ইতালির অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল বা এরকম কোন ব্যবস্থা নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হাউজিং অফিস থাকে। এখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, বাজারদরের চেয়ে কম খরচে থাকার ব্যবস্থা করে দেন তারা।
বড় শহরগুলোয় এপার্টমেন্টের ভাড়া স্বাভাবিকভাবেই বেশি, এটা ৩০০ থেকে ১,০০০ ইউরো হতে পারে। সাধারণত অন্তত এক বছরের জন্য ভাড়া নিতে হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শহরগুলোতে স্বল্পমেয়াদে আসবসাব সজ্জিত কক্ষ ভাড়া পাওয়া যায়। পুরো এপার্টমেন্ট ভাড়া না নিয়ে একটি কক্ষও ভাড়া নিতে পারে শিক্ষার্থীরা। অবশ্য পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে কিংবা রিয়েল এস্টেট এজেন্সীর সাথে যোগাযোগ করেও আবাসনের ব্যবস্থা করে নেয়া যায়।
আবাহওয়া
ইউরোপের মূল ভূখন্ড থেকে বুটের মত করে ভূমধ্যসাগরে বেরিয়ে আসা ভূখন্ড হচ্ছে ইতালি। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়ায় তাই কিছুটা তফাত দেখা যায়। উষ্ণ গ্রীষ্ম এবং শীতল শীতকাল উত্তর ইতালির বৈশিষ্ট্য। তবে শীতকালে দিনের তাপমাত্রা সচরাচর হিমাঙ্কের নিচে নামে না। আর দক্ষিণাঞ্চলে শীতের প্রভাব ততটা বেশি নয়। গ্রীষ্মকালটা শুষ্ক এবং বেশ গরম। তবে পার্বত্য অঞ্চলগুলোয় দীর্ঘ শীতকাল পরিলক্ষিত হয়।
ইতালি যাওয়া
ইউরোপ এবং সারা বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর সাথে সরাসরি ফ্লাইট আছে। এছাড়া লন্ডন, আমস্টার্ডাম, ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং প্যারিস হয়েও ইতালি প্রবেশ করা যায়।
বোলোগনা, ফ্লোরেন্স, নেপলস ইত্যাদি শহরের বিমানবন্দগুলোর সাথে ইউরোপের বিভিন্ন শহরের সরাসরি বিমান যোগাযোগ আছে। বেশ কিছু সাশ্রয়ী বিমান সংস্থাও ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইতালিতে।
ইউরোপের শহরগুলো থেকে রেল বা বাসে চড়েও ইতালি যাওয়া যায়। ইতালিজুড়ে বিস্তৃত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় সাধারণ গাড়িতে চড়েই দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া যায়।
পড়াশোনার জন্য ইতালি প্রবেশের ক্ষেত্রে যা প্রয়োজন:
- ভিসা সহকারে পাসপোর্ট
- নগদ অর্থ, ট্রাভেলার্স চেক, ক্রেডিট কার্ড, ইত্যাদি
- বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অনুমতিপত্র
- প্রয়োজনীয় হেলথ ডকুমেন্ট
- ইতালি থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আছে তার প্রমাণপত্র
- এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য আরও কোন কাগজপত্র লাগবে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
পড়াশোনার জন্য
পড়াশনার জন্য ইতালি প্রবেশ করতে ইউরোপীয় শিক্ষার্থীদের ভিসা লাগে না। কিন্তু ইউরোপের বাইরের দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রয়োজন হয় এবং সেটা ইতালি যাওয়ার আগেই সংগ্রহ করতে হয়।
ইতালি প্রবেশের আট দিনের মধ্যে পুলিশকে অবহিত করতে হবে, বাড়িভাড়া নেয়ার পূর্বশর্ত এটি।
কেমন পোশাক নিতে হবে?
