যারা বিয়ে করেছেন কিন্তু এখনো স্পাউসের গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করেননি, তাদের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ এখন আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যেই মিলছে গ্রিনকার্ড। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ইমিগ্রেশন-ব্যবস্থায় এটি একটি আমূল পরিবর্তন। বিষয়টিকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন খ্যাতনামা অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমি আমার ক্লায়েন্টের স্পাউসের জন্য এখান থেকে স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্টমেন্ট করার ফাইল করেছিলাম। ফাইল করার মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে তার গ্রিনকার্ড হয়েছে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক খবর। অনেকেই মনে করেন, এখানে আসার পর স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্ট করতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে। আর দেশে থেকে হলে তা আরও বেশি। আগে এ নিয়ে অনেকেই অনেক টেনশনেও থেকেছেন। কিন্তু এখন বিয়ে যে দেশেই হোক না কেন, সেই দেশের আইন অনুযায়ী বিয়েটি সরকারি খাতায় নথিভুক্ত হলে সেটি বৈধ বিয়ে। আর বৈধ বিয়ে হয়ে থাকলে তার স্পাউস যদি এখানে থাকেন, তাহলে এখান থেকে তার লিগ্যাল স্ট্যাটাস থাকলে স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে পারেন।
যদি স্পাউস এখানে নাও থাকেন, অর্থাৎ বাংলাদেশে থাকলেও তাকে বাংলাদেশ থেকে বৈধ ভিসা নিয়ে এখানে আসতে হবে। আসার পর এখান থেকে স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্ট করা যাবে। তবে মনে রাখতে হবে, নিজেরা নিজেরা বিয়ে করলে বা মুখে মুখে বিয়ে করলে হবে না। বিয়েটি অবশ্যই রেজিস্টার্ড হতে হবে।
সূত্র জানায়, যারা যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ে করেছেন, তারা এখান থেকেই বিয়ের সব নথিপত্রসহ স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্ট করার জন্য আবেদন করতে পারবেন। যারা বাংলাদেশে বা অন্য দেশে আছেন, এখানে বৈধ ভিসা নিয়ে আসতে হবে। এখানে আসার পর স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্ট করার পর আবেদন করতে পারবেন। আবেদনটি অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ আবেদন হতে হবে, কোনোভাবেই অসম্পূর্ণ আবেদন জমা দেওয়া যাবে না। কারণ তখনই বেশি সময় লাগে। একটি ফাইল একবার রিভিউ করার পর অফিসার যদি দেখেন প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টও আছে, তাহলে সেই ফাইল প্রসেসিং দ্রুত শুরু হয়।
যদি দেখা যায় নথিপত্র নেই, তখন রিকোয়েস্ট ফর ফার্দার এভিডেন্স আসতে পারে। এটি এলে সেটি আবেদনকারী আবার গোছগাছ করবেন, এরপর পাঠাবেন, সেটি আবার অফিসারের কাছে যাবে, এরপর আবার প্রক্রিয়া শুরু হবে। সব মিলিয়ে সময় অনেক বেশি লাগবে। তাই অ্যাটর্নিরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে যে যখনই যে ফাইল করবেন, তা যেন একটি পূর্ণাঙ্গ ফাইল হয়। যারা বোনাফাইড বিয়ে করেছেন, তারা বিয়ের কাবিননামা, ম্যারেজ সার্টিফিকেট, বিয়ের ছবি, বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি, হানিমুনে গেলে সেসব ছবিসহ দুই পরিবারের সঙ্গে ছবি থাকলে সেসব ছবিও দিলে ভালো হবে। মোটকথা আসল বিয়ে প্রমাণ করার জন্য যা যা লাগে, সবকিছুই দিতে হবে। এতে করে সহজ হবে। এ ছাড়া বিয়ের পর নবদম্পতি যদি একসঙ্গে থাকেন, বাসা-বাড়ি থাকে, ব্যাংক হিসাব থাকে, সেগুলোও প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যেতে পারে।
সূত্র আরও জানায়, বিয়ের পর স্পাউসের জন্য আবেদন করার পর ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ইন্টারভিউ সবই হবে। ইন্টারভিউতে পাস করলে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে গ্রিনকার্ড চলে আসবে। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে সব হয়ে যাবে।
এটি কন্ডিশনাল গ্রিনকার্ড। দুই বছরের জন্য দেওয়া হয়। দুই বছর পর ১০ বছরের জন্য স্থায়ী গ্রিনকার্ড পাবেন, যদি বিয়ের সম্পর্ক বজায় থাকে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১০ বছরের গ্রিনকার্ড পেতে এবং সময়মতো আবেদন করলে সিটিজেনশিপ পেতেও বেশি সময় লাগবে না। তবে মনে রাখতে হবে, গ্রিনকার্ড পাওয়ার পর কোনো ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না। অপরাধ করলে অনেক বড় বিপদ আসতে পারে। এখন সবাইকে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। গ্রিনকার্ড পাওয়ার পর দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ভালো না থাকলে, বনিবনা না হলে বিবাদে জড়িয়ে ও পুলিশ ডাকাডাকি করে অ্যারেস্ট হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটানো যাবে না। একে অপরের প্রতি সহিংস হওয়া যাবে না। প্রয়োজনে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কিন্তু কোনো ধরনের অপরাধ করা যাবে না। তাহলে সিটিজেনশিপের আবেদন ডিনাই হতে পারে।