২০২৩ সালে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যের উপকূলে পৌঁছেছেন ৩০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী। তার আগের বছরের তুলনায় অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা অন্তত ৩৬ ভাগ কমেছে।
নতুন বছরের প্রথম দিনে সরকারের প্রকাশ করা তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা ২৯ হাজার ৪৩৭। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে সংখ্যাটি ছিল ৪৫ হাজার ৭৭৫ জন।
২০১৮ সাল থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাজ্য। সেই হিসেবে ২০২৩ সালে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যাটি গত পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর ইংলিশ চ্যানেল অভিবাসীবাহী নৌকা থামানোকে নিজের অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়েছিলেন ঋষি সুনাক।
পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ত শিপিং লেনে অভিবাসীবাহী নৌকা ব্রিটেনের রাজনীতির মূল আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। চলতি বছর ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচনের কথা রয়েছে। সেখানেও প্রাধান্য পাচ্ছে এই অভিবাসন ইস্যুটি।
ইংলিশ চ্যানেলে অভিবাসীবাহী নৌকা থামাতে ফ্রান্সের সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তিও করেছে যুক্তরাজ্য। সেই চুক্তির আলোকে ফ্রান্সকে দিতে হয়েছে ৪৮০ মিলিয়ন পাউন্ড অর্থ।
১ জানুয়ারি ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ২৪ হাজারেরও বেশি ডিপোর্ট এবং মানবপাচারে জড়িত ২৪৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সরকার আরও জানিয়েছে, ২০২২ সালের ২৮ জুনের আগে করা এক লাখ ১২ হাজার আশ্রয় আবেদনের ব্যাকলগ দূর করা সম্ভব হয়েছে। একইসঙ্গে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য হোটেলের সংখ্যাও কমাতে পেরেছে দেশটি।
অভিবাসন, আশ্রয় ইস্যুতে বছরে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন পাউন্ড অর্থ খরচ হয় যুক্তরাজ্যের। যার বড় একটি অংশ ব্যয় হয় অভিবাসীদের আবাসনে। আবাসন সংকটের কারণে অভিবাসীদের রাখতে হয় বিভিন্ন হোটেলে।
কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে আপিল হবে জেনেও ঝুলে থাকা আশ্রয় আবেদনের বিষয়ে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার।
এক বিবৃতিতে ঋষি সুনাক বলেন, ‘ব্রিটিশ জনগণের ওপর অনিয়মিত অভিবাসনের বোঝা নামাতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমরা নৌকা বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি, (আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসান হিসেবে ব্যবহার করে আসা) হোটেলগুলো স্থানীয়দের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ হলো, যারা অনিয়মিত পথে যুক্তরাজ্যে আসতে চান, তারা যেন নিরুৎসাহিত হয়।’
নির্বাচনের জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা লেবার পার্টি অবশ্য সুনাক সরকারকে কোনো কৃতীত্ব দিতে চান না। তারা বলছেন, প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে সুনাক প্রশাসন এবং সরকারের অভিবাসন নীতি বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ।
গত মাসে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী সুনাক জানিয়েছিলেন, প্রতিশ্রুতি পূরণে তিনি কোনো নির্দিষ্ট দিন তারিখ ঘোষণা করেননি।
যুক্তরাজ্যে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠাতেও উদ্যোগ নিয়েছিলেন ঋষি সুনাক। কিন্তু আদালতের রায়ে তার সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে গেছে। যদিও রুয়ান্ডাকে নিরাপদ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার তৎপরতা চলমান রেখেছে তার প্রশাসন।
বিবৃতিতে সুনাক আরও বলেন, ‘নৌকা থামানো এবং আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর প্রতিশ্রুতিপূরণে আমি সচেষ্ট।’
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস