বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৮ অপরাহ্ন
Uncategorized

কাজাখস্তান

  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১

কাজাখস্তান এর সরকারী নাম “রিপাবলিক অফ কাজাখস্তান”। এটি বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম দেশ এবং বৃহত্তম স্থলবেষ্টিত দেশ। দেশটির উত্তরে রাশিয়া, পূর্বে গণচীন, দক্ষিণে কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান এবং পশ্চিমে কাস্পিয়ান সাগর ও রাশিয়া অবস্থিত। দেশটি প্রায় সম্পূর্ণভাবে এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত। তবে এর কিছু অংশ উড়াল নদীর পশ্চিমে ইউরোপ মহাদেশে পড়েছে।

অর্থনৈতিকভাবে মধ্য এশিয়ার নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র কাজাখস্তান। পুরো অঞ্চলের ৬০ শতাংশ জিডিপি এই দেশটির। খনিজসমৃদ্ধ দেশটির মূল সম্পদ তেল ও গ্যাস। এছাড়া বিশ্বের যে কয়েকটি স্থানে আপেলের উৎপত্তি হয় বলে গণ্য করা হয় সেগুলোর মধ্যে কাজাখস্তান অন্যতম। একইসাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও ভরপুর এই সুবিশাল দেশটি।

তাহলে বন্ধুরা চলুন, কাজাখস্তান দেশ সম্পর্কে আরো কিছু জানা-অজানা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

১। রাশিয়া ১৮৭০ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে কাজাখস্তান দখল করে নেয়। পরবর্তীকালে ১৯১৭ সালে ক্রেনোস্কির নেতৃত্বে ডেমোক্র্যাটরা রাশিয়ার জারের পতন ঘটায়। কিন্তু তাদের ক্ষমতা সংহত হওয়ার আগেই আবার বিপ্লব হয় ওই বছরই। জারের অধীনে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত কাজাখস্তান ছিল। এরপর কমিউনিজমের অধীনে ছিল ১৯৯১ সালের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত। ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর কাজাখস্তান সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটি প্রেসিডেন্ট শাসিত।

২। ২৭ লাখ ২৪ হাজার ৯০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম দেশ।

৩। কাজাখ ভাষা কাজাখস্তানের সরকারি ভাষা। তবে রাশিয়ান ভাষাও দেশটিতে সহ-সরকারী ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

৪। অষ্টম শতাব্দীতে আরবদের আগমনের ফলে এই অঞ্চলে ইসলাম পরিচিতি লাভ করে। তবে সোভিয়েত আমলে ধর্ম খুব বেশি গুরুত্ব না পেলেও এখন দেশটির প্রধান ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ মুসলিম। বাকী ৩০ ভাগ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।

৫। নুরসুলতান কাজাখস্তানের রাজধানী। তবে কিছুদিন আগেও এই শহরটির নাম ছিল আস্তানা। দেশের প্রথম প্রেসিডেন্টের সম্মানে রাজধানী আস্তানার নাম পরিবর্তন করে নুরসুলতান রাখা হয়। এটি আকমোলা অঞ্চলের উত্তর অংশে ইশিম নদীর তীরে অবস্থিত। এটি একটি পরিকল্পিত শহর। মঙ্গোলিয়ার উলানবাটারের পর এটাই বিশ্বের সবচেয়ে শীতল শহর। শহরটিতে দেখার মতো বেশকিছু স্থাপনা রয়েছে।

কাজাখস্তানের সবচেয়ে বড় শহর হচ্ছে আলমাতি। এটিই দেশটির পূর্ববর্তী রাজধানী ছিল। ১৯৯৭ সালে কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নজরবায়েভ আলমাতি থেকে রাজধানী সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এখনো এটিই দেশটির প্রধান বাণিজ্যিক এবং শিল্প কেন্দ্র।

৬। কাজাখস্তানে “চরম” মহাদেশীয় জলবায়ু বিদ্যমান। এখানে গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা থাকে ১৫ থেকে ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং শীতকালে তা গিয়ে দাঁড়ায় -১০ থেকে -১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে।

৭। কাজাকিস্তানের রাজনীতি একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হন। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং দ্বিকাক্ষিক আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত।

৮। বিশ্বের যে কয়েকটি স্থানে আপেলের উৎপত্তি হয় বলে গণ্য করা হয় সেগুলোর মধ্যে কাজাখস্তান অন্যতম। এখানকার আপেলের প্রাচীন জাতটা হলো ম্যালাস সিভারসি। কাজাখস্তানের স্থানীয় ভাষায় এটাকে আলমা বলা হয়।

৯। সম্পূর্ণভাবে স্থলবেষ্টিত দেশ হওয়া সত্ত্বেও কাজাখস্তানের একটি সুবিশাল নৌবাহিনী আছে। ভাবছেন কিভাবে কি? আসলে দেশটির কোন সমুদ্র উপকূল নেই ঠিকই কিন্তু এর একপাশে আছে বিশ্বের বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ সমুদ্র, কাস্পিয়ান সাগর। ২০০৩ সালে দেশটির নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠা হয়।

১০। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কাজখস্তান উত্তরাধিকার সুত্রে ১৪০০ টি নিউক্লিয়ার বোমার মালিক বনে যায়। তবে দেশটি ১৯৯৫ সালে সবগুলো অস্ত্র স্বেচ্ছায় রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে।

১১। কাজাখস্তানে মোট ৫টি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট আছে। এর মধ্যে ৩টি সাংস্কৃতিক এবং ২টি প্রাকৃতিক সাইট।

১২। সোভিয়েত মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রমের গোড়া কিন্তু এই কাজাখস্তান। ঐতিহাসিকভাবে, সোভিয়েত মহাকাশ প্রোগ্রামের যাত্রা বাইকনুর থেকে শুরু হয়েছিল, যা কাজাখস্তানের মাঝখানে একটি গোপন কসমোড্রোম ছিল। মহাকাশে সর্বকালের প্রথম মানুষ, ইউরি গাগারিন বাইকনুর থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন।

১৩। গোটা কাজাখস্তানে আছে দেড় হাজারের মতো মসজিদ। কাজাখস্তানের বড় বড় শহরগুলোতে মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়াদী দেখভাল করেন একজন ইমাম। তিনি প্রধান ইমাম নামে পরিচিত। তাকে ‘ইমামে শহর’ বলা হয়।

১৪। কাজাখ নামের তুর্কীয় জাতি এদশের প্রধান জনগোষ্ঠী, যারা মোট জন্যসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এবং অন্যান্য মুসলিম নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীগুলো হলো উজবেক, উইঘুর এবং তাতার।

১৫। কাজাখস্তানের মানুষের সবচেয়ে পছন্দের খাবার হচ্ছে ঘোড়ার মাংস। একইসাথে এদেশের জাতীয় পানীয় হচ্ছে ঘোড়ার দুধ।

১৬। দেশটিতে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক। এবং দেশটিতে শিক্ষার হার প্রায় ১০০ শতাংশ। এখানে নারী-পুরুষের শিক্ষার হার সমান সমান।

১৭। খেলাধুলার সাফল্যের দিক দিয়ে ধরলে কাজাখস্তানকে সবচেয়ে বেশি সাফল্য এনে দিয়েছে বক্সিং। আর দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ফুটবল, বাস্কেটবল, আইস হকি ইত্যাদি।

১৮। যেমনটি ভিডিওর শুরুতেই বলেছি, অর্থনৈতিকভাবে মধ্য এশিয়ার অন্যতম ধনী দেশ কাজাখস্তান। প্রধান কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে শস্য, গোল আলু, শাক-সবজি ও গবাদি পশু। এদেশে অঢেল খনিজসম্পদও রয়েছে। কাজাখস্তানের প্রধান রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে গম, বস্ত্র ও গবাদি পশু। কাজাখস্তান শীর্ষস্থানীয় ইউরেনিয়াম রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

১৯। কাজাখস্তানের সরকারী মুদ্রা হচ্ছে টেংগে। ১ টেংগে সমান প্রায় বাংলাদেশী ২২ পয়সা এবং ০.১৮ ভারতীয় রুপি।

২০। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় $১৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় $৮,৭৬৩ মার্কিন ডলার।

২১। কাজাখস্তানের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৭।

খালিদ হাসান

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com