আয়ারল্যান্ডের সরকারী নাম “রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড”। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি দ্বীপরাষ্ট্র আয়ারল্যান্ড। দেশটি নর্থ চ্যানেল, আইরিশ সাগর ও সেন্ট জর্জ চ্যানেলের মাধ্যমে ব্রিটেন থেকে বিচ্ছিন্ন। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জগুলোর মধ্যে আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় বৃহত্তম। ইউরোপে তৃতীয়। রাজনৈতিকভাবে আয়ারল্যান্ড দুইভাবে বিভক্ত। এর মধ্যে রয়েছে আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্র, যা দ্বীপটির ছয় ভাগের পাঁচ ভাগ। আর রয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ড, যা ব্রিটেনের একটি অংশ। দ্বীপের উত্তর-পূর্ব দিকে এর অবস্থান।
মধ্যযুগ পর্যন্ত এই দ্বীপ ঘন জঙ্গলে আবৃত ছিল। তবে ২০১৩ সালে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, এর হার এখন ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। যদিও ইউরোপে গড়পড়তা বনভূমির হার এখনো ৩৫ শতাংশ। আয়ারল্যান্ডে অন্তত ২৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ীর খোঁজ পাওয়া যায়। দেশটিতে শীত তুলনামূলক কম পড়ে। বৃষ্টিপাতও হয় প্রচুর।
১। অতীতে আয়ারল্যান্ড দ্বীপ জুড়ে ছিল শুধু একটিই রাজ্য আয়ারল্যান্ড। ১১৯৮ সন পর্যন্ত এই রাজ্যটি একক রাজার শাসনে ছিল, যাদের বলা হতো হাই কিং অব আয়ারল্যান্ড। কিন্তু পরবর্তিতে ছোট ছোট রাজার অধীনে ১৫৪১ সন পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন ভাবে দ্বীপটি শাসিত হয়েছে। তবে বর্তমানে দ্বীপটির উত্তরাঞ্চলীয় একটি অংশ ব্রিটেনের সাথে যুক্ত।
২। ৭০ হাজার ২৭৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের বাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১১৮ তম বৃহত্তম দেশ।
৩। আয়ারল্যান্ডের সরকারী ভাষা ইংরেজি ও আইরিশ।
৪। আইরিশরা প্রধানত ক্যাথলিক ক্রিশ্চিয়ান। দেশটিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্যাথলিক ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়।
৫। ধর্মীয় কারণে এখানে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নিষিদ্ধ। এখানে প্রকাশ্যে বৈধভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী বিক্রি হয় না।
৬।ডাবলিন আয়ারল্যান্ড দ্বীপের বৃহৎ শহর এবং প্রজাতন্ত্রী আয়ারল্যান্ডের রাজধানী। শহরটি আয়ারল্যান্ডের পূর্ব উপকূলের মধ্য ভাগে লিফি নদীর পাড়ে অবস্থিত।
শিল্প এবং সাহিত্যে ডাবলিন নগরীর রয়েছে বিশেষ সুখ্যাতি। বিশ্ব সাহিত্যের বেশ কিছু খ্যাতনামা ব্যাক্তিত্ব এই নগরীতে জন্ম নিয়েছিলেন এবং জীবনের সূচনাকাল অথবা সম্পূর্ণ সময় এখানে অতিবাহিত করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তিন নোবেল বিজয়ী, কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস, নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ ও কথা শিল্পী স্যামুয়েল বাকেট। জেমস জয়েসের লেখা কালজয়ী উপন্যাস ইউলিসিসের প্রেক্ষাপটও এই ডাবলিন শহর।
৭। পৃথিবীর অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন যে, প্রায় ১৪ হাজার বছর পূর্বে আয়ারল্যান্ড থেকেই মানুষ জাতির উৎপত্তি হয়েছিল।
৮। টাইটানিক জাহাজ সম্পর্কে তো আপনারা অবশ্যয় শুনেছেন। কিন্তু আপনি জানেন কি, টাইটানিক জাহাজ আয়ারল্যান্ডে তৈরি করা হয়েছিল।
৯। এই দেশের সবচেয়ে বড় অদ্ভুত তথ্য হলো এই দেশে কিন্তু কোন সাপ নেই। যার কারন অতিরিক্ত ঠাণ্ডা।
১০। আয়ারল্যান্ড এর নারীদের প্রায় ৭০ শতাংশ পরকীয়ায় জড়িত। এই দেশে বিবাহিত দম্পতিরা গড়ে ১৩ বছর একসাথে থাকেন। এরপরে কোনরকম বিবাহবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া ছাড়াই অন্য পুরুষ বা মহিলার সাথে থাকতে শুরু করেন।
১১। আলু আইরিশদের প্রধান খাবার। ১৮৪০ সালে এক ধরনের রোগে এই দেশের সব আলু পচে যায় যার ফলে এখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এবং এই দুর্ভিক্ষে প্রায় ১০ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল।
১২। আয়ারল্যান্ড তার বিশাল বিশাল দুর্গের জন্য পরিচিত, যা অতিতে যুদ্ধের সময় এই দেশকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে তৈরি করা হয়েছিল। এই দুর্গ গুলো এখনও বিদ্যমান এবং এইসব দুর্গ দেখার জন্য প্রতিবছর প্রচুর দর্শনার্থী এখানে বেড়াতে আসে।
১৩। ১৯৮৫ সালের আগ পর্যন্ত আয়ারল্যান্ড এ কনডম কেনার জন্য ডাক্তার এর প্রেসক্রিপশান এর প্রয়োজন হত।
১৪। ১২০০ সালের দিকে আয়ারল্যান্ডে সর্বপ্রথম ইংরেজি ভাষার প্রচলন শুরু হয়। বর্তমানে এই দেশটিতে মাত্র ১০ শতাংশ লোক এই দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা আইরিশ এ কথা বলে থাকেন, বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ ইংরেজিতেই কথা বলে থাকেন।
১৫। আয়ারল্যান্ড এ অবস্থিত সিয়ান্স বার ৯০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা আজও চালু আছে।
১৬। পুরো ইউরোপ এ একমাত্র আয়ারল্যান্ডেই গর্ভপাত করানো অবৈধ।
১৭। আমেরিকার হোয়াইট হাউস জেমস হোবান নামের এক ব্যাক্তি ডিজাইন করেন। যিনি একজন আইরিশ নাগরিক ছিলেন।
১৮। আয়ারল্যান্ডই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার রাষ্ট্রীয় প্রতীক একটি মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট।
১৯। আপনার দাদা-দাদি যদি আয়ারল্যান্ড এর নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনি সেখানকার নাগরিকত্ব পাবেন, তা আপনি যেই দেশেই জন্মগ্রহণ করেন না কেন।
২০। আয়ারলান্দের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা হচ্ছে ইউরো।
২১। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ৩৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ৮০,৬৪১ মার্কিন ডলার।