বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

ইতিহাস ছুঁয়ে ছুঁয়ে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

ওয়েলকাম টু কালাপাথর। দুটো রঙ করা বেশ শক্তপোক্ত, মোটাসোটা গাছের ডাল পুঁতে, তার মাথায় সরু একটা বোর্ড লাগিয়ে আর্চের মতো করা হয়েছে। তার ওপাশে গাছগাছালির ছায়া ঘেরা সরু রাস্তাটা চলে গেছে সেই কালাপাথরের দিকে। হাঁটতে হবে আড়াই কিলোমিটার। দূরত্বটাও লেখা আছে বোর্ডেই। উঁচু নীচু পাহাড়ি রাস্তায় আড়াই কিলোমিটার হাঁটার উৎসাহ সবার থাকে না, তাও কালাপাথর দেখার জন্যে, তাছাড়া মাউন্ট হ্যারিয়েটে পর্যটকের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কমই। দুজন দেখলাম বোর্ডটার তলায় হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে চলে গেলেন। আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল কালাপাথরই, এই ক’দিন আগেই শুনলাম না এর কথা সেলুলার জেলে?

“ব্রিটিশরা সেলুলারে যাদের ফাঁসিতে ঝোলাত তার একটা রেকর্ড থাকত, কিন্তু তাছাড়া আরও কতজনকে মেরেছে তার ঠিক আছে? নিয়ে আসত এই কালাপাথরে, খাদের ধারে দাঁড় করিয়ে একটা ঠেলা, ব্যাস সব শেষ।”

পাশে এসে এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়েছেন, কথাটা তিনিই বললেন। ঠিক, কালাপাথরের এই ইতিহাসই শুনেছিলাম সেলুলার জেলে। আলাপ হল, এখানকার এক কর্মী, মাউন্ট হ্যারিয়েট ন্যাশানাল পার্কের। নিজে থেকেই ঘুরিয়ে দেখালেন অনেক কিছু, জানালেন বামবু ফ্ল্যাট আইল্যাণ্ডের এই ন্যাশানাল পার্কের নাম হয়েছে পোর্ট ব্লেয়ারের কনভিক্ট সেটলমেন্টের সুপারিন্টেন্ডেন্ট রবার্ট ক্রিস্টোফার টাইটলারের দ্বিতীয় পত্নী হ্যারিয়েটের নামে। নামেই বোঝা যায় আন্দামানের এই ন্যাশানাল পার্কটি পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট হ্যারিয়ট ছাড়াও আরো বেশ কিছু শৃঙ্গ রয়েছে এখানে। ৪৬.৬২ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়ানো, ঘন সবুজে মোড়া এই ন্যাশানাল পার্কটি নানান প্রজাতির পাখি এবং প্রজাপতির স্বর্গরাজ্য।

চড়লাম ব্রিটিশদের তৈরি ওয়াচ টাওয়ারে। নীল সমুদ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সবুজ সবুজ দ্বীপগুলো। সবচেয়ে ভালো দেখা যায় নর্থ বে আইল্যাণ্ড আর তার লাইটহাউসকে। ঘন সবুজের মাঝখান দিয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে লাল সাদা ডোরাকাটা লাইটহাউস। চেনা চেনা লাগল বেশ। স্বাভাবিক, কুড়ি টাকার নোটের পেছনে এরই ছবি আছে যে! অ্যান্টি এয়ার ক্রাফট গানও এখানে বসানো হয়েছিল সেই ব্রিটিশ আমলেই, তবে সে আর সেখানে নেই, শুধু যেখানে ছিল সেই বেসটা এখনও রয়ে গেছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকেই দেখা যাচ্ছে ধানের খেত, তবে তার অনেকই বর্তমানে পরিত্যক্ত, সুনামির সময় সেই যে জল ঢুকে আটকে গেছে, তা আর বেরোয়নি।

“এখানে কম টুরিস্টই আসে, আর এলেও কেউ কিছু জানতে চায় না, ফটো টটো তুলে চলে যায়,” ভদ্রলোকের আক্ষেপ।

অবশ্য ছবি তোলার হিড়িক নেই কোথায়? সেলুলার জেলেও তো তাইই দেখলাম। ফাঁসি ঘরের সামনে, সাভারকরের ছোট্ট কুঠুরিতে, বন্দীদের যেখানে চাবুক মারা হত সেখানে, সর্বত্রই। বুড়ো অশ্বত্থ গাছটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে সব। সেলুলার জেল তৈরির সময় কত গাছ কাটা হয়েছিল, কিন্তু আশ্চর্য এই গাছটা বেঁচে গেছিল, আজও ডালপালা ছড়িয়ে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে সে। কত অত্যাচার, কত ফাঁসির নীরব সাক্ষী, কত সেলফিরও!
আন্দামানের আনাচে কানাচে ইতিহাসের ছোঁয়া। তাই সেলুলার জেলের কথার আগে বরং একবার চোখ বোলানো যাক সেদিকে। আন্দামানের নানান দ্বীপে মানুষের বসতি শুরু হয়েছিল আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে। চোল বংশের রাজা প্রথম রাজেন্দ্র চোল আন্দামান নিকোবরকে ব্যবহার করেছিলেন নিজের নৌ ঘাঁটি হিসেবে। চোলদের কাছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পরিচিত ছিল মা-নাক্কাভারাম নামে, যার অর্থ বড়ো, ফাঁকা জায়গা। মার্কো পোলোর ভ্রমণ বৃত্তান্তেও উল্লেখ আছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের। ১৭৮৯ সালের মার্চ মাসে বিখ্যাত মেরিন সারভেয়র, লেফটেন্যান্ট আর্চিবল্ড ব্লেয়ার এখানে আসেন সেটলমেন্ট স্থাপনের উদ্দেশ্যে। তখন আর কে বুঝেছিল যে ব্লেয়ারের এই সমুদ্রযাত্রা পরাধীন ভারতবর্ষের এক ভয়াবহ অধ্যায় ‘কালাপানি’র ইঙ্গিত বহন করছে! ভৌগোলিক সুযোগ সুবিধের জন্যে চং-একি-বুদ নামের এক দ্বীপ হয়ে ওঠে ব্রিটিশ সেটলমেন্টের প্রধাণ কেন্দ্র। পরে মেরিন সারভেয়র স্যর ডানিয়েল রসের নামে এর নাম হয় রস আইল্যাণ্ড। দ্রুত গড়ে উঠতে লাগল ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, প্রশাসনিক কাজকর্মের দপ্তর, চার্চ, ছাপাখানা, সুইমিং পুল, টেনিস কোর্ট, দোকান বাজার, এমন কী বিনোদনের জন্যে তিনটে ক্লাবও। দেখতে দেখতে দ্বীপের জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল পাঁচশোতে। বন্দীদের দিয়ে বন জঙ্গল কেটে তৈরি করানো হত বাড়িঘর, তারপর তাদের পাঠানো হত ভাইপার দ্বীপের জেলখানায়, এটিই আন্দামানের প্রথম নির্মিত জেলখানা। ক্রমশ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করতে লাগল, প্রয়োজন হয়ে পড়ল বড়ো একটি জেলখানার। আর্চিবল্ড ব্লেয়ারের নামাঙ্কিত পোর্ট ব্লেয়ারে শুরু হল সেলুলার জেলের নির্মাণ।

সেলুলার জেলের সামনে দাঁড়ালেই যেন গায়ে কাঁটা দেয়। ১৮৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বর্তমানে এটি ন্যাশানাল মেমোরিয়াল। জেলের মিউজিয়াম, সন্ধ্যেয় হওয়া লাইট অ্যাণ্ড সাউন্ড শো আমাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় পরাধীনতার সেই রক্ত ঝরা দিনগুলোয়। সেলুলার জেলের গঠনটাই বেশ অদ্ভুত। মাঝখানে সুউচ্চ একটি ওয়াচ টাওয়ার, সেই টাওয়ার থেকে বেরিয়েছে সাতটি সরু, লম্বা উইং, বর্তমানে যদিও তার মাত্র তিনটিই অক্ষত আছে। প্রতিটা উইং তিনতলা এবং প্রতিটা তলায় রয়েছে এক সারি ছোটো ছোটো ঘুপচি ঘুপচি কুঠুরি। সাড়ে তেরো ফিট বাই সাড়ে সাত ফিটের এই কুঠুরিগুলোতে মেঝে থেকে অনেকটা উঁচুতে একটা মাত্র ছোট্ট জানলা। ১৯০৫-০৬ সালের মধ্যে মোট ছশো তেষট্টিটা কুঠুরি তৈরি করা হয়, পরে আরও ত্রিশটি কুঠুরি নির্মিত হয়। কোনও ডরমেটরি ছাড়া শুধু মাত্র এরকম একাধিক ছোটো ছোটো সেল বা কুঠুরির সমন্বয়ে তৈরি বলেই এর নাম সেলুলার। কোনও দুটো উইংএর কুঠুরি মুখোমুখি নয়, ইচ্ছে করেই এভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে কুঠুরিতে থাকাকালীন বন্দীরা কেউ কাউকে দেখতে না পায়। এরকমই কুঠুরিতে অবর্ণনীয় অত্যাচার সহ্য করে দিন কাটিয়েছেন বিনায়ক দামোদর সাভারকর, বটুকেশ্বর দত্ত, ননীগোপাল মুখোপাধ্যায়, উপেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, উল্লাসকর দত্ত, বারীন্দ্র কুমার ঘোষ এবং আরও অনেকে।

