রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

অ্যামেরিকাতে উচ্চ শিক্ষায় আইগ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ লাখ ডলারের বৃত্তি

  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ মে, ২০২১

বহুজাতিক মার্কিন সমাজে বাংলাদেশীদের এগিয়ে চলার অভিযাত্রায় যুক্ত হলো আরেকটি অধ্যায়। এজন্য ইতিহাসের অংশ হলেন কঠোর পরিশ্রমী এবং মেধাবী একজন অভিবাসী প্রকৌশলী। তিনি হলেন- যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি সংলগ্ন ভার্জিনিয়ায় বসবাসরত ‘ম্যাজিকম্যান’ খ্যাত ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভার্জিনিয়ার ভিয়েনায় অবস্থিত ‘আই গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি’র (ইনোভেটিভ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি তথা আইজিইউ) পুরো দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। তার হাত ধরেই এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে একটি ইউনিভার্সিটির মালিকানা অর্জনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো নতুন এক অধ্যায়ের যাত্রা। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন যাত্রার উদ্বোধন করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।

এ প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার হানিপ বলেন, ‘দেখুন উচ্চ বেতনে চাকুরি পাওয়ার জন্য আপনার বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু কেবল ডিগ্রিই আপনাকে চাকুরির নিশ্চয়তা দেয় না। যেমনটা আমাকে দেয়নি ২০ বছর আগে। বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি থাকার পরও আমি এখানে স্বল্প পারিশ্রমিকের কাজ, অর্থাৎ ‘অড জব’ করতাম। সে সময় আমি অনুভব করেছি আমার এখানকার বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি থাকলে হয়তো আমি উঁচুমানের এবং অনেক বেশি বেতনের চাকুরি পাব।’

আইজিইউ এর চেয়ারম্যান এবং সিইও আবুবকর হানিপ জানালেন, “প্রায় ৫০ হাজার ডলার ঋণ নিয়ে আমি কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করলাম। সর্বোচ্চ গ্রেড নিয়ে আমি পাশ করার পরও সাাথে সাথে চাকুরি পাইনি। ফের ফিরে গেলাম অড জবে, জীবন চালিয়ে নেবার সংগ্রামে। কিন্তু আমি থেমে যাইনি, হতাশও হইনি। বেশ কিছুদিন পরে আমি ঠিকই আইটি জবে ঢুকতে পেরেছি স্কীল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং সম্পন্ন করে। তখন আমি বুঝলাম, ডিগ্রি দরকার, কিন্তু শুধু ডিগ্রি দিয়েও একজন তার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে না এই দেশে, যতক্ষণ না তার স্কীল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। সেই মানসেই আমি ১৫ বছর আগে ‘পিপল এন টেক’ নামক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করি, যার মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার অভিবাসী এখন উচ্চ বেতনে চাকুরি করছেন। সেই ‘পিপল এন টেক’র অভিজ্ঞতাই আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য এতদিন স্বপ্ন দেখিয়েছিল। আজ সে স্বপ্ন পূরণ হলো।”

তিনি বলেন, ‘এখন আমি এবং ভার্সিটি-টিম বেশ গর্ব করেই বলতে পারছি যে, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চাকুরিতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা ক্যারিয়ার সহায়তা দেব। কেননা সেই ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বা সুবিধাদি আমরা এরই মধ্যে অর্জন করেছি পিপল এন টেকের মাধ্যমে। আর এজন্যেই আমাদের শিক্ষকরা শুধু স্কলার নন, তারা ইন্ডাস্ট্রি প্র্যাকটিশনারও, যাদের রয়েছে চার থেকে ৩০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা।’

আবুবকর হানিপ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের তিনটি প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে রেমিটেন্স, গার্মেন্টস ও এগ্রিকালচার। কিন্তু ইনফরমেশন টেকনোলজিও (আইটি) দেশের অর্থনৈতিক চেহারা আরও দ্রুত পাল্টে দিতে সক্ষম। এজন্য বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে সঠিক আইটি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিদেশে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে যেখানে বাংলাদেশিরা এসে চাকরি করতে পারেন। এমনকি বাংলাদেশে থেকেও একজন ব্যক্তির প্রতি মাসে ২/৩ লাখ টাকা উপার্জন করা সম্ভব।

কঠোর অধ্যাবসায় আর উদ্ভাবনী-মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে প্রবাসে উদ্যমী বাংলাদেশিদের আমেরিকার স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে অন্যতম অবলম্বনে পরিণত হওয়া আবু হানিপ বলেন, আইটি ক্ষেত্রে ভারত যে জায়গাটি দখল করেছে, বাংলাদেশও তা করতে পারে। এজন্য গ্র্যাজুয়েশনের আগেই দরকার হাতে-কলমে শিক্ষাদান। এতে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পও আরও বেগবান করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

