১। বর্তমান আলবেনীয়রা সম্ভবত ইলিরীয় জাতির লোকদের বংশধর। পূর্বে এই এলাকাটি ইলিরিয়া নামেই পরিচিত ছিল। ২২৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দেই রোমানরা আড্রিয়াটিক সাগর পাড়ি দিয়ে ইলিরিয়া আক্রমণ করে। ১৬৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ তারা ইলিরিয়াতে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ৩৯৫ সালে রোমান সাম্রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিমে দুইটি সাম্রাজ্যে ভাগ হয়ে যায়। আধুনিক আলবেনিয়া এলাকাটি পূর্ব অংশে তথা বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্যে পড়ে। ৮ম থেকে ১১শ শতকের মধ্যে ইলিরিয়া ধীরে ধীরে আলবেনিয়া নামে পরিচিত হতে শুরু করে। পরবর্তীতে ১৪শ শতকের মাঝামাঝি সময়েই বাইজেন্টীয় শাসনের পতন ঘটে এবং বর্তমান তুরস্ক-অঞ্চলভিত্তিক উসমানীয়রা ১৩৮৮ সালে আলবেনিয়া আক্রমণ করে। ১৪৩০ সালের মধ্যেই উসমানীয়রা আলবেনিয়া বিজয়ে সক্ষম হয়।
এরপর ১৯১২ সালের দিকে আলবেনিয়ার পাশালিকদের পতন এবং আরও কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আলবেনিয়ানদের জাতীয়তাবোধ জেগে ওঠে। এ সুযোগে তুর্কি সাম্রাজ্যের বিরোধীরা একজোট হয়ে তুর্কির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। ৫০০ বছর শাসনের পর ১৯১২ সালের ১৮ নভেম্বর আলবেনিয়া থেকে তুর্কি শাসন গুটিয়ে নেয়া হয়। তখনকার প্রভাবশালী ইউরোপীয় দেশগুলো আলবেনিয়ার বর্তমান সীমানা নির্ধারণ করে দেয়।
২। ২৮ হাজার ৭৪৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ২৮ লাখ মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১৪০ তম দেশ।
৩। আলবেনিয়ার সরকারি ভাষা আলবেনিয়ান। গেগ ও তোস্কের মিলিত রূপই হচ্ছে আলবেনিয়ান ভাষা। এখানে সংখ্যালঘু গ্রিকদের ভাষাও বেশ প্রচলিত।
৪। দেশটির সিংহভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ মুসলিম এবং ৩০ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী।
৫। আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানা এবং এটিই দেশটির সবচেয়ে বড় শহর। শহরটি দেশটির একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। আধুনিক সামুদ্রিক, রেল ও সড়ক পরিবহনের উল্লেখযোগ্য অবস্থানের কারণে তিরানা আলবেনিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও বাণিজ্য কেন্দ্র। এ শহরেই দেশটির রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং গুরুত্বপূর্ণ সকল সরকারী কর্মকর্তার কার্যালয় অবস্থিত।
একইসাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও ভরপুর এই তিরানা। শহরটি চারিদিক দিয়ে পাহাড়-পর্বতে ঘেরা।
৬। দেশটিতে মধ্যসাগরীয় শান্ত জলবায়ু বিরাজ করে। দেশটিতে শীতকালে গড় তাপমাত্রা থাকে -১ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মকালে তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে।
৭। আলবেনিয়ার রাজনীতি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী সরকার ও একটি বহু-দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতা সরকার ও আইনসভা উভয়ের হাতে ন্যস্ত।
৮। আলবেনিয়ার এক-তৃতীয়াংশের বেশি অংশজুড়ে আছে বনাঞ্চল। এর আয়তন হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এখানে তিন হাজারের অধিক প্রজাতির গাছ পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৯। দেশটির সার্বিক যোগাযোগব্যবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সড়ক, রেল ও বিমান সব দিক দিয়েই যোগাযোগব্যবস্থায় ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে তারা। তবে সম্প্রতি দেশটির সরকার কসভো, মেসিডোনিয়া, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও গ্রিসের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে মনোযোগ দিয়েছে। এ প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আলবেনিয়ার ৭৫৯ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক তৈরি হবে।
১০। আলবেনিয়া তুর্কি সাম্রাজ্যের অধীনে থাকার সময় দেশটিতে শিক্ষার হার ছিল ৮৫ শতাংশ। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়টুকুতে দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। তবে দেশটিতে বর্তমান শিক্ষার হার ৯৮.৭ শতাংশ। দেশটির প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে রাজধানী তিরানায় অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব আলবেনিয়া। ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে এটি যাত্রা শুরু করে।
১১। আলবেনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম গুরুত্বপূর্ণ শহর স্কোদরা। এককালে শহরটি ছিল আলবেনিয়ার রাজধানী। অনেক আলেমের স্মৃতিবিজড়ির এ শহর। শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানি এ শহরেই জন্মগ্রহণ করেন এবং এ শহরেই ইন্তেকাল করেন। বলা হয়, ১৯৭৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জগদ্বিখ্যাত মাদার তেরেসাও ছিলেন এখানকারই বাসিন্দা।
১২। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে শুধু আলবেনিয়া, আরমেনিয়া ও ভ্যাটিকান সিটিতে ম্যাকডোনাল্ডের কোনো শাখা নেই।
১৩। দীর্ঘ সময় কমিউনিস্ট শাসনের ফলে দেশটিতে মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা বেশ নাজুক। মুসলমানেরা হালাল-হারামের তেমন তোয়াক্কা করেন না। নারী-পুরুষের অবাধ চলাফেরা ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতোই। তবে দিন পাল্টাচ্ছে। ধীরে ধীরে মুসলমানদের প্রভাব বাড়ছে দেশটিতে।
১৪। সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের জন্য দেশটি ১৯৩০ সালে গঠন করেছে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অব আলবেনিয়া। দেশটি ফিফার সদস্য এবং উয়েফার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে অন্যতম।
১৫। যেমনটি ভিডিওর শুরুতেই বলেছি, আলবেনিয়া একটি দরিদ্র দেশ। তবে ধিরে ধিরে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। দেশটিতে এখন বিনিয়োগ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এখানে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি রয়েছে। তবে এখানে দৈনিক তেল উৎপাদনের হারটি বেশ কম। মাত্র ছয় হাজার ৪২৫ ব্যারেল। তবে প্রাকৃতিক গ্যাসের যে মজুদের খবর পাওয়া গেছে তাতে দেশের জনগণের চাহিদা আপাতত মিটে যাওয়ার কথা। আলবেনিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে কৃষির। এ খাতে দেশটির ৫৮ শতাংশ লোক নিয়োজিত, আর তা জিডিপিতে অবদান রাখছে ২১ শতাংশ। আলবেনিয়ার গম, ভুট্টা, তামাক, ডুমুর এবং জলপাইয়ের উৎপাদন মোটামুটি আলোচনায় আসার মতো।
১৬। আলবেনিয়ার সরকারী মুদ্রা লেক। ১ লেক সমান প্রায় বাংলাদেশী ৭৭ পয়সা এবং ০.৬৪ ভারতীয় রুপি।
১৭। দেশটির মোট জিডীপি প্রায় $১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় $৫,২৬১ মার্কিন ডলার।
১৮। আলবেনিয়ার ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৩৫৫।