জেল চত্বরেই রয়েছে ফাঁসি ঘর, ফাঁসির আগে বন্দীদের স্নান করানোর জায়গা, চাবুক মারার জায়গা, ঘানি ইত্যাদি। ফাঁসি ঘরে একসঙ্গে তিনজনের অবধি ফাঁসি হত। ফাঁসির পর ওয়াচ টাওয়ারের মাথার ঘন্টা বাজানো হত। এই ঘন্টাধ্বনি শুনে দ্বীপের মানুষ বুঝত যে সেদিন কোনও বন্দীর জীবন শেষ হল। মিউজিয়ামে রাখা রয়েছে জেলের একটি মডেল, জেলের কর্মচারীদের পোশাক, বন্দীদের ব্যবহৃত বাসন, হাত পায়ের বেড়ি, তালা, চাবি – আরও কত কিছু।

পোর্ট ব্লেয়ার থেকে একদিনেই ঘুরে আসা যায় রস আর নর্থ বে আইল্যাণ্ড। রসে আজও দেখা যায় ছাপাখানা, সুইমিং পুল, জল পরিশোধন কেন্দ্র, সমাধিক্ষেত্র, চার্চ ইত্যাদির ধ্বংসাবশেষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে রস চলে যায় জাপানের অধিকারে, নেতাজী সুভাষচন্দ্র এসেছিলেন এখানে, উত্তোলন করেছিলেন ভারতের পতাকা। জাপানি বাঙ্কার এখনও রয়ে গেছে এই দ্বীপে। পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখার জন্যে রয়েছে গাড়ির ব্যবস্থা। ঘুরতে ঘুরতেই দেখা হয়ে যাবে হরিণ, ময়ূরের সঙ্গে। এ দ্বীপে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায় তারাও। ঘন নীল জলের মাঝে মাঝে নারকোল গাছে ঘেরা সুন্দর দ্বীপগুলোর সৌন্দর্য মনের মণিকোঠায় চিরদিনের মতো স্থান লাভ করে।

মধ্য আর দক্ষিণ আন্দামানের মাঝে অবস্থিত একটি দ্বীপ বারাটাং। আন্দামান ট্রাঙ্ক রোড গেছে এই দ্বীপের ওপর দিয়েই। চুনা পাথরের গুহা বারাটাং-এর মতো ভারতের আরও অনেক জায়গাতেই আছে, তবে বারাটাং-এ আছে মাড ভলক্যানো। এবড়ো খেবড়ো পাথুরে সিঁড়ি দিয়ে ভলক্যানোর মাথায় চড়লে দেখা যায় বুড়বুড় করে বেরিয়ে আসছে কাদা। এ হেন আগ্নেয়গিরিতে  চড়াও এক অভিজ্ঞতা বটে! ভলক্যানোর আশেপাশে সিলাই পাতার গাছ, এ পাতা শুকিয়ে ঘর ছাওয়া হয়। বারাটাং যেতে গিয়েই দেখা হয়ে যায় এ অঞ্চলের আদিম অধিবাসী জারোয়াদের সঙ্গে। দক্ষিণ আন্দামান থেকে যতই উত্তরের দিকে এগোনো যায়, সমুদ্রের জলের রঙও যেন পালটায়। নীল থেকে সবুজ হয়, মাঝে মাঝেই চোখে পড়ে ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছ।

