নীচে আদিগন্ত নীল সমুদ্র, ঝাঁকুনি দিয়ে নামতে থাকে আমাদের প্লেনটা, এরিয়াল ভিউয়ে নীল এজিয়ান সমুদ্রে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে কালো আগ্নেয় শিলার খাড়া পাহাড়। ছোটো ছোট সাদা ঢেউ। আর অজস্র সাদা পালতোলা ইয়ট। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ছোঁব গ্রিসের মাটি। অক্টোবরে পুজোর শেষে গ্রিস যাওয়ার প্ল্যান হল আমাদের। এথেন্সের ইতিহাস তো অবশ্য দর্শনীয়, তবে গ্রিসের এজিয়ান সমুদ্রের ধারেগ্রিসের বিখ্যাত দ্বীপগুলো দেখব না তা হয় না। এক্ষেত্রে সান্তরিনি আইল্যান্ড সেলেবদের ছুটি কাটানো, হলিউড, এবং হালে বলিউডের অনেক সিনেমার শ্যুটিং হয়ে বিখ্যাত হয়েছে। সান্তরিনি বহুদিন ধরেই ধনপতিদের ওয়েডিং ডেস্টিনেশন আর ইদানীং সূর্যাস্তের মুহূর্তে প্রি ম্যারেজ ফোটোশ্যুট হবু দম্পতিদের কাছে এখন বিরাট ক্রেজে পরিণত হয়েছে। তা আথেন্স সান্তরিনি তো আমাদের ট্যুর প্ল্যানে ছিলই।
তবু গ্রিসের ট্র্যাডিশনাল গ্রাম, আর হস্তশিল্প দেখার জন্য আমাদের ঠিক ছিল পারোস্-এ যাব। যতদুর নেট দুনিয়া ঘেঁটে জানা গেল, গ্রিসের আইল্যান্ড ট্রিপে আসলে পর্যটকরা সান্তরিনি মিকোনোস এই হাইপ্রোফাইল দ্বীপগুলোতে বেশি যান, কিন্তু পারোসের কথা কম লোক জানেন। ট্র্যাডিশনাল গ্রামের যে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রাচীনতা আছে, যা আধুনিক শহরে খুব একটা অনুভভ করা যায় না। এর স্বাদ নিতে গেলে পারোস আমাদের যেতেই হবে বুঝতে পেরেছিলাম।
সান্তরিনি থেকে সকালবেলা রওয়ানা দিলাম পারোসের পথে। ব্লুস্টার ফেরিস। চমৎকার সব ব্যবস্থা। আথেন্স থেকে সান্তরিনি এসেছিলাম এই ব্লুস্টারেই। কফিশপ রেস্তরাঁ স্যুভেনির শপ দিয়ে সাজানো বিশাল ফেরি। ডেক ফ্লাইট কেবিন ছাড়াও আছে বিজনেস ক্লাস। দু ঘণ্টার জার্নি কফি স্ন্যাকস খেয়ে দিব্যি কেটে যায়। সব বুকিং আমাদের আগে থাকতেই করা ছিল। হাল্কা শীতের আমেজ মাখা পলিউশন ফ্রি আবহাওয়া, নীল আকাশ আর নীল জলের রূপ মন ভরিয়ে দেয়। জাহাজ এসে দাঁড়ায় পারোস বন্দরে। এই জায়গাটার নাম পারিকিয়া। এমন ব্যাস্ততাবিহীন বন্দর আমি আগে দেখিনি। পারোস একটা ছোট আইল্যান্ড। মাত্র ১৯৫ কিমি এর বিস্তার। লোকসংখ্যাও বেশি নয়।
সারা গ্রিস জুড়ে নীল সাদার অদ্ভুত মিশেল। গ্রিকদের এই ঐক্য দেখার মতো। সমস্ত দেশটাকে এরা নীল সাদায় মুড়ে ফেলেছে। জাতীয় পতাকার রঙ। লাগেজ নিয়ে জাহাজের বাইরে আসি। বুকিং ডট কম-এ আমাদের স্টুডিও ভিলা বুক করা ছিল। মালকিন সহাস্যমুখে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। বছর পঞ্চাশের হাসিখুশি মহিলা। নাম আন্তালিয়া। স্টুডিও ভিলা বুক করে এসেছি অনলাইনে। একটি বড় এসিউভিতে নিজেই আমাদের মালপত্র তুলে স্টিয়ারিংয়ে বসলেন। দুপাশে চওড়া রাস্তা, বড় বড় গাছ, রংবেরঙের বোগেনভিলিয়া তে উজ্জ্বল চারিদিক। রাস্তা বরাবর লেক।
