বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৭ অপরাহ্ন
Uncategorized

পানামা

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১

পানামার সরকারী নাম “রিপাবলিক অফ পানামা”। এটি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সংযোগকারী মধ্য আমেরিকার একেবারে দক্ষিণাংশের একটি দেশ। দেশটির পশ্চিমে কোস্টারিকা, দক্ষিণ-পূর্বে কলম্বিয়া, উত্তরে ক্যারিবীয় সাগর ও দক্ষিণে প্রশান্ত মহাসাগর অবস্থিত।

পাহাড়ঘেরা রাজ্য, বহুতল ইমারত এবং সবুজ ঘন জঙ্গল। মাঝে মাঝে মালভূমি, উপত্যকা, ছোট্ট টিলার সারি। সাথে আছে বৈচিত্র্যময় এক সংস্কৃতি। প্রকৃতি থেকে সংস্কৃতি, সত্যি পানামা বড়ই বৈচিত্র্যময়। আবার এই পানামাতেই অবস্থিত আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর এর সংযোগকারী পানামা খাল। একইসাথে এই এলাকার অন্যতম ধনী দেশ এটি। ভ্রমণের জন্যও অত্যন্ত আকর্ষণীয় এক গন্তব্য মধ্য আমেরিকার এই দেশটি।

তাহলে বন্ধুরা চলুন, পানামা দেশ সম্পর্কে আরো কিছু জানা-অজানা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

১। খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে স্পেনের অভিযাত্রীরা এই অঞ্চলে উপনিবেশ গড়ে তোলে। এর আগে এই অঞ্চলে বাস করতো আমেরিকার আদিবাসীরা। ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ শে নভেম্বর স্পেনের শাসন মুক্ত হয়ে স্বাধীন পানামা রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। এরপর এই অঞ্চলের নিউভা গ্রানাডা, ইকুয়েডর এবং ভেনেজুয়েলার মতো স্পেনীয় উপনিবেশ মিলিত হয়ে গ্রান কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়েছিল। ১৮৩১ সালে গ্র্যান কলম্বিয়া বিলুপ্ত হয়। তখনো পানামা ও নিউভা গ্রানাডা একসঙ্গে ছিল। এ দুটি মিলেই পরবর্তী সময়ে কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় কলম্বিয়া থেকে পানামা পৃথক হয়ে যায়। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই ডিসেম্বর দেশটি জাতিসংঘে যোগদান করে।

২। ৭৫ হাজার ৪১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪১ লাখ ৭৬ হাজার। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১১৬ তম দেশ।

৩। পানামার সরকারী ভাষা স্প্যানিশ। এটি দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী ভাষা। দেশের প্রায় ৯৩ শতাংশ মানুষ তাদের প্রথম ভাষা হিসাবে স্প্যানিশ ব্যবহার করেন। দেশটিতে প্রচলিত স্প্যানিশ ভাষা পানামিয়ান স্প্যানিশ নামে পরিচিত।

৪। খ্রিস্টান ধর্ম পানামার সর্বাধিক প্রচলিত ধর্ম। দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী। বাকিদের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ মানুষ কোন ধর্মেই বিশ্বাসী নয়।

৫। পানামা সিটি পানামার রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। পানামার কেন্দ্রীয় উপকূলভাগে পানামা খালের যে প্রান্ত প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত সেখানেই পানামা সিটির অবস্থান। পানামার রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য এবং শিল্পোৎপাদনের কেন্দ্র এই শহর।

মূল পানামা সিটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৫১৯ সালে। এই অঞ্চলের স্পেনীয় উপনিবেশের গভর্নর পেদ্রারিয়াস দাভিলা এই শহরের পত্তন করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৬৭১ সালে হেনরি নর্মান নামে এক জলদস্যু শহরটিকে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে দুই বছর লেগেছিল তা নতুন করে তৈরি করতে। পুরনো শহরের ধ্বংসাবশেষ পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান। পানামা সিটি রেড ইন্ডিয়ান, আফ্রিকান ও ইউরোপীয় সংস্কৃতির মিশেলে তৈরি একটি আশ্চর্য শহর।