চারটি ঋতুর প্রভাব অনুভূত হয় পুরো ইতালিতেই। তবে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে আবহাওয়ায় কিছুটা পার্থক্য আছে। দক্ষিণে শীত ততটা প্রবল না হলেও উত্তরে বেশ শীত পড়ে। পুরো ইতালিতেই গ্রীষ্মকালটা বেশ উষ্ণ। তবে গ্রীষ্মের দৈর্ঘ্য দক্ষিণে তুলনামূলকভাবে বেশি। বসন্ত এবং শরতে বৃষ্টি বেশি হয়, উত্তরাঞ্চল তুলনামূলকভাবে বেশি আর্দ্র।
কি ধরনের পোশাক নিতে হবে সে সংক্রান্ত পরামর্শ বিশ্ববিদ্যালগুলোর তরফ থেকে দেয়া হয়। তবে উত্তর বা দক্ষিণ, গন্তব্য যেখানেই হোক না কেন শীতের পোশাক কিছুটা লাগবেই।
শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সেবা
বিদেশে পড়তে যাওয়াজনিত একটি উত্তেজনা শিক্ষার্থীদের মাঝে কাজ করে ঠিকই, কিন্তু নতুন জায়গায় গিয়ে কিছুটা ছন্দপতন ঘটতে পারে। নতুন দেশের জীবনযাপন পদ্ধতির সাথে মানিয়ে নেয়া কঠিন হতে পারে, একটি পর্যায়ে প্রায় সব শিক্ষার্থীই গৃহকাতর বা হোমসিক হয়ে পড়ে। এসব পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল অফিসের সাথে কথা বলা যেতে পারে।
অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রমের শুরুতে একটি পরিচিতিমূলক কর্মসূচি থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও সেবা সম্পর্কে অবহিত করা হয় শিক্ষার্থীদের।
যাতায়াত
ইতালির গণপরিবহণ ব্যবস্থা বেশ ভালো এবং সস্তা। ইতালির শহরগুলোয় যাতায়াতের জন্য গণপরিবহণই উত্তম পন্থা। কারণ, পার্কিং এবং সড়কপথের টোল এখানে খুব বেশি। গণপরিবহণে চড়তে একটি টিকেট কিনলে খরচ বেশি পড়বে। এক সপ্তাহ বা এক মাসের টিকেট এক সাথে কেনাটা সাশ্রয়ী। বাসে কোন টিকেট বিক্রি করা হয় না। পত্রিকা বা সিগারেট বিক্রেতারা এসব টিকেট বিক্রি করে। ট্রেনে বা বাসে চড়ার আগেই টিকেটে সীল নিতে হবে।
বাস
সবগুলো বড় শহরেই বিস্তৃত পরিসরে বাস এবং ট্রাম যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও পিক আওয়ারে যানজটের কারণে এগুলো ধীর হয়ে পড়ে।
মেট্রোরেল
রোম, নেপলস, মিলান এসব শহরের মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক ব্যহার করা যেতে পারে ব্যস্ত সময়গুলোয়।
ট্যাক্সি:
ইতালির সব শহর বিশেষ করে বড় শহরগুলোয় প্রচুর ট্যাক্সি পাওয়া যায়। সাদা আর হলুদ রঙের হয় এগুলো। ওপরে নিয়ন আলোয় লেখা থাকে ‘ট্যাক্সি’। এখানে ট্যাক্সি বেশ ব্যয়বহুল। লাগেজ, পোষা প্রাণী ইতাদির জন্য অতিরিক্ত মাশুল গুণতে হয়। অফিসিয়াল ট্যাক্সিগুলোয় মিটার থাকে এবং প্রয়োজনে রশিদ দেয়া হয়। বখশিশ জরুরী নয়। তবে অধিকাংশ যাত্রী এক বা দুই ইউরো বখশিশ দেয়। বিমানবন্দর এবং রেলস্টেশনের কাছে প্রায়ই আনঅফিসিয়াল ট্যাক্সি থাকে এগুলো থেকে সতর্ক থাকা উচিত।
সাইকেল
ইতালির বড় শহরগুলোয় না হলেও ছোট শহরগুলোয় অনেকই সাইকেলে যাতায়াত করে। সাইক্লিং ইতালিতে বেশ জনপ্রিয়। ছুটির দিনগুলোয় অনেকেই সাইকেল নিয়ে শহরের বাইরে বেরিয়ে পড়ে।
জীবনযাত্রার ব্যয়
ইতালির বড় শহরগুলো, পর্যটন শহরগুলো বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের শহরগুলোয় জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি।
থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, টেলিফোন এবং অন্যান্য খরচসহ একজন শিক্ষার্থীর মাসিক ব্যয় ১,০০০ থেকে ১,৫০০ ইউরো হতে পারে। (২০১৪ সালে ইতালির সরকারি ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য।)
