শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৫ অপরাহ্ন
Uncategorized

অতৃপ্ত প্রেমের সাক্ষী ‘মাথিনের কূপ’

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ জুন, ২০২১

থানার কূপে জল আনতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার সাথে প্রেম হয় রাখাইন জমিদার কন্যার। শতবর্ষ আগের এই পবিত্র প্রেম পূর্ণতার স্বাদ পায়নি। প্রেমিককে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মবলি দেয় রাখাইন কন্যা। তবে এই প্রেমিক যোগলের অতৃপ্ত প্রেমের স্মৃতি ধরে রেখেছে ‘মাথিনের কূপ’। প্রেমের এই নির্দশন দেখতে প্রতিবছর কক্সবাজারের টেকনাফে ভীড় করেন পর্যটকরা। বছরের পর বছর ধরে অতৃপ্ত সেই অমর প্রেমের গল্প প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যাচ্ছে কূপটি।

প্রেমের এক উজ্জ্বল নিদর্শনটি কক্সবাজারের টেকনাফের মাথিনের কূপ নামেই পরিচিত।টেকনাফ থানায় অবস্থিত কূপটির নিথর জলে মিশে আছে রাখাইন কন্যা মাথিন ও পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্যের অতৃপ্ত, বিষাদ আর বেদনাবিধুর এক অমর প্রেমের গল্প।

ইতিহাস বলছে, বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে সুদুর কলকাতা থেকে দুর্গম টেকনাফ থানায় বদলি হয়ে আসেন সুদর্শন পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্য।থানা প্রঙ্গনের কূপ থেকে জল নিতে আসা স্থানীয় রাখাইন রাজা ওয়াং থিনের কন্যা মাথিন। তার রূপে মুগ্ধ হয় পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজের। একসময় তাদের প্রেম হয়। গভীর প্রেমের একপর্যায়ে দুজনেই সিন্ধান্ত বিয়ের নেয়।

শুরুতে অমত থাকলেও মেয়ের কারণে রাজি হয় মাথিনের বাবা ওয়াং থিন। কিন্তু এই অসম প্রেমের কথা ধীরাজের ব্রাহ্মণ পিতা জেনে যায়। রাখাইন কন্যার সাথে প্রেমের বিষয়টি মানতে পারেনি ধীরাজের পরিবার। কৌশলে অসুস্থতার কথা বলে জরুরি টেলিগ্রাফ মারফত ধীরাজকে দ্রুত কলকাতা ফেরায় তার বাবা। তবে সেটাই ছিল তার শেষ যাওয়া।

ধীরেজ কলকাতা ফিরে গিয়ে আর টেকনাফে ফিরে আসেনি। এদিকে ধীরাজের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে কঙ্কালসার হয়ে পড়ে মাথিন। অপেক্ষার প্রহড় গুনতে গুনতে শেষপর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মাথিন।

এই প্রেমের গল্প এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। তবে ১৯৩০ সালে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত জীবনী নিয়ে লেখা ‘যখন পুলিশ ছিলাম’ গ্রন্থে তার অতৃপ্ত ভালোবাসার স্মৃতি প্রকাশ হয়। এরপরে কূপটি ‘মাথিনের কূপ‘ নাম দিয়ে সংস্কার করা হয় ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে।এটি হয়ে ওঠে পর্যটকদের জন্য এক দর্শনীয় স্থান। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে বেড়াতে আসেন পর্যটকরা। ভালোবাসার এ ইতিহাস জেনে আবেগাপ্লোত হয় তারা। এখানে ঘুরতে আনসা পর্টকরা বলেন, পুলিশ কর্মকর্তাকে ভালবেসে রাখাইন তরুণী জীবন বলি দিয়ে প্রমান করেছেন ভালোবাসা চিরন্তন। এ ভালোবাসাকে মানুষ চিরদিন স্মরণ রাখবে।

বর্তমানে ধীরাজের জায়গায় বসা টেকনাফ থানার পুলিশ কর্মকর্তা ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান, অতৃপ্ত ভালবাসার নিদর্শন টেকনাফের মাথিনের কূপ। ভালোবাসার এ নিদর্শনটি যেন সকল মানুষের মাঝে আকর্ষনীয় ও উপভোগ্য হয়।

মাথিন ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী কে? পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্যের ফিরে না আসা, নাকি সেদিনের সমাজ ব্যবস্থা।এ নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও ভালবাসার এই নির্দশন হয়ে উঠতে পারে ভাল বাসাবাসি মানুষের জন্য এক মিলন স্থল।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com