ৭৪টি। এর বাইরে আছে ৫৬টি হোটেল-মোটেল। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির হোটেল রয়েছে ১০-১৫টির মতো। প্রথম শ্রেণির এসব হোটেল-মোটেলের প্রায় শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে। এর বাইরের হোটেল-মোটেলেরও ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। সামনে ছুটি থাকায় এসব হোটেলের কক্ষের বুকিংও পূর্ণ হয়ে যাবে। বুকিং দেখে বোঝা যাচ্ছে, এবার প্রচুর পর্যটক আসবেন। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।’
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কে এম বাচ্চু বলেন, ‘ঈদের দ্বিতীয় দিন সকালে অর্ধলক্ষাধিক পর্যটক সমুদ্রসৈকতে নেমেছেন। কেউ কেউ ট্রলার ও বোটে সমুদ্রে ঘুরে বেরিয়েছেন। বিকালে অনেকে সমুদ্রের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরেছেন, আবার দূরে ঘুরতে গেছেন।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের ইনচার্জ হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘আজ কুয়াকাটা সৈকতে প্রচুর পর্যটক এসেছেন। আগামীকাল পর্যটক আরও বাড়তে পারে। তাদের নিরাপত্তা দিতে আমাদের টহল জোরদার করেছি। এখানকার প্রত্যেকটি দর্শনীয় স্থানে পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। আশা করছি, নিশ্চিতে সৈকতে ঘুরতে পারবেন পর্যটকরা।’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আজ কুয়াকাটায় হাজার হাজার পর্যটক এসেছেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং থানা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। হোটেল-মোটেলে ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। খাবার রেস্টুরেন্টে মূল্য তালিকা টানিয়ে দিয়েছি আমরা। পর্যটকদের যাতে কেউ বিরক্ত করতে না পারে, সে জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হয়েছে। যানজটমুক্ত রাখার জন্য কুয়াকাটা পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড উদ্বোধনের আগেই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।’