বারাটাং দিয়েই যেতে হয় মায়া বন্দর, ডিগলিপুর। পথে গাড়ি সুদ্ধ দুবার চাপতে হয় বার্জে, এভাবেই এখানে এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে যাতায়াত। সেই কবে কোন কালে মায়া বন্দরে এসেছিলেন বর্মা মুলুকের বাসিন্দারা, হাতির প্রশিক্ষণ দিতে তাঁদের নিয়ে আসা হয়েছিল। ফিরে যাননি তাঁরা, রয়ে গেছিলেন এখানেই, আস্তে আস্তে মিশে গেছেন ভারতীয় জনস্রোতে। মায়া বন্দরের কারমাটাং বিচের কাছে এখনও তাঁদের বসতি রয়েছে। মায়া বন্দরেই আলাপ হয়েছিল এলিজাবেথ মার্টিনের সঙ্গে। এলিজাবেথের দাদু, দিদিমা এসেছিলেন এ দেশে। এখন এলিজাবেথ একটি হোটেলের মালকিন, হোটেলটির কর্মচারীরা সবাই মহিলা। এক সন্ধ্যেয় ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এলিজাবেথ ফিরে গেছিলেন সেই সব দিনে যখন একটা ছোট্ট চায়ের দোকানকে একটু একটু করে বড়ো করে হোটেলে পরিণত করার স্বপ্ন দেখছিলেন। মায়াবন্দরে যাওয়ার পথে পড়ে মরিস ডেরা আর আমকুঞ্জ সৈকত। শুধু সুন্দর নয়, এদের প্রতিটিরই কিছু না কিছু বিশেষত্ব আছে। ডিগলিপুরে আছে যমজ দ্বীপ – রস আর স্মিথ, দুই দ্বীপ জোড়া বালির একটি লম্বা চড়া দিয়ে। স্বচ্ছ, নীল জলের ধারে সাদা বালির এই সৈকত সৌন্দর্যে অতুলনীয়। ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে কারমাটাং, কালীপুর সৈকতে দেখা মেলে নানান প্রজাতির কচ্ছপদের। ডিম পাড়তে আসে তারা। সারা সৈকত জুড়ে তখন তাদেরই ছোটো, বড়ো – নানান আকৃতির বাসা। শুধুই কি সমুদ্র? না, নদীও আছে আন্দামানে, একটি মাত্র, নাম তার কলপং, ডিগলিপুর দিয়েই তার বয়ে চলা। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ স্যাডেল পিকও এখানেই।

স্বাধীনতা সংগ্রামের মন ভারী করা ইতিহাস যেমন জড়িয়ে আছে আন্দামানের সঙ্গে, তেমন জলের ভেতর রঙবেরঙের-এর মাছ আর প্রবাল দেখার মজাও কম নেই এখানে। নর্থ বে, নীল, জলি বয়, হ্যাভলক – কোথায় নেই গ্লাস বটম বোটে ঘোরার, স্কুবা ডাইভিং, স্নরকেলিং-র ব্যবস্থা? দু একটি জায়গায় আছে সি ওয়াকিং-র সুবন্দোবস্তও। স্কুবা ডাইভিং, স্নরকেলিং ইত্যাদি যাঁরা করতে চান না, তাঁদের জন্যে গ্লাস বটম বোট আদর্শ। ছোটো বড়ো ঢেউয়ের মাথায় চড়ে নৌকোগুলো দুলতে দুলতে চলে, তলার কাঁচ দিয়ে দেখা যায় রঙবাহারি প্রবালের মেলা, পাশ দিয়ে চলে যায় মাছের ঝাঁক। নৌচালক কাম গাইড সেসবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। আর এসব কিছু না করলেও সাদা বালির ঝকঝকে তটের ওপাশে নীল জলে রঙের খেলা দেখেও দিব্যি সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। হাতে সময় থাকলে নীল আর হ্যাভলক আইল্যাণ্ডে দু একদিন থাকা ভালো। হ্যাভলকের প্রধাণ বিচগুলো হল রাধানগর বিচ, বিজয়নগর বিচ, এলিফ্যান্ট বিচ আর কালাপাত্থর বিচ। এর মধ্যে রাধানগর বিচ এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিচের মর্যাদা পেয়েছে। ধবধবে সাদা বালি, অদ্ভুত নীল জল আর ঘন সবুজ গাছপালা মিলেমিশে এই সমুদ্র সৈকত সত্যিই অনন্য।

নীল আইল্যাণ্ডের জেটির কাছেই ভরতপুর বিচ, সৌন্দর্যে আন্দামানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিচ। সত্যি কথা বলতে গেলে সে সৌন্দর্যের আঁচ পাওয়া যায় নীলের জেটিতে এলেই। নীল রঙের যে এত বাহার, হালকা, গাঢ় এত রকম শেড হতে পারে তা এই ভরতপুর বিচে না এলে বোধহয় জানাই হত না। জল একেবারে স্বচ্ছ, তাই দেখা যায় অনেক নীচ অবধি, সেখানে প্রবাল আর মাছের রাজত্ব। এখানকার আরও দুটো বিখ্যাত বিচ হল সীতাপুর আর লক্ষ্মণপুর বিচ। নীলের আরেক আকর্ষণ হল লক্ষ্মণপুর বিচের ন্যাচারাল ব্রিজ। প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালে গড়ে উঠেছে সেতুর আকৃতির এই পাথুরে গঠন। তবে সব সময় নয়, একমাত্র ভাঁটার সময়েই বেশ অনেকটা পথ পেরিয়ে তবে যাওয়া যায় এই প্রাকৃতিক সেতুর কাছে। নীল আর হ্যাভলক দ্বীপে যাওয়ার জন্যে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে নানান ধরণের জলযানের সুবন্দোবস্ত আছে। সাধ আর সাধ্যের মেলবন্ধন ঘটিয়ে যে কোনও একটিকে বেছে নেওয়া কষ্টকর নয়। তবে যাতেই যান, এই এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কিন্তু ভোলার নয়।


