আমাজন রেইনফরেস্ট কিংবা আমাজনে জঙ্গল শুধু পৃথিবীর বৃহত্তম বনাঞ্চলই নয়; জীববৈচিত্রের ঘনত্বের বিচারেও শীর্ষ অবস্থানে আছে এই বনাঞ্চল। প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বছরের পুরনো এই জঙ্গলের মাঝ দিয়েই বয়ে গেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত অ্যামাজন জঙ্গলের রহস্যঘেরা বৈশিষ্ট্য জেনে নিন-
আমাজন জঙ্গল মূলত দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী বিদৌত অঞ্চলে অবস্থিত বিশাল বনভূমি। অ্যামাজন জঙ্গল আয়তনে এতো বিশাল যে রাজনৈতিকভাবে এর উপর নিয়ন্ত্রণ আছে ৯টি দেশের। বিজ্ঞানীদের গবেষণামতে, এ জঙ্গল এর সৃষ্টি হয়েছিলো আনুমানিক প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বছর পূর্বে।
এর আগে ভূপৃষ্ঠের টেকটনিক প্লেটগুলো চলনের ফলে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা এই দু’টি ভূখণ্ডের মধ্যকার দূরত্ব বাড়তে থাকে। দুই মহাদেশের মধ্যকার আটলান্টিক মহাসাগর এর আয়তনও একইসঙ্গে বৃদ্ধি পায় এবং পৃথিবীর প্রান্তীয় এলাকার তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
এর ফলে আমাজন নদীর অববাহিকায় এই বিশাল বনাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। প্রায় ২ কোটি বছর সময় লেগেছিলো আমাজনের পূর্ণাঙ্গ জঙ্গলে পরিণত হতে। আয়তনে আমাজন ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার বা ২১ লাখ বর্গমাইল। আমাজন বিশ্বের বৃহত্তম জঙ্গল। যদি আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হয়, তবে অ্যামাজন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট বা প্রান্তীয় বর্ষাপ্রবণ বনাঞ্চল।
আমাজন জঙ্গল এর উপর মূলত ৯টি দেশের রাজনৈতিক আধিপত্য আছে। এর মধ্যে ব্রাজিল এর নিয়ন্ত্রণ আছে শতকরা ৬০ ভাগ, পেরুর নিয়ন্ত্রণে শতকরা ১৩ ভাগ, শতকার ৮ ভাগ বলিভিয়ার নিয়ন্ত্রণে, কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলার আছে যথাক্রমে ৭ এবং ৬ ভাগ নিয়ন্ত্রণ।
অন্যদিকে গায়নার নিয়ন্ত্রণে আছে শতকরা ৩ ভাগের কিছু বেশি এলাকা। সুরেনিয়াম এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শতকরা আড়াই ভাগ, ফ্রেঞ্চ গায়না এবং ইকুয়েডর এর রয়েছে যথাক্রমে শতকরা ১.৪ এবং ১ ভাগ নিয়ন্ত্রণ। বিশ্বের বৃহত্তম প্রান্তীয় জঙ্গলের বুক চিরে বয়ে চলেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমাজন নদী।
এ নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার। তবে পানি প্রবাহের দিক দিয়ে আমাজন বিশ্বের বৃহত্তম নীল নদের থেকেও এগিয়ে। প্রতি সেকেন্ডে এই নদীর মোহনা দিয়ে প্রায় ২১ লিটার পানি আটলান্টিক মহাসাগরে গিয়ে পড়ে এছাড়াও অ্যামাজন নদীর অববাহিকাও আয়তনের হিসাবে পৃথিবীতে বৃহত্তম।
আয়তনে ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটার এর অ্যামাজন সৃষ্টিলগ্ন থেকেই মানুষের কাছে এক রহস্যের নাম। অ্যামাজন এর জন্ম হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের কয়েকশ’ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত আন্দিজ পর্বতমালায় অথচ এটি প্রশান্ত মহাসাগরে মিলিত হওয়ার বদলে প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার ঘুরে আটলান্টিক মহাসাগর এ মিলিত হয়েছে।
জীববৈচিত্রের ঘনত্বের দিক দিয়ে আমাজন পৃথিবীর শীর্ষ স্থানের অধিকারী। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত অঞ্চলগুলোর মধ্যে ৪০ হাজার প্রজাতির প্রায় ৩ হাজার ৯০০ কোটি উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ ছাড়াও প্রায় ১৫০০ নতুন প্রজাতির পাখি, প্রায় ৫০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২ হাজার ২০০ প্রজাতির মাছ, প্রায় ৪০০ প্রজাতির সরীসৃপ আছে।
সেইসঙ্গে প্রায় ৫০০ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং প্রায় ২৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়ের অস্তিত্ব রয়েছে এই জঙ্গলে। জীববৈচিত্র এর পাশাপাশি আমাজনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় ৫ শতাধিক আধিবাসী গোত্রের অবস্থান। এর মধ্যে প্রায় ৫০টি গোত্র এখনো সভ্যতার ছোঁয়া পাইনি বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
তবে বর্তমানে অপরিকল্পিতভাবে বন নিধনের কারণে দিন দিন আমাজন তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে এবং এর প্রভাব পড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে। তাই আমাজন রক্ষায় এখনই বিশ্বমহলকে সোচ্চার হওয়ার দাবী জানিয়ে আসছেন পরিবেশ বিশ্লেষকরা।