পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের অদূরে কারকাভেলোসে অবস্থিত পর্তুগালের আধুনিকতম বিশ্ববিদ্যালয় নোভা স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স বা সংক্ষেপে নোভা এসবিই। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউনিভার্সিদাদে নোভা দি লিসবোয়ার একটি অংশ। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত নোভা এসবিই লিসবনের ক্যাম্পোগ্রান্দেতে অবস্থিত ছিল, পরবর্তীতে এটি ক্যাম্পোলিদে স্থানান্তরিত হয় এবং ২০১৮ সালে কারকাভেলোসে সম্পূর্ণ নতুন ও স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। নোভা এসবিইর শিক্ষকের সংখ্যা তিন শতাধিক।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এডুকেশন র্যাঙ্কিং অনুযায়ী ২০২০ সালে ইউরোপের সেরা ১৫টি বিজনেস স্কুলের একটি পর্তুগালের নোভা এসবিই। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়েও নোভা স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিপ সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছে। পর্তুগালের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নোভা এসবিই আন্তর্জাতিক অ্যাক্রিডিশন লাভ করেছে। ২০০৭ সাল থেকে এটি সিইএমএসের সদস্য। নোভা এসবিই থেকে শিক্ষার্থীরা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এপচেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় এক সেমিস্টার পড়াশোনা করার সুযোগ পায়। এ ছাড়া দুই বছরের মাস্টার্স প্রোগ্রামে ডাবল মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
নোভা এসবিই থেকে ডাবল ডিগ্রি প্রোগ্রামের আওতায় খুব সহজেই ইংল্যান্ডের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স, কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও, ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটি অব এইচএসবিসি বিজনেস স্কুল, জাপানের কিয়াটো ইউনিভার্সিটি, নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব বার্জেন, ফ্রান্সের আইইএসইজি স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট, সুইডেনের স্টকহোক ইউনিভার্সিটি, গোথেনবার্গ ইউনিভার্সিটি, ইউএসএর ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুয়েটসসহ সারা বিশ্বের অসংখ্য নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাওয়া যায়। ফলে পর্তুগালের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও উন্নত বিশ্বের নাম করা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ করে নিতে নোভা এসবিই হতে পারে একটি ভালো হাতিয়ার।
নোভা এসবিই পর্তুগালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয়। পর্তুগিজ শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে বার্ষিক ৬৯৭ ইউরো টিউশন ফি হলেও বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটা দাঁড়ায় ৭৫০০ ইউরো বা প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ১.৫ বছরের একটি মাস্টার্স প্রোগ্রামে খরচ পড়ে প্রায় ১২,০০০ ইউরো। নোভা স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিপে ইরাসমাস প্রোগ্রামের আওতায় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসে থাকে। এ ছাড়া এখানে বেশকিছু স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নোভা এসবিই স্কলারশিপ, নিড বেজড স্কলারশিপ, নোভা আফ্রিকা স্কলারশিপ, সান্তান্দার ফিউচার স্কলারশিপ প্রোগ্রাম প্রভৃতি। নোভার শিক্ষার্থীদের মেধা তথা ফলাফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় এসব স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। নোভা স্কুল অব বিজনেজ অ্যান্ড ইকোনমিক্স শুধু পর্তুগাল নয় বরং বিশ্বের অন্যতম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়।
এখানে শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার সঙ্গে পরিচিত করিয়ে নেওয়া হয়। অনুষ্ঠিত হয় অসংখ্য গ্রুমিং সেশন। ক্লাসে ছাত্র ও শিক্ষকদের মাঝে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচিত পর্বও অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। কোনো সেমিস্টারের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা জানতে পারে কবে, কোন রুমে ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে এবং যদি মেকআপ ক্লাসের প্রয়োজন হয় সেটির পরিকল্পনাও আগে থেকে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজ নিজ ইনস্টিটিউশনাল ই-মেইল ব্যবহার করে এসব প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে। সেখানে শিক্ষক ও মডারেটরদেরও এপেস থাকে। সব মিলে একটি ভার্চুয়াল পরিবেশে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও মডারেটররা নিয়মিত যোগাযোগ করার সুযোগ পায়। ক্লাসে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ বা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ঠবাড়ী অ্যাপ ব্যবহার করে। শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোনে কিউআর কোড স্ক্যান করে এই অ্যাপে প্রবেশ করতে পারে এবং নিজেদের প্রশ্ন ও উত্তর টাইপ করে থাকে। মুহূর্তের মাঝেই শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের ফিডব্যাক পেয়ে যায় এবং সেই অনুযায়ী নিজের মতামত ব্যক্ত করে।
২০২০ সালের মার্চ থেকে সারা বিশ্বের নানা জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলেও নোভা এসবিই অনলাইন মাধ্যমে নিয়মিত লেখাপড়া কার্যক্রম চালিয়ে নিয়েছে। কভিড-১৯-এর সময়ে এখানে ক্লাসরুমে ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হলেও অনলাইন মাধ্যমে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলেছে। সমুদ্রসৈকতের অদূরে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা দেখভালের জন্য জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব মেডিকেল টিম রয়েছে। এ ছাড়া ইনোভেশন ইকোসিস্টেমের আওতায় সৃজনশীল শিক্ষার্থীদের নতুন নতুন বিজনেস প্রোজেক্ট নিয়ে এপপেরিমেন্ট করার জন্য রয়েছে বিশেষায়িত ল্যাব। এখানে গবেষণার জন্য আরও রয়েছে ডাটা ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, ২৪/৭ ওপেন লাইব্রেরি।
নোভা এসবিইর শিক্ষকদের প্রায় সবাই ডক্টরেট ও পোস্ট-ডক্টরেট ডিগ্রিধারী। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, এলএসই, স্ট্যানফোর্ডসহ বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি বা পোস্ট ডক গবেষণা করে তারপর অধিকাংশ প্রার্থী সেখানে ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদানের সুযোগ পেয়েছেন। উন্নত বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নোভা এসবিইও গবেষণায় প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে। এজন্য তাদের রয়েছে করপোরেট স্পন্সরশিপ। আধুনিক যুগের বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য পর্তুগালের নোভা এসবিই একটি সেরা জায়গা। বিজনেস স্কুল হিসেবে এর খ্যাতি যেমন বিশ্বজোড়া, তেমনি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রেও এটি তুলনাহীন।
কায়সুল খান প্রবাসী শিক্ষার্থী