আন্তালিয়ার সঙ্গে গল্প করতে করতে জানতে পারি বড় মেয়েকে নিয়ে তিনি এই ব্যবসা সামলান। ছোট মেয়ে চাকরি করে আথেন্সে। ছুটিতে মা আর দিদির কাছে ঘুরে যায়। কথায় কথায় পৌঁছে যাই আন্তালিয়ার ভিলায়। কী সুন্দর ছবির মতো ভিলা। কাঠের লো হাইটের বাউন্ডারি, ফুলের ভারে নুয়ে পড়া লতা দিয়ে ঘেরা সাদা একতলা কয়েকটি ভিলা। সামনে একফালি বারান্দা, সেখানে বেতের টি টেবিল চেয়ার।
দুধ সাদা ভিলার সাদা মার্বেলের মেঝে, আর সাদা মার্বেল আর নুড়ি পাথরের ম্যুরাল। সাদা খাট বিছানা, পালিশ করা জালনা দরজায় সাদা নেটের ছোট ছোট পর্দা। স্টুডিও ভিলায় কিচেনের সব বন্দোবস্ত থাকে। এখানেও ছোট একটা সুন্দর কিচেন, আভেন, ফ্রিজ ওয়াশিং মেশিন দিয়ে সুন্দর ব্যবস্থা। এত রুচিসম্মত অন্দর সজ্জা দেখে মালকিনের রুচির তারিফ না করে পারি না। আন্তালিয়া পারোসের ম্যাপ নিয়ে আমাদের একটা গাইডলাইন করে দিলেন। আমরা স্নান করে উঠতেই আন্তালিয়া এসে গ্রিক কফি আর ওঁর বানানো আভেন ফ্রেশ কেক আর চিজ নিয়ে এলেন।
সেসবের সদ্ব্যবহার করে রেডি হয়ে আমরা বেরলাম। আন্তালিয়ার ভিলার থেকে মিনিট দশেকের হাঁটা পথে পারিকিয়া বাসস্ট্যান্ড। নানা গন্তব্যে যাবার বাস ছাড়ে এখান থেকে। সেসব টাইমিং এর চার্ট দেখে নিয়ে এগিয়ে চলি। আজ দেখব পানাজিয়া একান্টোপিলিয়া চার্চ। চার্চ অফ হান্ড্রেড ডোরস নামে খ্যাত এটি বিখ্যাত বাইজেনটাইন গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ। চতুর্দশ শতকে তৈরি এই চার্চটির নিরানব্বই দরজা নাকি আবিষ্কৃত হয় আর শততম দরজাটি নাকি খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবার ভিন্নমতে শততম দরজাটি আবিষ্কৃত হয় কনস্ট্যান্টিনোপলের সময়ে। চার্চের বিশাল চওড়া চত্বর, একতলা দোতলা মিলিয়ে অজস্র ছবি, মিউজিয়াম এর মতো সাজিয়ে রাখা।
পাথরের দেওয়াল, যাজক দের ঘর, সুবিশাল ঝাড়লন্ঠন, রুপোর মোমবাতি স্ট্যান্ড আর নিস্তব্ধতা আর শান্ত পরিবেশে বসে থাকতে ইচ্ছা করে বহুক্ষণ। এই বিশাল চত্বর ছাড়িয়ে একটু এগিয়ে গেলেই পারিকিয়া স্কোয়ার। আছে নানান দোকান পাট, এত ডিসিপ্লিন এদের নিঃশব্দে গাড়ি চলছে, পেভমেন্ট দিয়ে লোকজন হাঁটছে। সাইকেল আরোহী প্রচুর। তারা নির্দিষ্ট সাইকেল ট্রাক দিয়ে যাচ্ছে। এমন শান্ত পরিপাটি শহর, অথচ খুব কাছেই বন্দর, সেখানেও একই। সব কাজ হচ্ছে অথচ চিৎকার চেঁচামেচি নেই। আমাদের এসব অবাক লাগে। সারাদিন হইচই, ধাক্কাধাক্কি গাড়ির হর্ন শুনে জরাজীর্ণ আমাদের কান। এখানে স্কুটার সাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘোরা যায়। এমন শান্তির দেশে সাইকেল চালিয়েও মজা।
চারিদিকে ছড়িয়ে আছে অজস্র রোডসাইড ট্রাভার্ন। ফুল আর গাছে ঘেরা, রাস্তার দুধারে চেয়ার টেবল দিয়ে সাজানো। সারা গ্রিস জুড়েই এই সিস্টেম। এমন এক জায়গায় গিয়ে বসি। সমুদ্র থেকে উড়ে আসা হাওয়ায় জ্যাকেট জড়িয়ে আরাম লাগে। বেকড সসেজ, গ্রিলড ল্যাম্ব আর গ্রিক ওয়াইনে চুমুক দিই। পারিকিয়ার অলিগলি দিয়ে হাঁটতে বেশ মজা। সাদা কটেজের মতো সব বাড়ি। নীল জালনা দরজা। বোগেনভিলিয়া সহ নানা ফুলের গাছে ভরা রাস্তা। ছড়িয়ে আছে অজস্র স্যুভেনির শপ। গ্রিসের ডেলফি যাওয়ার পথে দেখেছিলাম তুলোচাষ। গ্রিক কটন খুব বিখ্যাত। তাই সুতির কদর এখানে খুব। সুতির দরি, রাগ, স্কার্ফ, কুশন, বেডকভার পর্দার এত অপূর্ব সম্ভার, দেখে মন ভরে যায়। তবে আজ কিছু কেনাকাটা নয়। পা চালাই বন্দর সংলগ্ন অঞ্চল ঘুরে দেখব বলে। বেলা পড়ে আসছে। ভিউ পয়েন্ট থেকে সূর্যাস্ত দেখব। বন্দর সংলগ্ন টিলা, টিলার মাথায় কান্ট্রিচার্চ। নীচ থেকেই দেখা যায়। গ্রিসের সিজন শেষ হয়ে আসছে, তাই পর্যটক কম।
পাথুরে রাস্তায় সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছে যাই গন্তব্যে। উপর থেকে বন্দর আর সমুদ্র বড় সুন্দর লাগে। এত শান্ত নিরিবিলি বন্দর আগে আর কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। কিছু জাহাজ থেকে মাল নামানো হচ্ছে। বাঁধানো সমুদ্রের পাড়। টিলা থেকে দেখা যায় সারিবদ্ধ খেজুর গাছে সাজানো কালো রাজপথ। ইতিউতি বিয়ার পাব। হাল্কা সুরে মিউজিক বাজছে, পিপাসুদের ভিড়, তবু কোলাহল নেই কোথাও। ধীরেধীরে সূর্যাস্ত হয়। অন্ধকার নামে। বন্দরের লাইট জ্বলে ওঠে। নীচে আলোর মালায় সেজে উঠেছে পারিকিয়া। হু হু ঠান্ডা হাওয়ায় আর উপরে থাকা চলে না। ঝলমলে আলো জ্বালিয়ে বন্দরের দিকে এগিয়ে আসে প্রমোদ তরণী।
ভারী সুন্দর লাগে সে দৃশ্য। ধীর পায়ে নেমে আসি টিলা থেকে। রাত আটটা বাজে। ফিরতে হবে আন্তালিয়ার ডেরায়। যাওয়ার পথে স্থানীয় সুপার মার্কেট থেকে চিকেন আর আলু কিনব। আজ ডিনারে মুরগির ঝোল আর ভাত রান্না হবে। কফিশপে কফি খেয়ে কাছাকাছি স্টোরে ঢুকি। গ্রিসের চিজ আর অলিভ বিখ্যাত। ডেয়ারি সেকশনে রকমারি চিজ দেখে তাক লেগে যায়। তেমনি অলিভ। নানান প্যাকিংয়ের নানারকম অলিভ থরে থরে সাজানো। ছোট একটি সেকশনে আলু, মুরগি, দুধ, পাউরুটি, ভারতীয় মশলাপাতিও চোখে পড়ল। আলু, মুরগি দুধ ডিম পাউরুটি কিনে ঘরে আসি।
স্নান সেরে দুই আভেনে ভাত আর মুরগির ঝোল বানানো, বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে ডিনার করে লেপের তলায়। কাল সকালে ন’টায় বেরতে হবে। ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ি। লোকাল বাসে যাব। নামেই লোকাল বাস, মার্সেডিস বাস। টার্মিনাস থেকে নানান দিকের বাস ছাড়ছে। নাক্সোস যাওয়ার বাস নিই। পাহাড়ি রাস্তা, উইন্ডমিল শস্যখেত, ভিনিয়ার্ড চারিদিকে ছড়ানো। একটু পাথুরে রাস্তা। গ্রিসের এই সাইক্লেদেস দ্বীপপুঞ্জগুলো সৃষ্টি হয়েছে আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে। সমুদ্রের বিচ তাই বালি নয় মিহি পাথরে সৃষ্ট। এখানকার বিচের এই বৈশিষ্ট্য। বিচের তাই নানা রং। কোথাও লাল, বা কালো। পারোসের সাদা মার্বেল খুব বিখ্যাত। এনশিয়েন্ট স্টোন নানা রকম এখানে। নাক্সোসে বাস নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। নাক্সোস একটি ফিসিং হারবার। আর নাক্সোস বিখ্যাত তার নাইটলাইফের জন্য। আছে অজস্র পাব। সামুদ্রিক মাছ খেতে আর সুরাপান করতে বিদেশি টুরিস্টরা ভিড় করে।
তবে এখন প্রায় ফাঁকা। নাক্সোস একটু ব্যয়বহুল। জেলেদের ফেরি থেকে মাছ নিয়ে বড় ফেরিতে তোলা হচ্ছে, নানান প্রান্তে পাঠানোর জন্য। দাঁড়িয়ে আছে মাছ ধরার ট্রলার। সেখান থেকে মাছ তোলা হচ্ছে ছোট জাহাজে। বন্দর ছাড়িয়ে অনেকটা এগিয়ে যাই। আমার সঙ্গীরা এগিয়ে গেলে এক রোড সাইড ট্রাভার্নের চেয়ার টেনে বসে পড়ি। সামনে রাস্তা, ওপারে সমুদ্রের একফালি নীল খাঁড়ি। কিছু নৌকা ইতিউতি ছড়িয়ে। সাহেব মালিক এগিয়ে এলেন আমার দিকে। হুইচ কান্ট্রি? ভাঙা ইংরেজিতে জানতে চান। ইন্ডিয়া শুনে উত্তেজিত গলায় ‘বোস বোস’ বলে কাকে যেন ডাকতে থাকেন। দুটি ছেলে এগিয়ে এলে আমাকে দেখিয়ে ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া বলে আলাপ করিয়ে দেন। দুই বাংলাদেশি কর্মচারী।
আমিও মাতৃভাষা বলতে পেরে দারুন খুশি। বোস ডাক শুনে ভাবছিলাম এদেরও সারনেম বোস নাকি আমার মতো? আসলে মালিক ওদের বস্ বলে ডাকছিলেন। গ্রিক ইংরেজিতে বোস হয়ে গিয়্ছে। কফি খেতে খেতে দুই বাংলাদেশি তরুণের সঙ্গে আলাপ হল। এরা জানাল, হপ্তা খানেকের মধ্যে শুরু হবে তুমুল সামুদ্রিক হাওয়া। জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে উত্তাল সমুদ্রে। তাই এরা সব তখন চলে যাবে আথেন্সে। ডিসেম্বরের প্রথমে ফিরবে বাংলাদেশে৷ এমন ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে লোকাল লোকজন নাকি ঘর থেকেও খুব প্রয়োজন না হলে বেরয় না৷ সাগরের জল থেকে খাঁড়ির মতো জলপথ তার উপরে পাথরের গুহাপথ মতো, সেখানে নানান স্টাইলে ফোটো তুলছে অনেকে। ছড়িয়ে আছে নানান গির্জা। ঠান্ডা হাওয়া আর মিঠে রোদ মেখে ঘুরে বেড়ানো হয়। প্রায় একটা বাজে। বাসে করে পৌঁছই লেফকেস। লেফকেস প্রথমে ছিল পারোসের রাজধানী। পরে পারিকিয়াতে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়। লেফকেস একটি ট্র্যাডিশনাল গ্রাম। বহু প্রাচীন। আর বিখ্যাত হ্যান্ডিক্রাফট বুটিকের জন্য। এক ছবির মত সাজানো গ্রাম।
মানুষজনের ঘরবাড়ি উঠোন দাওয়ার মধ্যে দিয়ে পাথরে বাঁধানো পথ। অলিভ গাছে ছাওয়া উঠোন। ফুলে ভরে আছে পথ। কারও বা বাগানে সযত্নে সাজানো বেদানার মতো দেখতে ফলের গাছ। কারও বারান্দায় সুদৃশ্য কুশন শোভিত চেয়ার পাতা। জানা গেল, গ্রিকরা নাকি ভারী আমুদে ও আড্ডাবাজ। আর এদের সৌন্দর্যবোধ সত্যিই প্রশংসনীয়। বাড়িতে বাড়িতে রয়েছে ছোট ছোট বুটিক। অসামান্য শিল্পকাজ সব। অলিভ কাঠের নানান সামগ্রী, অলিভ তেল থেকে তৈরি পিওর হার্বাল কসমেটিকসের খুব প্রচলন। এখানে আবার বুটিকে তৈরি হোমমেড তেল লোশন সাবান ক্রিম দেখলাম। তবে বেশ দাম। নানান ধরনের মধু। মধু চিজ আর অলিভ এই তো গ্রিস প্রধানত এক্সপোর্ট করে।
গ্রিসের চামড়ার জুতো খুব বিখ্যাত, এদের নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি জুতো, ব্যাগ, দেখার মতো। সেরামিকের কাজ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। পটারি শিল্প এখানে বিখ্যাত। তবে তুরস্কের মতো কালারফুল পটারি দেখলাম। আছে গ্রিক টেরাকোটার উপর অ্যাক্রেলিক পেন্টিং। তবে পেন্টিং এ প্রধানত গ্রিসের গৌরবময় ইতিহাসকেই তুলে ধরা হয়েছে। গ্রিকেরা অসম্ভব শিল্পমনস্ক জাতি। কেনাকাটা করতে গেলে কোনটা ছেড়ে কোনটা নেব ধন্ধে পড়ে যেতে হয়। টুকিটাকি স্যুভেনির কিনি। পারোস বিখ্যাত তার কান্ট্রিচার্চের জন্য। তাই অলিতে গলিতে চার্চ। এমনকি স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই বাড়িতে চার্চ আছে। কান্ট্রি চার্চের প্রায় সবক’টিরই প্যাটার্ন একধরনের। নীল গম্বুজওয়ালা সাদা ছোট ছোট চার্চ। এই প্রাইভেট চার্চগুলো গৃহকর্তার আর্থিক সঙ্গতির অনুসারে তৈরি। রাস্তায় ট্রলিতে তাজা সব্জি বিক্রি হচ্ছে। টাটকা ক্যাপসিকাম, সাদা বেগুন, খেতের বিন্স, জুকিনি দেখেই মনে হয় একব্যাগ বাজার করে ফেলি।
কেউবা ঘরের দরজার পাশে কুমড়ো জাতীয় সব্জি ট্রে-তে করে রেখে দিয়েছেন। পথচারী গ্রামবাসী কিনে নেবে হয়তো। কাজ শেষে দুপুরের পরে অনেকেই দেখলাম বন্ধু নিয়ে ফুলে ঢাকা ট্যাভার্নে বসে গলা ভেজাচ্ছেন। আমরাও স্থানীয় উজো ওয়াইন নিয়ে সসেজ বেকন আর সবুজ সব্জি সেদ্ধ নিয়ে বসি। বসে থাকতেই এত ভাল লাগে। নির্দিষ্ট সময়ে বাস ধরতে হবে। গোল্ডন বিচ, সান্তা মারিয়া বিচে ওয়াটার স্পোর্টস হয়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে তুরস্ক থেকে মেলতামি বলে এক ঝোড়ো হাওয়া বয়ে আসে এই সাইক্লেডস দ্বীপপুঞ্জে।
এই জোরালো হাওয়ায় এজিয়ান সাগরের উইন্ডসার্ফিং করতে পর্যাটক রা ভিড় জমায়। আবার অ্যালিকি অঞ্চলে আছে সাইক্লেডস মিউজিয়াম। অগাস্টে সেন্ট জন ফেস্ট আর সেপ্টেম্বরে হোলি ক্রাস্ট ফেস্ট বিখ্যাত। বলা বাহুল্য মিড অক্টোবরে আমরা এগুলো পেলাম না। তার জন্য দুঃখ নেই। প্রান ভরে পারোস উপভোগ করেছি। এবার ফেরার পালা। আন্তালিয়ার আন্তরিকতা আতিথেয়তায় অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে আথেন্সগামী জাহাজে চেপে বসি।