বাংলাদেশের মত ইউরোপের বাইরের দেশ থেকে যারা যাবেন তারা যাওয়ার আগেই বেসরকারি স্বাস্থ্যবীমার ব্যবস্থা করতে পারবেন। ইতালিতে সে স্বাস্থ্যবীমার সুবিধা পাওয়া যাবে কিনা আগেই ইতালি দূতাবাস থেকে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। ইতালির চিকিৎসা সেবা এমনিতে বেশ ব্যয়বহুল।
পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ
ইউরোপীয় শিক্ষার্থীরা ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই কাজ করতে পারে ইতালিতে। কিন্তু বাংলাদশে বা ইউরোপের বাইরের অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের সুযোগ কম। শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট যোগাড় করাটা বেশ কঠিন। একটি নিয়োগপত্র পুলিশকে দিতে হয়। কাজটা করতে হয় চাকরিদাতাকেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভিসায় কাজ করার অনুমতি দেয়া হয় না।
ইতালিতে থাকার সময় কিছু সতর্কতা
ছিঁচকে চোর এবং পকেটমারদের বিশেষ নজর থাকে অসতর্ক বিদেশীদের ওপর। তাই কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করা ভালো:
- পাতালরেল, গণপরিবহন বা ভিড়ের মধ্যে সতর্ক থাকা
- খাবারের দোকান, রেষ্টুরেন্ট এসব জায়গায় ব্যাগ, জ্যাকেট বা এ জাতীয় কিছু রেখে দূরে না যাওয়া।
- মানিব্যাগ, পার্স ইত্যাদি লুকিয়ে রাখা।
- হ্যান্ডব্যাগ বন্ধ রাখা।
- পাসপোর্ট, নগদ অর্থ, ক্রেডিট কার্ড, ইত্যাদি একত্রে না রাখা।
- একা হলে অচেনা জায়গা এড়িয়ে চলা।
গাড়ি পার্ক করার ক্ষেত্রে সতর্কতা:
- অল্প আলোকিত স্থানে গাড়ি না রাখা।
- মূল্যবান জিনিসপত্র গাড়িতে দৃশ্যমান না রাখা।
নারীদের হয়রানি এড়াতে সতর্কতা:
- বাস বা রেলস্টেশনের পেছনের রাস্তা এড়িয়ে চলা।
- রাতে রাস্তায় একা না হাঁটা।
- গণপরিবহন এবং ট্যাক্সি নিরাপদ। তবে রাতে বা ভোরে একা যতায়াত না করা উচিত।
- ট্রেনে বা মেট্রোরেলে কোন কামরায় একা না বসা।
- অপরিচিত কারো বাহনে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা না করা।
এখন ইতালিতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৫৮টি, সরকার অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১৭ টি এবং বিদেশীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ২টি।
সেমিস্টার পদ্ধতি ও অন্যান্য
দুই সেমিস্টার মিলিয়ে এক শিক্ষাবর্ষ ধরা হয় ইতালিতে। প্রথম সেমিস্টার শুরু হয় সেপ্টেম্বর/অক্টোবরে আর শেষ হয় জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারিতে। দ্বিতীয় সেমিস্টার শুরু হয় ফেব্রুয়ারিতে আর শেষ হয় জুলাই-এ। ঠিক কোন তারিখে সেমিস্টার শুরু হবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করে। প্রতি সেমিস্টারের দৈর্ঘ্য ২০ সপ্তাহ; ১৪ সপ্তাহ ক্লাশের জন্য আর ৬ সপ্তাহ পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ থাকে।
বছরে গড়ে ৮৫০ থেকে ১০০০ ইউরো খরচ হবে। তবে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খরচ অনেক বেশি হয়ে থাকে। বৃত্তি, আর্থিক সাহায্য, আবাসন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ইতালীয় এবং বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য একই নিয়ম প্রযোজ্য। শিক্ষার্থীর প্রয়োজন এবং ফলাফলই বিবেচনার মাপকাঠি।