পৃথিবীর অন্যতম নয়নাভিরাম ও অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ মালদ্বীপ। বিধাতা যেন দুই হাত ভরে প্রকৃতির রূপে সাজিয়েছেন দেশটিকে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, স্বর্গের দ্বীপ, প্রকৃতির কন্যা যেন সৌন্দর্যের রানী। যা দুনিয়াজোড়া মানুষকে মুগ্ধ করে ও টানে। সরল, শান্ত ও মনোরম পরিবেশ মুগ্ধ করে সকলকে। ছোট ছোট দ্বীপগুলো যেন নানান রঙে সেজে পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
ভ্রমণপিপাসু যারা সমুদ্র পছন্দ করেন, নির্জনতায় হারিয়ে যেতে চান, সমুদ্রের অবগাহনে নিজেকে স্নান করাতে চান, প্রকৃতির সুশোভিত ও অপরূপ সৌন্দর্যের সুরা পান করতে চান, তাদের জন্য মালদ্বীপই হচ্ছে আকর্ষণীয় ও আদর্শ স্থান। বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন হাজারের বেশি দ্বীপ বেষ্টিত দেশ মালদ্বীপে। সাগরের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা বিমানবন্দর থেকে নেমেই চোখে পড়বে সারি সারি সি প্লেন, ইয়ট, স্পিডবোট আর বিলাসবহুল জলযান। পর্যটকরা বিমান থেকে নেমেই উঠে পড়েন এসব জলযানে। গন্তব্য নীল সাগরের মাঝখানে ছোট ছোট রিসোর্ট।ঘুরে আসুন মালদ্বীপ
আপনি যদি দু-চারদিন এমন সমুদ্রের পাড়ে একান্তে কিছুটা সময় কাটান কেটে যাবে হৃদয়ের কোনে কোনে জমানো পুঞ্জীভূত বিষাদের মেঘ। চনমনে এক নতুন মানুষ নিয়ে ফিরে আসবেন আপন নীড়ে।
মাত্র দুই দশকে মালদ্বীপ যেন হয়ে উঠেছে উন্নয়নের রোল মডেল। পরিকল্পিত বাসস্থান, নাগরিক সুবিধা, ড্রেনেজ ও নগর ব্যবস্থাপনা, ইউরোপিয়ান ধাঁচের ফুটপাথ ও দোকান, বাড়িঘর, সুন্দর ও বিলাসবহুল নগর বাস, ট্যাক্সি, মোটরসাইকেল সবই পাবেন মালদ্বীপে। এখানকার মানুষগুলোও পর্যটকবান্ধব আর অসম্ভব ভাল। চুরি ডাকাতি ছিনতাই এসব তাদের কাছে বলতে গেলে অপরিচিত। প্রতিটি নাগরিকের ফ্রি বাসস্থান, নারীদের প্রত্যেকের কর্মসংস্থান, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ মালদ্বীপের সামাজিক কাঠামোটাকে বদলে দিয়েছে।ঘুরে আসুন মালদ্বীপ
মালদ্বীপের রাজধানী মালে, আধুনিক শহর হলহুমালে, বিমানবন্দর, বিলিংগিলি, ধোনিদো, আড্ডুসহ বড় বড় শহর, হাসপাতাল, অবকাশ যাপন কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আধিক্য। এগুলোর উন্নয়নের সিংহভাগই সম্পন্ন হয়েছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মাধ্যমে। এখানে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞসহ প্রায় তিনশ বাংলাদেশি ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন। তাদের অনেকেই পরিবার-পরিজনসহ মালদ্বীপে বসবাস করেন। মালদ্বীপে বিশ্বের সেরা সেরা চেইন অবকাশ যাপনকেন্দ্রে বাংলাদেশিরাও কাজ করেন অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে। আর রাজধানী মালে আর হুলহুমালে ভ্রমণে আপনি যদি বাংলা ছাড়া আর কোন ভাষা না জানেন তো কোন সমস্যাই নেই। কারন পথে দু কদম হাঁটলেই আপনার কানে ভাসবে বাংলা কথা। বৈধ অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশির কারনে ছোট্ট এই দেশে যে কোন দোকান, রিসোর্ট, বিচ, হোটেল এমনকি স্পিডবোট, ইয়ট বা যে কোন জলযানে সাগর ভ্রমণেও পেয়ে যাবেন বাংলাদেশি যে কাউকে।
