বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৭ অপরাহ্ন

অস্ট্রেলিয়ায় বেগুনি বসন্ত

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০২৪

একেক দেশে বসন্ত আসে একেক রূপে। কোথাও বসন্ত মানে হলুদ, কোথাও লাল, কোথাও আবার নানা রঙের খেলা। তবে অস্ট্রেলিয়ায় বসন্ত আসে বেগুনি রঙে। বেগুনি চাঁদোয়ার এক শ্বাসরুদ্ধকর প্রদর্শনী চলে শহর থেকে শহরতলীতে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। জীবন্ত এক শিল্পে পরিণত হয় পুরো দেশ। প্রাণবন্ত ল্যাভেন্ডার ফুলের জন্য বিখ্যাত জ্যাকারান্ডা গাছ প্রতি অক্টোবর এবং নভেম্বরে থাকে সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য জ্যাকারান্ডা মৌসুম যেন স্বর্গ।

জ্যাকারান্ডা জাদু

মনে করা হয়, দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয় জ্যাকারান্ডা গাছ (জ্যাকারান্ডা মিমোসিফোলিয়া) ১৯ শতকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবর্তিত হয়েছিল এবং তারপর থেকে এটি দেশের সাংস্কৃতিক এবং প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপে গভীরভাবে মিশে গেছে। এর ইথেরিয়াল সৌন্দর্য যেমন সূক্ষ্ম তেমনি আকর্ষণীয়। প্রতিটি গাছ ভেঁপু আকৃতির ফুলে ভরে যায়, হালকা ল্যাভেন্ডার থেকে গাঢ় বেগুনি পর্যন্ত সে তার রং পাল্টায়। নীল আকাশের বিপরীতে অদ্ভুত এবং প্রায় অবাস্তব একটা প্রভাব তৈরি করে।

জ্যাকারান্ডা

ছবি: সংগৃহীত

রাস্তা, পার্ক, উঠান ভরে যায় অজস্র পাপড়িতে। প্রতিদিনের দেখা এই জায়গাগুলোকেই কেমন যেন স্বপ্নের মতো আশ্চর্যভূমিতে রূপান্তরিত করে! অবশ্য এই কারণেই এই গাছের নাম ‘স্বপ্ন গাছ’ নামে পরিচিত। জ্যাকারান্ডা এসেছে লাতিন ভাষা থেকে। ধারণা করা হয় এর আদিনিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, কিউবা, আর্জেন্টিনা এবং জ্যামাইকা।

বসন্তের প্রেমপত্র

অস্ট্রেলিয়া যেন জ্যাকারান্ডা ছাড়া তাদের বসন্ত চিন্তাই করতে পারে না। তাই এই মৌসুম তারা উদযাপন করে ল্যাভেন্ডার ফুলের ছাউনির নিচে একসঙ্গে হয়। সবচেয়ে বিখ্যাত সমাবেশগুলোর মধ্যে একটি হলো নিউ সাউথ ওয়েলসের ‘গ্রাফটন জ্যাকারান্ডা উৎসব’। ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘতম চলমান ফুল উৎসব এটি। প্রতি বছর হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমীরা একসঙ্গে এই উৎসবে আসেন। স্ট্রিট মার্কেট, লাইভ মিউজিক সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম উপযোগী ছবি তোলার প্রচুর সুযোগ দিয়ে সাজানো হয় এই উৎসব। সবাই এখানে আসে, বেগুনি রঙের গালিচার ওপর ঘুরে বেড়ায়, বেগুনি রঙের ছাউনি মাথায় নিয়ে হেঁটে হেঁটে বসন্তের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

ব্রিসবেনে, নিউ ফার্ম পার্কে বসন্ত উদযাপন করতে স্থানীয়রা বেগুনি চাঁদোয়ার নিচে পিকনিক করতে একত্রিত হয়। তাদের আনন্দে-উৎসবে পার্ক হয়ে উঠে ভীষণ রকম প্রাণবন্ত। নর্থ সিডনিতে দেশের সবচেয়ে আইকনিক জ্যাকারান্ডা কিছু রাস্তাও রয়েছে, যেমন কিরিবিলিতে- McDougall Street-এ সারি সারি জ্যাকারান্ডা গাছ দেখে মনে হবে রাস্তার ওপর বেগুনি ছাদ। এখানে সিডনির হারবার ব্রিজ তৈরি করা জ্যাকারান্ডাসের নিখুঁত শট ক্যাপচার করতে প্রতিদিন ভিড় জমে।

সিডনি

ছবি: আর্বান লিস্ট সিডনি

জ্যাকারান্ডা সিজন ক্যাপচার করা

ফটোগ্রাফার, শিল্পী এবং প্রকৃতিপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে জ্যাকারান্ডা মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করে, বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ লেন্সে ক্যাপচার করে ফুলের ছবি-ছড়িয়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সূর্যাস্তের বিপরীতে বেগুনি গাছ, ঝরে পড়া পাপড়ির কম্বলে মোড়ানো পথ আর জ্যাকারান্ডা ছাদে আধো স্বপ্ন আধো জীবন্ত হয়ে উঠে পুরো দৃশ্য।

জ্যাকারান্ডাসের বেগুনি মেঘ অস্ট্রেলিয়ার ঝকঝকে নীল আকাশকে আরও সুন্দর করে তোলে। তাই প্রতিদিন আমি যখন এই বেগুনি মেঘের নিচে হাঁটি, প্রতিবার আমি থামি-থামি বা এই মেঘ আমাকে থামায়, প্রতিবার আমাকে জীবনের মিষ্টি অস্থিরতার কথা মনে করিয়ে দেয়।

ক্ষণস্থায়ী, প্রাণবন্ত অথচ রহস্যময় কেমন একটা স্বপ্নের মতো এই সময়টা, যে সময়টা আমরা কখনই শেষ করতে চাই না। জ্যাকারান্ডা আসে, চলেও যায়, চোখে একটা ঘোর রেখে যায়। জীবনের মতো সুন্দর এই জ্যাকারান্ডা। সময়টা খুব অল্প কিন্তু ভীষণ সুন্দর।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com