উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় দেশ অস্ট্রেলিয়া। গত ডিসেম্বরের সরকারি রেকর্ডে দেশটিতে চার লক্ষাধিক ভিসাধারী শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়ন করছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নতুন করে মোট ১ লাখ ৭৯ হাজার আবেদনপত্রের মধ্যে ভিসা দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে।
করোনা–পরবর্তী দক্ষতা ও আর্থিক ঘাটতি পূরণে শিক্ষার্থী ভিসা মঞ্জুরের হার রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। তবুও কিছু বিষয়ে অবহেলা করার কারণে অনেকেই ভিসা পাচ্ছেন না। শিক্ষার্থী ভিসার আবশ্যিক শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে আবেদন করার সময় বেশ কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
শিক্ষার্থী ভিসার একটি আবশ্যিক শর্ত হলো ‘জেনুইন টেম্পোরারি এন্ট্রান্ট (জিটিই)’। অর্থাৎ শিক্ষার্থী ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় এসে আপনি পড়ালেখাই চালিয়ে যাবেন এবং পড়া শেষে নিজ দেশে ফিরে যাবেন, এটা প্রমাণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি ভিসা বাতিল হয়।
এ জন্য ভিসার আবেদনপত্রের সঙ্গে অভিবাসন বিভাগ বরাবর আলাদা করে একটি ‘জিটিই’ স্টেটমেন্ট লিখতে হবে। স্টেটমেন্টে শিক্ষার্থীর সব পারিপার্শ্বিক অবস্থা বর্ণনা করা থাকবে।
এখানে উল্লেখ করতে হবে, কেন আপনার পছন্দের বিষয়ে বাংলাদেশে পড়াশোনা করবেন না; এ বিষয়ের ভবিষ্যৎ কী; অস্ট্রেলিয়াকে বেছে নেওয়ার কারণ; যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবেন, সেটা নির্বাচনের কারণ; পড়াশোনা করার পর বাংলাদেশে কীভাবে এই জ্ঞান কাজে লাগাবেন ও আপনার বাংলাদেশে ফিরে আসার সম্ভাবনা কেন অনেক বেশি (চাকরি বা পারিবারিক ব্যবসা) ইত্যাদি।
বাংলাদেশে আপনার কে কে আছেন, আপনার নামে সম্পত্তি থাকা, বাংলাদেশের চাকরির বাজারে আপনার পড়াশোনার গ্রহণযোগ্যতা, পড়াশোনা শেষ করার পর বাংলাদেশে চাকরি পাবেন, এমন আগাম প্রস্তাবপত্র ইত্যাদি থাকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের যথেষ্ট কাগজপত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়ে খণ্ডকালীন কাজ করা খুবই সাধারণ বিষয় গোটা বিশ্বে। অভিবাসন বিভাগ শিক্ষার্থীদের কাজের জন্য সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা সময়ও দেয় (বর্তমানে কর্মঘণ্টা আরও বেশি থাকলেও আগামী জুন মাসে তা কমিয়ে আনা হবে)। কিন্তু আন্তর্জাতিক শিক্ষাঙ্গন একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক খাত।
তাই অভিবাসন বিভাগ এমন কাউকে ভিসা দিতে চাইবে না, যিনি সে দেশেই কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর কথা ভাবছেন। এ দিকটা নিশ্চিত করতে আবেদন করার সময় আবেদনকারীর টিউশন ফি ও জীবনযাপনের খরচের জন্য তাঁর যথেষ্ট অর্থ রয়েছে, তা দেখাতে হবে অথবা প্রতি মাসে তাঁকে এই অর্থের জোগান কেউ প্রদান করবেন, এমনটাও প্রমাণ করতে হবে জোরদারভাবে। সাধারণ ক্ষেত্রে ১২ মাসের জন্য ৩০ লাখ টাকার বেশি অর্থের জোগান দেখাতে হবে একজন শিক্ষার্থীর জন্য, যা কোর্স অনুযায়ী কমবেশি হবে।
শিক্ষার্থী ভিসার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীকে তাঁর কোর্সের সময়কাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমা আগে কিনে এরপর শিক্ষার্থী ভিসায় আবেদন করতে হয়। স্বাস্থ্যবিমার টাকা প্রতি মাসে অথবা একবারে প্রদান করা যায়।
অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থী ভিসায় আবেদন করার আগে দেশটির কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো কোর্সে আপনাকে ভর্তির সুযোগ পেতে হবে। এরপর তারাই আপনাকে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি ভর্তির প্রমাণপত্র, যা Confirmation of Enrolment (CoE) নামে পরিচিত। এটি ছাড়া ভিসা আবেদন করা যাবে না, করা গেলেও আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যাবে।
ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া যাত্রায় অনেকটাই অনিবার্য। এটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই, খেয়াল রাখতে হবে ইংরেজি দক্ষতার স্কোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ভিসার জন্য এক নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা কোর্স ও প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হলেও ভিসা পেতে আপনাকে আইইএলটিএস–এ ৫.৫ বা পিটিই ৪২ বা সমমানের পেতে হবে।