জলি বয় দ্বীপে না গেলে আন্দামান ভ্রমণ সম্পূর্ণ হয় না। এটি সম্পূর্ণ জনবসতিহীন একটি দ্বীপ যার একটি মাত্র অংশই পর্যটকদের জন্যে উন্মুক্ত। প্রবালের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে জলি বয়ের কাছে কোনও পাকাপোক্ত জেটি নির্মিত হয়নি। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে আসা মোটর ভেসেলগুলো দাঁড়ায় অনেকটা দূরে, নীল সমুদ্রের মাঝে ভাসমান জেটিতে। সেখান থেকে ছোটো নৌকো করে আসতে হয় তটের কাছে। জোয়ার ভাঁটার ওপর নির্ভর করে কখনও কখনও হাঁটু জল অবধি ভেঙে দ্বীপে পৌঁছতে হয়। এই দ্বীপও পোর্ট ব্লেয়ার থেকে একদিনেই ঘুরে নেওয়া যায়। এখানকার আকর্ষণও সুন্দর সৈকত, নীল জলের নীচে প্রবাল আর মাছের ঝাঁক দেখা।

পোর্ট ব্লেয়ারের অন্যান্য দ্রষ্টব্যর মধ্যে আছে এশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো এবং বড়ো কাঠের কারখানা চ্যাথাম স মিল, মুণ্ডা পাহাড় বিচ, চিড়িয়া টাপু বিচ, কর্বিন কোভ বিচ, সমুদ্রিকা মেরিন মিউজিয়াম, অ্যানথ্রোপলিজিকাল মিউজিয়াম ইত্যাদি। হ্যাভলক দ্বীপের রাধানগর বিচে, নীলের লক্ষ্মণপুর বিচে সূর্যাস্ত দেখতে ভিড় করেন অনেকেই তবে সূর্যাস্ত দেখতে সবচেয়ে ভালো লাগে বোধহয় পোর্ট ব্লেয়ারের চিড়িয়া টাপু সৈকতে। আকাশের বিরাট ক্যানভাসে ইচ্ছে মতো লাল, হলুদ, কমলা রঙ মাখিয়ে সুয্যিমামা পাটে যান, জলেও কিছু কম রঙ ছড়ান না, সেই রঙ গায়ে মেখে মাঝে মাঝেই ভেসে যায় দু একটি নৌকো, জাহাজ।

কীভাবে যাবেন:

কলকাতা থেকে সরাসরি বিমানে যাওয়া যায় পোর্ট ব্লেয়ার। জলপথেও যাওয়া যায়, তবে তা বেশ সময়সাপেক্ষ।

কখন যাবেন:

অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস আন্দামান বেড়ানোর পক্ষে সবচেয়ে ভালো।

কোথায় থাকবেন:

পোর্ট ব্লেয়ার – সিনক্লেয়ার্স বে ভিউ
যোগাযোগ – +91 99320 85305, +91 3192 227824, 227937
[email protected]

হোটেল সি শেল
যোগাযোগ – +91 3192 242773, +91 3192 242774, +91 3192 234453, +91 3192 240001, +91 9933239625, +91 9531907006
[email protected]

নীল আইল্যাণ্ড – হোটেল সি শেল
যোগাযোগ – http://seashellhotels.net/neil/

হ্যাভলক আইল্যাণ্ড – হ্যাভলক আইল্যাণ্ড বিচ রিসর্ট
যোগাযোগ-  03192-236649 / 03192-235670
[email protected][email protected]
http://www.havelockislandbeachresort.com

দরকারি আরও কিছু :

আন্দামানের বেশীর ভাগ সমুদ্র সৈকতেই মৃত প্রবাল, ঝিনুক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখতে পাওয়া যায়। আন্দামান ভ্রমণের স্মারক হিসেবে সেগুলো তুলে নিজের ব্যাগে ভরবেন না। যেখানকার জিনিস সেখানেই থাকতে দিন। কিছু কিছু প্রজাতির প্রবাল এবং ঝিনুক সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।

এখানকার আদিম অধিবাসীদের ফটো তোলার কোনও রকম চেষ্টা করবেন না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com