পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক, পর্নগ্রাফিক, সাংস্কৃতিক কিংবা ধর্মীয় বিষয়ে উসকানিমূলক ও উগ্রবাদী কন্টেন্টও সার্বক্ষণিক নজর রাখতে কাজ করবে এ সেল।
এর আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা নিয়মিতভাবে ‘আপত্তিকর’ কন্টেন্ট অপসারণে অনুরোধ জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিত বিটিআরসি।
এখন থেকে এ সেলের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিটিআরসিও স্বউদ্যোগে পদক্ষেপ নেবে। প্রাথমিকভাবে কাজ শুরুও হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।
তিনি বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রাহকের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সাইবার কনটেন্ট মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনায় ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল’ গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা কাজ শুরু করেছি। আরো কিছু কাজ বাকি আছে। আশা করছি শীঘ্রই সম্পূর্ণরূপে এ সেলের মাধ্যমে সেবা প্রদান সম্ভব হবে। খুব শিগগির ২৪ ঘণ্টা এ সেল কাজ শুরু করবে।”
এ সেলের কাজ পরিচালনায় নতুন কোনো প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে কি না বা কেনা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আগামীতে আমরা এ উদ্যোগ নেব, তবে এসব প্রযুক্তি বেশি দামের হবে না। খুব সহজেই পুরো কাজ আমরা শুরু করতে পারব।”
নজরদারি করা গেলেও বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়াসহ অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে কন্টেন্ট অপসারণ নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। কেননা কমিশন বা সরকার চাইলেও সেসব প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়ম-নীতির বাইরে কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় না।
সোমবার এ নিয়ে নিজেদের ‘অসহায়ত্বের’ কথাও বলেছেন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
নতুন সাইবার সিকিউরিটি সেল এর দায়িত্বপ্রাপ্ত বিটিআরসির ঊধর্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে কমিশনের ১০ জন কর্মকর্তা এ সেলের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। আগামীতে আরও বড় পরিসরে কাজ শুরু হবে। বিটিআরসি কোনো আপত্তিকর কন্টেন্ট পাওয়া মাত্র স্বউদ্যোগে ব্যবস্থা নেবে।”
এর আগে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে ২০১২ সালে একটি বিশেষ দল গঠন করেছিল বিটিআরসি। বাংলাদেশ কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিডি-সিএসআইআরটি) নামে এই সেল ওই সময় থেকে কাজ শুরু করলেও তা কয়েক বছর পর আর তেমন কার্যকর ছিল না।
রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায়- এমন ওয়েবসাইটে এসব বিষয় শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়াই ছিল ওই দলের মূল কাজ।
বিডি-সিএসআইআরটি এর বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, “লোকবল বিশেষ করে সাইবার বিশেষজ্ঞ না থাকায় কয়েক বছর পর সেই টিমটি আর এগিয়ে যেতে পারেনি।”
তুন এই সেলের কার্যক্রম সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, “বিটিআরসি থেকে ১০ জন কর্মকর্তা থাকলেও এই সেলে মোবাইল ফোন অপারেটরসহ অন্যান্য অপারেটর থেকে সদস্য নেওয়া হবে, যারা সাইবার অপরাধ বা এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ।
“সবার মতামত নিয়েই এ সেল কাজ করবে। কোনো বড় ঘটনা সামনে এলে সে সময় যাতে সবাই একযোগে কাজ করা যায় তাই এই উদ্যোগ।”
সোশাল মিডিয়ায় ‘আপত্তিকর’ কন্টেন্ট অপসারণের বিষয়টি সম্প্রতি আবার সামনে আসে হাই কোর্টের এক পর্যবেক্ষণে।
রোববার হাই কোর্ট সোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তিগত ভিডিও, ছবি অপসারণে বিটিআরসির ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে।
এর একদিন পর সোমবার সংবাদ সম্মেলনে সোশাল মিডিয়ার কনটেন্ট অপসারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির ‘অসহায়ত্বের’ কথা স্বীকার করে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছিলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইচ্ছা করলেই কানো কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে পারে না। বড় জোর অনুরোধ করতে পারে। সিদ্ধান্ত নেয় সোশাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষগুলো।
বিটিআরসির তথ্য অনুয়ায়ী, গত এক বছরে ১৮ হাজার ৮৩৬টি ‘আপত্তিকর’ ফেইসবুক লিংক বন্ধ করার অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে চার হাজার ৮৮৮টি লিংক বন্ধ করা হয়েছে।
৪৩১টি ইউটিউব লিংক বন্ধ করার অনুরোধে ৬২টি ক্ষেত্রে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ সাড়া দিয়েছে।
তবে চাইলে যে কোনো ওয়েবসাইট বাংলাদেশ থেকে দেখার সুযোগ বন্ধ করে দিতে পারে বিটিআরসি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম