শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

বাড়ির কাছেই পূরী

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২

যদি আপনি ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন, আপনার পছন্দের সামনের দিকে চলে আসবে সমুদ্র, পাহাড়, অরণ্য আর প্রাচীন পুরাকীর্তি। আমাদের এই উপমহাদেশে এসবের সবকিছুই আছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতের দিকে গেলে চোখে পড়বে সমুদ্র, পাহাড় আর তার কোল ঘেঁষে প্রাচীন সব স্থাপনা।

ভারতবর্ষের প্রাচীন জনপদ জগন্নাথ ধাম বলে খ্যাত উড়িষ্যার পুরী সমুদ্র সৈকত। কলকাতা থেকে প্রায় ৫১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সমুদ্র সৈকত শহর পুরী। পুরী জগন্নাথদেবের মন্দিরের জন্য বিখ্যাত তীর্থস্থান। বাঙ্গালীদের সবচেয়ে প্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। এখানে বাঙ্গালী আসে সমুদ্র আর মন্দির দুটোর জন্যই।

পুরী শহরটি বাঙালীদের কাছে একটি পর্যটন শহর হলেও প্রচুর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আসেন পুরী মন্দির দর্শন করতে৷ তবে পুরীর মন্দিরের একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সেটা হল হিন্দু না হলে এখানকার মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ।

যেতে হবে যেভাবে –

কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনে পুরী যেতে সময় নেয় মোটামুটি ৮ ঘণ্টা৷ আর দূরন্ত এক্সপ্রেসে গেলে সময় লাগবে তার থেকেও কম৷ কলকাতা থেকে বাসেও যেতে পারেন পুরী। তবে তাতে আরামটা কম।

থাকার জন্য –

সমগ্র ভারতের মানুষের কাছে পুরী খুব জনপ্রিয়, থাকার জন্য অনেক ভালো হোটেল আছে পুরীতে। পুরী রেলস্টেশন থেকে সমুদ্র সৈকত জীপে বিশ মিনিটের পথ। সৈকত ঘেঁষেই অনেক বিলাসবহুল ও মধ্যমমানের হোটেল রয়েছে।

ঘুরে ঘুরে যা কিছু দেখার আছে –

অটোরিকশা বা সাইকেল রিকশায় বা মোটর সাইকেল ভাড়া করে ঘুরে দেখতে পারেন পুরীকে। ঘুরে আসতে পারেন সমুদ্রের পাড় থেকে। দেখতে পাবেন সামনে বিশাল নীল জলরাশি। সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বালুরাশিতে। অল্প অল্প মেঘলা আকাশ। ঢেউগুলো ঠিক যেন পরীর মতো। নীল জলে জেলেদের নৌকগুলো যেন সাক্ষাত রূপকথার বই থেকে বেরিয়ে এসে ভাসছে। পুরীর নীল জল দেখে পেয়ে যাবেন গেলাম নীল পৃথিবীর সন্ধান! স্বপ্নলোকের মতো পরিবেশ। এখানকার সমুদ্রের শব্দ যে কোন সুদূরের স্বপ্ন দেখায়।সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দুটোই দেখতে পারেন পুরীতে। পুরীতে এলে অবশ্যই দেখতে পারেন পুরীর বিখ্যাত সোনালী বিচ। সোনালী রঙের বালুতে বিচটি আচ্ছাদিত। আর সেই সৈকতের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে উটের পাল। এটি সার্ফিং এর জন্যও আদর্শ স্থান।

অটোতে করে হোটেল থেকে প্রায় বিশ মিনিটে পৌঁছে যাবেন শ্রী জগন্নাথ মন্দিরে। এ জগন্নাথ মন্দির ১২০০ শতাব্দীতে উড়িষ্যার গঙ্গবংশীয় রাজা অনঙ্গভীম দেব নির্মাণ করেন। এ মন্দির নির্মাণের জন্য গঙ্গা হতে গোদাবরী পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল সাম্রাজ্যের ১২ বছরের রাজস্ব সে সময় খরচ করা হয়েছিল। মন্দিরের উচ্চতা ২১৪ ফুট। শ্রী জগন্নাথের বারো মাসের ১৩ যাত্রার মধ্যে রথযাত্র সর্বশ্রেষ্ঠ। এই রথযাত্রা প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়। রথযাত্রার দিন শ্রী বলরাম, দেবী শুভদ্রা ও শ্রী জগন্নাথ কাঠের নির্মিত সু-সজ্জিত তিন রথে বসে শ্রী গুন্ডিচা মন্দিরে যান। সেখানে সাত দিন থেকে শ্রী মন্দিরে ফিরে আসেন। রথযাত্রা উৎসব এখান থেকেই শুরু। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে পালিত হয় রথযাত্রা।

স্বর্গদ্বার একটি বিখ্যাত সমুদ্র ঘাট। স্বর্গের দুয়ার নামে বিখ্যাত এই জায়গা উড়িয়া মানুষদের কাছে খুব জনপ্রিয় মৃতদেহ সৎকার এর জন্য। প্রচলিত আছে যে এখানে সৎকার করলে স্বর্গে যাওয়া যায়।

এছাড়াও পুরীতে আছে অনেক হিন্দু মন্দির এবং মঠ, যেমন – শ্রী লোকনাথ মন্দির, সুনারা গৌরাঙ্গ মন্দির, বেদি হনূমান মন্দির, চক্র তীর্থ মন্দির ইত্যাদি।

পুরীর কাছাকাছিই চন্দ্রভাগা সৈকতের ধারে কোণার্ক সুর্য মন্দির বা কোনারক সুর্য মন্দির,পুরী ওড়িশা কোণার্ক সুর্য মন্দির বা কোনারক সুর্য মন্দির ভারতের ওড়িশা রাজ্যের পুরী জেলার কোণার্ক শহর অবস্থিত সুর্য মন্দির। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পূর্ব গঙ্গা রাজবংশের (১০৭৮-১৪৩৪) রাজা প্রথম নরসিংহদেব(১২৩৮-১২৬৪) দ্বারা নির্মিত এই মন্দিরটি আন্তর্জাতিক বিশ্ব ঐতিহ্য প্রকল্প কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ও ইউনেস্কো নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকার মধ্যে স্থান পেয়েছে। এই মন্দির টি সুর্য্যের বিভিন্ন অবস্থানে গুরুত্ব পুর্ন অর্থ বহন করে। উড়িষ্যা ও দ্রাবিড় স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণে নির্মিত মন্দিরটি ধূসর বেলে পাথরে বিশাল একটি রথের আকারে গড়া হয়েছে ।

সমুদ্র থেকে উঠে আসা সূর্যদেবের বিশাল রথ, তার সামনে রয়েছে সাত জোড়া ঘোড়া । বারো জোড়া বিশাল চাকার ওপর পুরো মন্দিরটি নির্মিত ।চাকার কারুকার্য দর্শকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ । প্রতিটি চাকা একেকটি সূর্যঘড়ি । চাকার ভেতরের দাঁড়গুলো সূর্যঘড়ির সময়ের কাঁটা। এখনো নিখুঁতভাবে সময় জানা যায় এই সূর্যঘড়ির সাহায্যে । মন্দিরের প্রবেশ পথেই রয়েছে বিশাল দুটি সিংহের মূর্তি যারা লড়াই করছে দুটি রণহস্তীর সঙ্গে । মন্দিরের বেদী থেকে শুরু করে চূড়া পর্যন্ত প্রতি ইঞ্চি জায়গায় পাথরের ভাস্কর্য ও কারুকার্য রয়েছে । কলিঙ্গ রীতিতে নির্মিত মন্দিরের চূড়াগুলো পিরামিড আকৃতির।মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্ডপ ।

কিছু বিষয় মনে রাখা ভালো – স্বর্গদ্বার এবং নতুন পুরীর সস্তা হোটেল বা গেস্ট হাউজে যদি উঠেন আপনার মালামাল এর দিকে খেয়াল রাখবেন। রাত ৮ টার পরে বিচে না যাওয়াই ভালো। যদি খুব অসুস্থ হয়ে পরেন তবে ভুবনেশ্বর এর কালিঙ্গা হাসপাতাল এ যাওয়াই ভালো হবে, কেননা পুরীর হাসপাতাল খুবই নিম্নমানের এবং অপরিষ্কার। আপনি চাইলে হোটেলে একজন লোকাল ডাক্তার ডেকে আনতে পারবেন সেক্ষেত্রে হোটেলএর সাথে কথা বলে নেওয়া ভালো হবে। মন্দির দর্শনের সময় মন্দিরের পাণ্ডাদের কাছ থেকে সাবধান। তারা বিভিন্ন দেবতার দোহাই দিয়ে আপনার কাছে টাকা ছাইবে, যদি দান করতে ইচ্ছে হয় তাহলে খুচরা টাকা সাথে রাখাই ভাল।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com