নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেছেন, ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানে নিউইয়র্ক সিটির প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে কোনো প্রকার সহযোগিতা করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক সিটি অভিবাসীদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ শহর। তাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। বহির্বিশ্বে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও প্রাচীনতম সংবাদপত্র ‘ঠিকানা’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘ঠিকানা টিভি’র প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীনের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন মেয়র এরিক অ্যাডামস।
১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার নিউইয়র্ক সময় সকাল ১০টায় ‘ঠিকানায় খালেদমুহিউদ্দীন’ ইউটিউবে চ্যানেলে প্রচারিত হয় সাক্ষাৎকারভিত্তিক এ অনুষ্ঠানটি। এ অনুষ্ঠানে খালেদ মুহিউদ্দীনের প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন মেয়র এরিক অ্যাডামস।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ইমিগ্রেশন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন। এতে অনেকেই উদ্বিগ্ন। এই পরিবর্তন বাংলাদেশিসহ অন্যান্য অভিবাসী সমাজে কতটা প্রভাব ফেলবে এবং এই অনিশ্চয়তা কীভাবে মোকাবিলা করবে? – এই প্রশ্নের জবাবে এরিক অ্যাডামস স্পষ্ট ভাষায় বলেন, নিউইয়র্ক শুধু অভিবাসী শহর নয়, এই দেশটি অভিবাসীদের। তবে তিনি বলেন, যারা নথিভুক্ত ও নথিপত্রিহীন অভিবাসীদের যারা অপরাধ সংঘটিত করবে তাদের রাস্তায় থাকা উচিত নয়। অপরাধের জন্য তাদের সাজা ভোগ করতে হবে এবং এরপর এ দেশ থেকে তাদের বিতাড়ন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন এরিক অ্যাডামস।
মেয়র এরিক অ্যাডামস নিউইয়র্কবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, আপনারা আপনাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠান। চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হলে হাসপাতালে পাঠান। আইনি সহায়তার প্রয়োজন হলে, বিশেষ করে কেউ অপরাধের শিকার হলে অবশ্যই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে যান। তারা পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন। কিছু গণমাধ্যম এ সংক্রান্ত ভুল খবর প্রচার করছে।
নিউইয়র্কের অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কতটুকু অবদান রাখছে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, বাংলাদেশি কমিউনিটি বড় হচ্ছে। তারা নিউইয়র্ক সিটির উন্নয়নে, বিশেষ করে শিক্ষা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় অসমান্য ও শক্তিশালী ভূমিকা রাখছেন। এটি গর্ব করার মত বিষয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশিরা কঠোর পরিশ্রমী। তাদের ধর্মীয় ও পারিবারিক বিশ্বাস প্রশংসনীয়। তারা জননিরাপত্তায়ও অবদান রাখছেন। তাদের এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশি কমিউনিটি নিরবে বড় হচ্ছে এবং একটা সময় তারা বড় কমিউনিটিতে পরিণত হবে।
অনেকেই বলছেন নিউইয়র্ক আর নিরাপদ শহর নয়, হেইট ক্রাইমসহ জননিরাপত্তা নগরবাসীর উদ্বেগের মূল কারণ। বাংলাদেশিসহ অন্যান্য কমিউনিটির জন্য কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে? – এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মেয়র এরিক অ্যাডামস দ্বিমত পোষণ করে বলেন, নিউইয়র্ক আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে বড় নিরাপদ সিটি। তিনি যোগ করেন, নিউইয়র্ক সিটিকে বড় কয়েকটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ট্রেনের মধ্যে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা, সাবওয়েতে কাউকে ধাক্কা, ছুরিকাঘাতে তিনজনকে হত্যা এবং বিভিন্ন স্থানে গুলি চালানোর ঘটনা অন্যতম। এসব অপরাধের খবর মানুষের চেতনাকে নাড়া দিয়েছে। এসব ঘটনা অনেক সময় আমাদের সাফল্যকে ঢেকে দেয়। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের যেমন বড় শহর, তেমনি প্রতিদিন এই শহরে ৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন যাত্রী সাবওয়েতে চড়েন। সেখানে গড়ে মাত্র ছয়টি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা এই শহরকে আরো নিরাপদ করার চেষ্টা করছি। আমরা বিভিন্ন সড়ক থেকে অবৈধ ২০ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছি। গোলাগুলি দ্বিগুণ সংখ্যায় কমেছে। কমে গেছে খুনের ঘটনাও। গত ৪০ বছরের মধ্যে ব্রুকলিনে গোলাগুলির ঘটনা সর্বনিম্ন পর্যায়ে। তিনি বলেন, মানুষ যাতে এই শহরে নিরাপদ বোধ করে এজন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। রাত ৯টার পর ভোর ৫টা পর্যন্ত সাবওয়ের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ অসহায়ত্ব দেখাচ্ছে। একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হিসাবে বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? মেয়র দৃঢ়তার সাথে এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, সিটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সড়ক থেকে ৮০ হাজারে বেশী অবৈধ গাড়ি সরিয়েছি। ১৪০০-এর বেশী অবৈধ অস্ত্র জব্দ করেছি।
বহু বাংলাদেশি ব্যবসায়ী তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কোভিড-১৯ মহামারী ও মূদ্রাস্ফীতির কারণে তাদের ব্যবসায় এখনো মন্দাভাব বিরাজ করছে। তাদের সহায়তা দিতে নিউইয়র্ক সিটি কি করছে? এই প্রশ্নের জবাবে মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর পর সব ব্যবসা ধ্বংস হয়েছে। বিশেষ করে রেস্টুরেন্টে এবং খুচরা বিক্রেতারা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিষেবা প্রশাসন (এসবিএস) রয়েছে। তারা ক্ষুদ্র ব্যবসা এগিয়ে নিতে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। এ পর্যন্ত ৫০ মিলিয়ন ডলার ফি ও জরিমানা বাবদ ছাড় দেওয়া হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তিনি বলেন, আমরা এসব প্রতিষ্ঠানগুকে ধারাাহিকভাবে সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু অনেকেই এই সেবা নিচ্ছেন না। তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিষেবা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, অনেকে ইচ্ছাশক্তির অভাবে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারছেন না।
এ অনুষ্ঠানটির নির্বাহী প্রযোজক ছিলেন ঠিকানা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিওও মুশরাত শাহীন অনুভা ও রুহিন হোসেন।