শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫১ অপরাহ্ন
Uncategorized

অম্রতসরের অনিন্দসুন্দর স্বর্ণ মন্দির

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১

হরমন্দির সাহিব বা দরবার সাহিব কিংবা স্বর্ণ মন্দির, শিখদের সবচেয়ে পবিত্র তীর্থস্থান। এই মন্দিরটি চতুর্থ শিখ গুরু রাম দাস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। এর অবস্থান পাঞ্জাবের অমৃতসরে এবং বিশ্বের যত শিখ ধর্মালম্বী আছে তাদের সিংহভাগই এই শহরের। শিখদের চতুর্থ ধর্মগুরু ‘গুরু রাম দাস’ ১৫৭৭ এর সময় এর প্রতিষ্টা করেন এবং পঞ্চম ধর্মগুরু অর্জন দেব জি এর নকশা করেন। মন্দিরের ভেতরে ‘আদিগ্রন্থ’ স্থাপন করা হয়, যা শিখদের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ। এই মন্দির শুধু শিখদের জন্য নয়, বরং সব ধর্ম, জাতি, শ্রেণী, পেশার মানুষদের জন্য উন্মুক্ত এবং ৪ টি দরজা তারই বহিঃপ্রকাশ। প্রত্যেকদিন প্রায় ৩৫,০০০ লোক এখানে আসেন এবং বিনামূল্য খাওয়া-দাওয়া এবং রান্নার কাজে সেচ্ছায় সহযোগিতা করে থাকেন।

অম্রতসরের অনিন্দসুন্দর স্বর্ণ মন্দির

অম্রতসরের অনিন্দসুন্দর স্বর্ণ মন্দির
অম্রতসরের অনিন্দসুন্দর স্বর্ণ মন্দির

হরমন্দির সাহেব এর মানে ঈশ্বরের মন্দির। গুরু অমর দাস জি, গুরু রাম দাসকে শিখধর্মীদের জন্য মন্দির তৈরীর নির্দেশ দেন। পরে ১৫৭৮ সালে গুরু রাম দাস, শিখদের দের নিয়ে বর্তমান ট্যাংকটি খনন করেন এবং অমৃতসর নাম দেন। পরে জনপদের নাম ও সেই নামেই প্রতিষ্ঠা লাভ করতে থাকে এবং আজও সেই নামেই সারা বিশ্বের মানুষ।

হরমন্দির সাহিব বা স্বর্ণ মন্দির

হরমন্দির সাহিব বা স্বর্ণ মন্দির

কার জমির উপর দাঁড়িয়ে আছে এই মন্দির তা নিয়ে দুটি গল্প প্রচলিত আছে। একদলের বিশ্বাস তুং গ্রামের কাছ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে এই জমি কেনা হয় অন্য দলের বিশ্বাস সম্রাট আকবর গুরু রাম দাসের স্ত্রীকে এই জমি দান করেন। পরে ১৫৮১ সালে গুরু অর্জন মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং সেই সময় জলাশয়টি শুকনো রাখা হয়। দীর্ঘ আট বছরে প্রথম ধাপের মন্দির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়।

গুরু অর্জন মন্দিরটিকে নিচে স্থাপন করেন, যেখানে অন্যান্য ধর্ম মন্দির যথাসম্ভব উচুতে স্থাপন করা হয়। যাতে প্রত্যেকে তার অহংকার ছেড়ে সাধারণের কাতারে এসে মন্দিরে প্রবেশ করে। ১৫৮৯তে ইট দিয়ে মন্দির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। গুরু অর্জন লাহোরের সূফি মিয়ান মীর মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বলে বিশ্বাস করা হয়, এবং বহুমতকে স্বাগত জানানো হয়। পরে উদ্বোধনের পর পুলে পানিপূর্ণ করা হয়।

১৬ই আগষ্ট, ১৬০৪ তে হরমন্দির সাহিব-এ প্রথম আদিগ্রন্থ স্থাপন করা হয় এবং বাবা বুদ্ধকে প্রথম গ্রান্থি হিসাবে নিয়োগ পান। পরে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এই মন্দির সবার নজরে আসে। মূঘল শাসনামল কিংবা ইংরেজ শাসনামল সর্বদা শিখদের প্রভাবিত করেছিল।

১৮০৯ সালে রণজিৎ সিং মার্বেল এবং কপার দিয়ে সজ্জিত করেন এবং সেই সাথে মন্দির সুবাধাবাদীদের কাছে থেকে মুক্ত করেন। পরে ১৮৩০ সালে সোনা দান করেন এবং সেই সোনা দিয়ে মন্দিরকে মোড়ানো হয়, সেই মন্দির আজকের ‘গোল্ডেন টেম্পল‘।

হরমন্দির সাহিব বা স্বর্ণ মন্দির সম্পর্কে কিছু অবাক করা তথ্য
স্বর্ণ মন্দির সম্পর্কে কিছু অবাক করা তথ্য
স্বর্ণ মন্দির সম্পর্কে কিছু অবাক করা তথ্য
  • ১. অনুষ্ঠানের সময় প্রায় ২০০,০০০ লোকের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, এবং সব কাজ করে সেচ্ছাসেবী আগত ব্যক্তিগণ। আবার, সব খরচ ভক্তদের দানের থেকে আসে।
  • ২. মন্দিরটি সোনাদিয়ে মোড়াতে প্রায় ১৬২কেজি প্রয়োজন হয়, দান করেন রণজিৎ সিং এবং তখন তার দাম ছিলো ৬৫ লাখ টাকা।
  • ৩. ১৯৯০ সালে মন্দিরটি পুনরায় সোনা আবরণ দেওয়া হয়, এবার ব্যাবহার করা হয় প্রায় ৫০০ কেজি সোনা এবং এখনকার বাজারে তার মূল্য প্রায় ১৪০ কোটিব টাকা।
  • ৪. গৃহস্থালির ব্যবহার্য ২২ ক্যারেট সোনার চেয়ে বিশুদ্ধ সোনা, ২৪ ক্যারেট সোনা ব্যাবহার করা হয়।
  • ৫. পবিত্র গুরু গ্রন্থ সাহিব কে মূল্যবান  সামিয়ানার নিচে রাখা হয়।
  • ৬. বেশিরভাগ দর্শনার্থী শিখ নন, প্রায় ৩৫% মানুম অন্যান্য ধর্মালম্বী। এখানে সব জাতি – বর্ণ – পেশার মানুষদের জন্য চারটি প্রবেশদার উন্মুক্ত।
  • বর্তমান এটি ভারতে অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র, সারাবিশ্ব থেকে প্রতিদিন মানুষ যায় সোনা দিয়ে মোড়ানো এই  স্বর্ণমন্দির এর দর্শন পেতে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com