আড্ডু, বিলিংগিলি, হলহুমালে, ধোনিদোতেও ছুটির দিনে তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। মনে হয় এগুলো যেন বাংলাদেশের কোনো এক সমুদ্রসৈকত। মালেতে কখনো কখনো বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবার কখনো কখনো প্রবাসীদের উদ্যোগেও চলে নানান রকমের নাচ-গান, নাটক, যাত্রাপালা, বাউল সংগীত ও ওয়াজ মাহফিল।
বিচে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের ওপর ছেলেমেয়েদের জলক্রীড়া (সার্ফিং)। যখন সুনামি টাওয়ার ঘেঁষে বিশাল এলাকা জুড়ে শুরু হয় মায়াবী গোধূলি, শুরু হয় সূর্যাস্ত রাতের নিস্তব্ধতা, পর্যটকেরা যখন আসেন গোসল পার্কে সমদ্রস্নানে নিজেকে বিলীন করে দিতে নীলাভ প্রকৃতিতে।
এমন অসম্ভব সুন্দর দেশ মালদ্বীপ ভ্রমণে পাশে থাকবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। ভ্রমণে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা এবং আর্থিক দিক মাথায় রেখে ইউএস-বাংলা থাকবে পর্যটকদের পাশে। এর আগে মালদ্বীপ ভ্রমণ ব্য়য়বহুল ও শ্রীলঙ্কা বা ভারতে ট্রানজিট নিয়ে যাওয়ায় খরচ পড়ত অনেক বেশি। ইউ এস বাংলা সরাসরি ফ্লাইট চালু করায় সময় আর দুটোই বাঁচবে বাংলাদেশিদের।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম কেটিভি প্রতিদিনকে বলেন, দশম আন্তর্জাতিক গন্তব্য হিসেবে মালদ্বীপের রাজধানী মালের উদ্দেশ্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। গত ১৯ নভেম্বর থেকে প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে এয়ারলাইন্সটি। অনিন্দ্য সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর আধুনিকতার অপূর্ব মিশ্রণের শহর মালদ্বীপের ভ্রমণকে উপভোগ্য করতে প্রতিজনের ৫৮ হাজার ৯৯০ টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। ২ রাত ৩ দিন থাকা, ঢাকা-মালে-ঢাকা সব ধরনের ট্যাক্সসহ এয়ার টিকিট, এয়ারপোর্ট-হোটেল-এয়ারপোর্ট যাতায়াত, সকালের নাশতাসহ আরও নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা রয়েছে ট্যুর প্যাকেজে। এছাড়া শুধু যাতায়াতের জন্য আসা-যাওয়ার ভাড়া নির্ধারণের জন্য করা হয়েছে ৪৫,৫৪৫ টাকা।
মালদ্বীপ সাগরবেস্টিত হওয়ায় সেখানে গেলে সি ফুড আর অবশ্যই টুনা মাছ খেতে ভুলবেন না। আর আপনি যদি ভাত, ভর্তা, দেশি স্বাদের গরুর কালো ভুনাসহ দেশি খাবারের স্বাদ পেতে চান- কোন সমস্যা নেই। রাজধানী মালেতে বাংলাদেশিদের জন্য গড়ে উঠেছে সম্রাট নামের একটি রেস্টুরেন্ট। বাংলাদেশি মালিকানায় পরিচালিত রেস্টুরেন্টটিতে একবার ঢুঁ মেরে আসতে পাারেন।
পর্যটনের জন্য বিখ্যাত দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র দুই দশমিক তিন মিটার এবং গড় উচ্চতা মাত্র এক দশমিক পাঁচ মিটার। এক হাজার দুই শ’রও বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশটি। মালদ্বীপ নামটি সম্ভবত মালে দিভেহী রাজ্য হতে উদ্ভূত। মালদ্বীপের নামকরণ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ লক্ষ করা যায়। কেউ কেউ দাবি করেন মালদ্বীপ অর্থ হচ্ছে ‘মেল দ্বীপ রাজ’ বা পুরুষশাসিত রাজ্য। মূলত ‘দ্বীপ’ একটি সংস্কৃত শব্দ আর ‘মাল’ শব্দটি দেশটির রাজধানীর নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ঔপনিবেশিক আমলে ডাচরা তাদের নথিপত্রে এ দ্বীপপুঞ্জের নাম মালদ্বীপ বলে উল্লেখ করেন। পরে ব্রিটিশরাও একই নাম ব্যবহার করেন, যা দেশটির স্থানীয় নাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো।ঘুরে আসুন মালদ্বীপ
শ্রীলঙ্কান প্রাচীন সাহিত্য ‘মহাবংশ’-এ মালদ্বীপকে বলা হয়েছে ‘মহিলাদ্বীপ’ বা নারীদের দ্বীপ। তবে অনেকে মনে করেন, মালদ্বীপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত মালাদ্বীপ থেকে, যার অর্থ ফুলের মালার দ্বীপ। সংস্কৃত শব্দ ‘দ্বীপমালা’ শব্দ থেকেই মালদ্বীপ। আবার কেউ কেউ বলেন যে ‘মালে দিভেই রাজে’- এই কথা থেকে মালদ্বীপ শব্দটির উদ্ভব। ‘মালে দিভেই রাজে’- এই কথার অর্থ, ‘দ্বীপরাজ্য’। অনেকে মালদ্বীপকে মহলদ্বীপও বলে। মহল মানে (আরবিতে) প্রাসাদ। দ্বাদশ শতক থেকেই মালদ্বীপে মুসলিম শাসন। ইবনে বতুতা মালদ্বীপ গিয়েছিলেন ১৩৪৩ খ্রিস্টাব্দে। ১১৫৩ থেকে ১৯৫৩ অবধি- এই ৮০০ বছর ৯২ জন সুলতান নিরবচ্ছিন্নভাবে শাসন করেন দ্বীপটি ।
১৯৫৩ সালে সালতানাত-এর অবসান হয় ও মালদ্বীপ হয়ে ওঠে রিপাবলিক। মালদ্বীপের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন আমিন দিদি। তিনি নারী স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। গোঁড়ারা পিছু লাগল। ফলে আমিন দিদি উৎখাত হয়ে যান। এরপর আইনসভা পুনরায় সালতানাত-এর পক্ষে রায় দেয়। নতুন সুলতান হন মোহাম্মদ দিদি। তিনি ব্রিটিশদের সামরিক ঘাঁটি তৈরির অনুমতি দিলে ব্যাপক জনবিক্ষোভ সংঘটিত হয়। ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই মালদ্বীপ ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে।
মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য আপনাকে আগে থেকে ভিসা নেয়ার কোন প্রয়োজন হবেনা। হোটেল বুকিং আর রিটার্ন টিকিট থাকলেই আপনি পেয়ে যাবেন অন অ্যারাইভাল ভিসা। আর ইউএস বাংলার ভ্রমণ প্যাকেজ নিলে সে কাজটি আরও সহজ করে দেবে তারাই।ঘুরে আসুন মালদ্বীপ
মালদ্বীপ পর্যটক নির্ভর এবং আমদানি নির্ভর হওয়ায় সেদেশে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেশি। এছাড়া দ্বীপে অবস্থিত রিসোর্টগুলোর ভাড়াও আকাশচুম্বী। দেশটিতে প্রতি রাতের জন্য কমপক্ষে আপনাকে ৫০০ ডলার থেকে ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত গুনতে হতে পারে। এত ব্যয়বহুল রিসোর্টগুলোতেও আপনাকে বেশ আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। কারন যত ব্যয়বহুলই হোক মনের সাধ মেটাতে এগুলো বছরের বেশিরভাগ সময়ই বুক করে রাখেন বিদেশি পর্যটকরা। না, ভয় পাবেন না। আপনি অল্প খরচেও হোটেল বুক করতে পারবেন। আপনি মালে অথবা হুলহুমালেতে একটু খোঁজখবর নিয়ে হোটেল বুক করুন। আশা করি কক্সবাজারের চেয়েও কম খরচে সেখোনে রাত কাটানোর মত ভাল হোটেল পেয়ে যাবেন।
তো প্রস্তুতি নিয়ে নিন। সপরিবারে ঘুরে আসুন মনে রাখার মত একটি দেশ। ভ্রমণ হোক নিরাপদ ও আনন্দময়।