মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত বিদেশি নাগরিকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ভিসা চালু করেছে ২০১৯ সালে, যার আওতায় পাঁচ ও দশ বছর মেয়াদে ভিসা দেয়া হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বেশ কিছু ব্যক্তির এ ধরণের ভিসা লাভের খবর ঢাকার পত্রিকায় এসেছে, যার মধ্যে তারকা খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ আছেন।
দুবাই ভিত্তিক সাংবাদিক সাইফুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ১০ বছর মেয়াদের যে ভিসা দেয়া হচ্ছে সেটিই গোল্ডেন ভিসা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দুবাইয়ের নেতা শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম ২০১৯ সালে গোল্ডেন কার্ড ভিসা পদ্ধতি চালু করেছিলেন যার আওতায় চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, এবং স্কুলে বেশ ভালো ফল করা শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাদারদের পরিবারসহ দশ বছর থাকার সুযোগ দেয়া হয়।
মূলত অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে বিদেশি বিনিয়োগ আনার একটি অনানুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতা চলছে মধ্যপ্রাচ্যের তিন প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে।
সৌদি আরব আরও আগেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ বছর মেয়াদে ভিসা দেয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউএই ২০১৯ সালে এটি চালু করলেও পরে করোনা মহামারির জন্য খুব বেশি গতি পায়নি।
কিন্তু সম্প্রতিকালে এ ধরণের ভিসা দেয়ার হার অনেক বাড়িয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
মি. রহমান বলছেন, শুধু ভিসা দেয়াই নয়, বিদেশিদের জন্য ব্যবসা বাণিজ্যও করাটাও সহজ করার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ, যার আওতায় এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে যে বিদেশি ব্যবসায়ীরা কোনো লোকাল পার্টনার ছাড়াই সেখানে ব্যবসা করতে পারবেন।
বিভিন্ন খাতের কর্মীদের জন্য দুই বছর আর ব্যবসায়ীদের জন্য তিন বছর মেয়াদে ভিসা আগে থেকেই দেয়া হচ্ছিলো।
আর বিনিয়োগকারী ধরে রাখা এবং নতুন বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে পাঁচ বছর মেয়াদের গ্রিন ভিসা ও ১০ বছর মেয়াদের গোল্ডেন ভিসা চালু হয়েছে ২০১৯ সালে।
“পুরো বিষয়টা নির্ভর করে বিনিয়োগের ওপর। সেখানকার ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে ব্যাংক একটা সার্টিফিকেট দেয়। তার ভিত্তিতে আবেদন করলে সরকার ভিসা দেয়, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. রহমান।
এখন আগামী ৩রা অক্টোবর থেকে গোল্ডেন ভিসার ক্যাটাগরি আরও বাড়ানো ও নতুনভাবে গ্রিন ভিসা চালু করার কথা রয়েছে।
সাইফুর রহমান বলছেন, সুনির্দিষ্ট কিছু ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে ভিসা ইস্যু করে ইউএই কর্তৃপক্ষ, যার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবীরা সেখানে বসবাস, চাকরী ও অধ্যয়ন করতে পারবেন। সামনে শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন খাতের মেধাবী পেশাজীবীরা এর আওতায় আসবেন।
দুই মিলিয়ন দিরহামের প্রপার্টি কিনলে বা সমপরিমাণ অর্থ সেখানকার ব্যাংকে রাখলেই এ ভিসার জন্য আবেদন করা যায়।
ভিসাটি ১০ বছরের বৈধ ও নবায়নযোগ্য। এটি পেলে ছয়মাসের মধ্যে একাধিকবার সেদেশে প্রবেশ করা যাবে। ইস্যু করা হবে রেসিডেন্ট পারমিটও।
ইউএইর বাইরে থাকলেও ভিসাটি বাতিল হবে না। আর ভিসাধারীরা যে কোন সংখ্যক গৃহকর্মী স্পন্সর করতে পারবেন।
ভিসাধারী ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার পরিবারের সদস্যরা সেখানে থাকতে পারবেন।
তবে ভিসার জন্য ব্যক্তিকে কমপক্ষে স্নাতক পাস আর তার মাসিক বেতন কমপক্ষে ত্রিশ হাজার দিরহাম হতে হবে।
অনুমোদিত রিয়েল স্টেট কোম্পানি থেকে দুই মিলিয়ন দিরহাম মূল্যের প্রপার্টি কেনা থাকতে হবে।
খেলা, শিল্প, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, আইনসহ কয়েকটি ক্ষেত্রের মেধাবীরা আবেদন করতে পারবেন। তাদের ক্ষেত্রে শুধু মেধা যাচাই করবে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
মাল্টি এন্ট্রি টুরিস্ট ভিসার জন্য নতুন নিয়মে কোন স্পন্সরের প্রয়োজন নেই। টুরিস্ট ক্যাটাগরিতে এ ভিসা নিয়ে ১৮০ দিন পর্যন্ত থাকা যাবে।
অস্থায়ী কাজের ভিসার ক্ষেত্রে চুক্তি বা নিয়োগকর্তার কাছ থেকে একটি চিঠি এবং উপযুক্ততার প্রমাণ দিতে হবে।
অধ্যয়ন বা প্রশিক্ষণের জন্য ভিসার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে চিঠি নিয়ে জমা দিতে হবে।
পারিবারিক ভিসার জন্য ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত পুরুষ শিশুদের তাদের পিতা মাতা স্পন্সর করতে পারবেন।
চাকরীর ভিসার ক্ষেত্রে চাকরী প্রার্থীরা সেখানকার সুযোগ অনুসন্ধানের জন্য ভিসাটি পেতে পারেন।
গ্রিন ভিসা যারা পাবেন তারা তাদের পরিবারকে স্পন্সর বা নিয়োগকর্তা ছাড়াই ইউএইতে নিতে পারবেন।
বিবিসি বাংলা