বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:০০ অপরাহ্ন
Uncategorized

আমেরিকার গড়পড়তা মানুষের জীবন আমাদের মতো নয়

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

শীতকালটা যেতে না যেতেই আমেরিকার মানুষজন একটু পাগলে যায়, বিশেষত ইস্ট কোস্ট বা মিড্ ওয়েস্ট-এর লোকজন। কয়েকটা মাস বরফের চাদরের তলায় চাপা থেকে ঠান্ডায় ঠকঠকিয়ে কাঁপার পর সেটাই স্বাভাবিক। জুন-জুলাই-অগাস্ট যাকে বলে ফূর্তির পিক সিজন। কারোর ক্যালেন্ডারে একটাও উইকেন্ডও  খালি থাকে না। হয় তল্পিতল্পা গুটিয়ে বেরিয়ে পড়া, নইলে আজ এ বাড়ি কাল ও বাড়ি নেমন্তন্ন, পার্টি, পিকনিক। আর সেই তূরীয় দশার মধ্যে ৪ জুলাই অর্থাৎ আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস উদযাপন একটা দেখার জিনিস হয় বটে।

গত বছর কিছুই টের পাওয়া যায়নি। কারো আসা যাওয়া কোনো দাগ কাটেনি। না বসন্ত, না স্বাধীনতা। নিউ ইয়র্ক শহর তার উঁচু উঁচু বিল্ডিংগুলো নিয়ে মৃতদেহের মতো পড়েছিল। ৪ জুলাই কোথাও কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। প্যারেড বেরোয়নি, ইস্ট রিভার-এর ওপর Macy’s এর জগদ্বিখ্যাত ফায়ার ওয়ার্কস হয়নি। এবছর পারদ এবং উত্তেজনার পারদ দুইই তুঙ্গে। কে কাকে শেষ পর্যন্ত টেক্কা দেবে বলা যাচ্ছে না।

আর একমাস পরে আমরা পনেরোই অগাস্ট প্রায় এভাবেই ঘটা করে পালন করবো। কিন্তু স্বাধীনতা দিবস উদযাপন আর স্বাধীনতা উদযাপন কি এক?

গড়পড়তা আমেরিকানরা আমাদের মতো। তারা ইতিহাসেও নেই, ভূগোলেও নয়। কয়েক বছর আগে এখানকার একটি চ্যানেল তাদের সমীক্ষায় জানিয়েছিল, আমেরিকা কোন দেশের কাছ থেকে স্বাধীন হয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর নাকি অনেক নাগরিক দিতে পারেনি। (স্বীকার করে নেওয়া ভালো, সেটা জেনে এক বিজাতীয় আনন্দ হয়েছিল – কারণ তার কদিন আগে NDTV-তে একটি অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত নিয়ে ভারতীয়দের জ্ঞানের পরাকাষ্ঠা অনেকের মতো আমাকেও স্তম্ভিত করেছিল। আনন্দটা এক ধরণের আমরা-ওরা মানসিকতাজাত – আমরা যেমন জানি না ওরাও জানে না গোছের!)

আমেরিকার গড়পড়তা মানুষের জীবন আমাদের মতো নয়। আমাদের স্বাধীনতার ধ্যানধারণার থেকে অনেক যোজন দূরে। এখানে যে কেউ তার বাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে রাখতে পারে। জাতীয় পতাকা দিয়ে বানানো অন্তর্বাস (এখানে অসম্ভব জনপ্রিয়) পরিধান করে বিচে ঘুরে বেড়াতে পারে। প্রকাশ্যে চুমু খেতে পারে। একটি মেয়ে একাকী বারে বসে নির্ভয়ে মদ্যপান করতে পারে। দেশে যা অনেক কিছু করার কথা আমরা ভাবতেও পারি না, তা অনায়াসে পারা যায়।

এতো ছোটোখাটো পারা। সবথেকে বড়, নিজের মতো করে বাঁচতে পারা। স্কলারশিপ নিয়ে নামজাদা উনিভার্সিটিতে পড়তে আসা ছাত্র পেট্রল পাম্পে তেল ভরার কাজ করতে পারে; ট্যাক্সি চালাতে পারে; আর্থিক মন্দায় কাজ খোয়ানো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কাজ করতে পারে; তালিকাটা দীর্ঘ। এতে কারো বিন্দুমাত্র সম্মানহানি হয় না। কেউ তাকে ছোট চোখে দেখে না। সমাজে কৌলিন্য কমে না। স্বাধীনতার উদযাপন। ফায়ার ওয়ার্কস-এর আলোর ঝলকানি তো শুধু একদিনের!

বিদিশা রায়

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com