সঙ্গত কারণেই কাগজপত্রের স্বাক্ষর-অনুস্বাক্ষর এবং রাষ্ট্রীয় প্রটোকল মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই শুধু নয় সমগ্র প্রবাসে সুধীমহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যেমনটি হয়েছিলো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এ পরিণত করার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালনকারী কানাডার ভ্যাঙ্কুবারের রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালামকে নিয়ে। কারণ, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বার্ষিক দুই লাখ ডলার বৃত্তি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান, ব্যবসা ও প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে কাঙ্খিত একটি শিক্ষাঙ্গণ হিসেবে বিবেচিত। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মাস্টার অব সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (এমএসআইটি), মাস্টার অব সায়েন্স ইন সাইবার সিকিউরিটি ও মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) এ উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া যায়। এছাড়াও আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যাচেলর অব সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (বিএসআইটি) ও ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ)। এছাড়া কম্পিউটার ও আইটি বিষয়ে বেশ কিছু সার্টিফিকেট কোর্সও রয়েছে।

প্রকৌশলী আবুবকর হানিপ যুক্তরাষ্ট্রে ‘পিপল এন টেক’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী। এই ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে মার্কিন আইটি সেক্টরে গত দেড় দশকে ৭ হাজারের অধিক প্রবাসীকে উচ্চ বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন ইঞ্জিনিয়ার হানিপ।

জানা গেছে, গত ১২ বছরে ৪ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ শতাধিক। এরমধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীর (ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট) সংখ্যাই বেশি। প্রকৌশলী আবুবকর হানিপ এই ভার্সিটির পরিচালনা-পর্ষদের প্রধান এবং মালিকানায় আসার পর শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন এনে সকল ডিগ্রিধারীকে উপযুক্ত চাকুরি পাবার আগ পর্যন্ত সহায়তা আর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, শিগগিরই হেলথ কেয়ার, নার্সিং, ড্যাটা সায়েন্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়েও বেশ কয়েকটি কোর্স চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

আরও জানা গেছে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্যে রয়েছে বার্ষিক দু’লাখ ডলারের স্কলারশিপ। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছে ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। এই স্কলারশিপের জন্যে আবেদন করা যাবে www.igu.edu ওয়েবসাইটে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পিপল এন টেক যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় বাংলাদেশি মালিকানাধীন আইটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠান থেকে দীর্ঘ এ সময়ে যারা চাকরি পেয়েছেন তারা বছরে ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ ডলার বেতন পাচ্ছেন। এদের অধিকাংশই বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রিধারী হলেও পথ-নির্দেশনার অভাবে অড জব (ট্যাক্সি ড্রাইভিং, রেস্টুরেন্ট-কর্মী, সুপার মার্কেট কর্মী, সেলসম্যান, রিসিপশনিস্ট ইত্যাদি) করে দিনাতিপাতে বাধ্য ছিলেন।

ইঞ্জিনিয়ার হানিপ জানালেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটিগুলো থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার পরও একজন এন্ট্রি লেবেলে (শুরুর দিকে) ৪০/৫০ হাজার ডলারের বেশি বেতনে চাকরি পায় না। অনেকেই ঋণ (স্টুডেন্ট লোন) নিয়ে পড়াশোনা করে ভাল চাকরি না পাওয়ার কারণে তা দ্রুত পরিশোধ করতে পারেন না। এজন্য হতাশ হয়ে পড়েন। ফলে ঋণ নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের চেয়ে দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চিন্তায় অনেকে উবার-লিফট, ট্যাক্সি ড্রাইভিংসহ অন্য অড জবকে পেশা হিসেবে নিচ্ছেন।

পিপল এন টেকের প্রতিষ্ঠাতা সিইও এবং আইজিইউ’র চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ আরো বলেন, আই গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষাদান ও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য ক্যারিয়ার সহায়তার যে মডেল তৈরি করেছে, সেটি বাংলাদেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। এজন্য দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে তিনি যৌথভাবে পাঠদানে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সরকারের সাথেও তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করতে আগ্রহী বলে জানান।

প্রসঙ্গত, আই গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি (আইজিইউ) যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, স্টেট কাউন্সিল অব হায়ার এডুকেশন ফর ভার্জিনিয়া, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর স্টেট অথরাইজেশন রিসিপ্রোসিটি এগ্রিমেন্টস, অ্যাক্রিডেটিং কমিশন অব ক্যারিয়ার স্কুলস অ্যান্ড কলেজ-এসিসিএসসি সার্টিফিকেট প্রাপ্ত। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (এসইভিপি) এর আলোকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আই-২০’ ইস্যুর জন্য ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস), মার্কিন সরকারের জে-১ প্রোগ্রাম পরিচালনার জন্য ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ফেডারেল স্টুডেন্ট এইড এর জন্য এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের অনুমোদন রয়েছে আইজিইউ’র।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com
%d bloggers like this: