মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৭ অপরাহ্ন
Uncategorized

বান্দরবানের চড়াই-উৎরাই

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১

পার্বত্য ৩ জেলার মধ্যে সবচে বেশি সৌন্দর্য সম্ভবত বান্দরবানই নিজের কাছে রেখেছে। দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই জেলাটিতে সৌন্দর্যের যেন শেষ নেই। যেদিকেই চোখ পড়ে, মানুষ আর প্রকৃতির এই অভূতপূর্ব মিল আপনাকে মোহিত করবে। দেশের শীর্ষ চার পর্বত এই জেলাতেই অবস্থিত। তবে, চাইলেই বান্দরবানের সব চড়াই-উৎরাই আপনি পেরুতে পারবেন না। এর জন্য মানসিক জোরের পাশাপাশি চাই শারীরিক সক্ষমতাও। তবে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে খানিক কষ্ট করলেই পর্বতারোহণের স্বাদ পাওয়া যাবে। বান্দরবানের তেমন কিছু জায়গা দেখে নিতে পারেন এক নজরে।

চিম্বুক

সাকা হাফং, তাজিংডং এবং কেওক্রাডং এর পরেই চিম্বুক হলো বাংলাদেশের উচ্চতম পর্বত। হাইকিং এর জন্য বাদবাকি তিন পর্বতের তুলনায় এটি কিছুটা সহজ। এবং ঝুঁকিও খানিক কম। এছাড়া এর চারপাশের অপার্থিব সৌন্দর্যের জন্য দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় হাইকিং এই চিম্বুক পাহাড় আরোহণ। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৫০০ ফুট উঁচু এই পাহাড়ের অবস্থান, এখানে যাতায়াতের রাস্তাটি আঁকাবাঁকা ও সর্পিল। জিপ বা স্থানীয় চান্দের গাড়িতে এসব রাস্তা পার হওয়াটাই আলাদা এক অনুভূতি জন্ম দেয়। যাওয়ার পথে আপনাকে বেশ কিছু আদিবাসী পল্লী অতিক্রম করতে হবে।

চিম্বুক থেকে বান্দরবানের চোখধাধানো সৌন্দর্য
 চিম্বুক এলাকায় সরকারি মালিকানাধীন দুটি রেস্ট হাউজ আছে। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আগেই এর রিজার্ভেশন নিয়ে রাখতে হয়। আছে ক্যান্টিন সুবিধাও। যেহেতু বান্দরবান শহর থেকে চিম্বুকের অবস্থান একটু দূরে তাই এখানে যেতে হলে ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে। তবে যদি সদলবলে হাইকিং-এর পরিকল্পনা থাকে তবে থানচিগামী যেকোনো বাস কিংবা জিপেও চড়তে পারেন। চিম্বুক যাওয়ার পথে একটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি চেকপোস্টে আপনার নাম-ঠিকানা নিবন্ধন করতে হবে। স্থানীয় উপজাতিদের দাবি, এখান থেকে চাইলে আপনি মেঘও ধরতে পারবেন। আর সেই সাথে অপরূপ সৌন্দর্যের সাঙ্গু নদী তো আছেই।

বগালেক

বগালেক যেতে হলে আপনাকে চিম্বুকের চেয়েও বেশি উচ্চতায় উঠতে হবে। প্রায় ৩ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের কোলঘেষে এই প্রাকৃতিক লেকের অবস্থান। কেওক্রাডং পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বগালেক বান্দরবানের সবচেয়ে সুন্দর কিছু দৃশ্য আপনার সামনে নিয়ে আসবে। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার এবং রুমা উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। সারা বছর এর পানি স্বচ্ছ নীল থাকলেও এপ্রিল থেকে মে মাসে এর পানি হয়ে যায় ঘোলাটে। আশপাশের বম ও খুমী সম্প্রদায়ের মানুষের দাবি এই গভীরতা ২০০ থেকে ২৫০ ফুটের বেশি। যদিও আদতে ১৫০ ফুট থেকে অল্প বেশি।বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষণ এই বিস্ময়কর বগালেকপ্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে থাকা বগালেকের আশেপাশে কোন পানির উৎস নেই। তবে এর ১৫৩ মিটার নিচে বগাছড়া নামে ছোট একটি ঝর্ণা আছে। জেলা পরিষদের করা রেস্ট হাউজের বাইরেও স্থানীয় বম উপজাতিদের অনেকেই পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করে থাকে। খাওয়ার ব্যবস্থাও তাদেরই করা। তবে রুমা বাজার থেকে বাজার করে নেয়াটাই শ্রেয়। নিরাপত্তার জন্য সেনা ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হয়। আর অবশ্যই স্থানীয় গাইড প্রয়োজন হবে আপনার।

কেওক্রাডং

দেশের সবচেয়ে উঁচু পর্বত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে স্বীকৃতি ছিল এই কেওক্রাডং পাহাড়ের। তবে, পরবর্তীতে তাজিংডং এবং তারও পরে সাকা হাফং-এর আবিষ্কার কেওক্রাডংকে নামিয়ে দিয়েছে ৩য় উচ্চতম পর্বত হিসেবে। তবে দাপ্তরিকভাবে এটি এখনও ২য় উচ্চতম পর্বত। আর স্থানীয়দের বিশ্বাস, এটিই এখনও বাংলাদেশের উচ্চতম পর্বত।দেশের অন্যতম উচ্চতম স্থান কেওক্রাডং বগালেক থেকে সরাসরি চান্দের গাড়িতে এর চূড়ায় পৌঁছানো যায়। তবে তাই যদি করা হয় তাতে হাইকিং এর আনন্দটুকু পাওয়া যায় না। কিন্তু এ কথাও সত্য, চান্দের গাড়িতে করে গেলে ঝুঁকি কিঞ্চিৎ কম। যদিও চাইলেই সে সুবিধা নাও পেতে পারেন। কারণ কেওক্রাডং চূড়ায় খুব কম সংখ্যক চান্দের গাড়িই যাত্রা করে। ভৌগোলিকভাবে এই পর্বতের অবস্থান রুমা উপজেলায়। এর উচ্চতা ৪,৩৩০ ফুট। বগালেক থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরেই অসাধারণ এই পাহাড়ের অবস্থান।

বুদ্ধ ধাতু জাদি মন্দির

বুদ্ধ ধাতু জাদি মন্দিরের প্রচলিত নাম বান্দরবান স্বর্ণ-মন্দির। বান্দরবান থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার এবং বালাঘাটা থেকে চার কিলোমিটার দূরে পালপাড়ায় এি মন্দির অবস্থিত। এখানে আপনি পাবেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তি। মাটি থেকে প্রায় ২০০ ফুট উঁচু এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ ১৯৯৫ সালে শুরু হয়। পাঁচ বছরের অবিরাম পরিশ্রম শেষে ২০০০ সালে শেষ হয় এর কাজ। শুধু বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীই নয়, দেশ-বিদেশের যেকোনো পর্যটকের জন্যই এটি এক আকর্ষণীয় স্থান। পাহাড় চূড়ায় মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি ছোট পুকুর যাকে স্থানীয়রা ‘দেবতাদের পুকুর’ নামে ডেকে থাকে।বুদ্ধ ধাতু জাদি মন্দির, বান্দরবান

পাহাড়ের উপরের এই জায়গা থেকে বালাঘাটা এবং এর চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। প্রতি বছরই এখানে বিভিন্ন ধরনের মেলার আয়োজন করা হয়। মন্দিরটি সাধারণত বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। মাত্র ১০ টাকা প্রবেশ মূল্য দিয়ে যেতে পারেন এখানে। তবে ধর্মীয় মূল্যবোধের দিকে খানিক খেয়াল রাখা দরকার। হাফপ্যান্ট কিংবা জুতা পায়ে দিয়ে এখানে যাওয়া নিষেধ। বান্দরবান শহর থেকে খুব বেশি দূরে না বলে রিকশা কিংবা অটোরিকশায় চড়ে বুদ্ধ ধাতু জাদি মন্দিরে যাওয়া যায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com