৬। দেশটিতে একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু বিদ্যমান। তাপমাত্রা তুলনামূলক অনেক বেশি এবং আবহাওয়া অত্যন্ত আদ্র। এখানে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত শুষ্ককাল এবং মে থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল থাকে।

৭। দেশটির রাজনীতি একটি রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রপতি একইসাথে রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধান। দেশটির নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইনী ক্ষমতা সরকার এবং জাতীয় সংসদ উভয়ের উপর ন্যস্ত। বিচার বিভাগ নির্বাহী ও আইনসভা হতে স্বাধীন।

৮। এই দেশেই অবস্থিত বিখ্যাত পানামা খাল। এটি জাহাজ চলাচলের জন্য পানামা প্রজাতন্ত্রের ইস্থমাসে নির্মীত একটি খাল, যা আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে যুক্ত করেছে। খালটির মালিক ও পরিচালক হচ্ছে পানামা প্রজাতন্ত্র। পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্বের উপকূল পর্যন্ত হিসাব করলে খালটির দৈর্ঘ্য ৬৫ কিলোমিটার, কিন্তু আটলান্টিকের গভীর জল থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীর জল পর্যন্ত হিসাব করলে ৮২ কিলোমিটার। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি জাহাজ চলাচলকারী কৃত্রিম খালের একটি, অন্যটি হচ্ছে সুয়েজ খাল। সামগ্রিকভাবে ধরলে এই খালের খননকার্য শুরু হয় ১৯০৪ সালে এবং শেষ হয় ১৯১৪ সালে কিন্তু এর ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ। এ নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা করা যাবে। তবে সম্প্রতি খালটি সংস্কার করে আরো প্রশস্ত করা হয়েছে।

৯। পানামার লোকেরা দুইটা স্বাধীনতা দিবস পালন করেন। প্রথমটা ১৮২১ সালে স্পেন থেকে স্বাধীন হওয়া উপলক্ষে এবং দ্বিতীয়টা ১৯০৩ সালে কলম্বিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভ উপলক্ষে।

১০। পানামার অবস্থান হ্যারিকেন অ্যালির দক্ষিণে। তাই এ দেশটিতে কোনোরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়না। ইন্টারনেটের খ্যাতনামা কোম্পানির হোস্টিংয়ের বড় বড় সার্ভারগুলোই তাই পানামায় বসানো। অন্য শব্দে বলা যায়, পুরো ইন্টারনেট দুনিয়াই একরকম নিয়ন্ত্রণ করে পানামা হোস্টিং।

১১। পানামাতে অবস্থিত টোকুমেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, যা গোটা মধ্য আমেরিকার সবচেয়ে বড় এয়ারপোর্ট। পানামার রাস্তাঘাট, ট্র্যাফিক এবং পরিবহন ব্যবস্থা সাধারণত নিরাপদ, যদিও রাতের বেলা গাড়ি চালানো কিছুটা কঠিন এবং অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা সীমাবদ্ধ।

১২। দেশটির প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। এখানে ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক।

১৩। পানামাতে খুব সহজেই অভিবাসী হওয়া সম্ভব। দেশটি দীর্ঘ সময়ের জন্য অবসর ভিসা দিয়ে থাকে। তবে আপনাকে অবশ্যই এজন্য ১,০০০ ডলার মাসিক আয় দেখাতে হবে। আর তরুণরা এই দেশের অভিবাসী হতে চাইলে, পানামিয়ান ব্যাংকে ৫,০০০ ডলার জমা দিতে হবে। এরপর দেশটি ভিসা প্রদান করবে। দেশটির নাগরিকত্ব পেতে চাইলে, দেশটিতে পাঁচ বছর বসবাস করতে হবে। এরপর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে।

১৪। পানামার জিডিপির একটা বড় অংশ আসে পানামা খাল থেকে। এ ছাড়া বাণিজ্য, ব্যাংকিং, পর্যটন খাত থেকেও আয় আসে পানামার। মানব-উন্নয়ন সূচকে দেশটির অবস্থান ৬০তম। বেকারত্বের হার ২.৭ শতাংশ। এক দশক ধরে দেশটির অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। তাদের প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ১০ শতাংশেরও বেশি।

১৫। দেশটিতে দুই ধরণের মুদ্রার প্রচলন আছে- পানামিয়ান বালবোয়া এবং মার্কিন ডলার। ১ পানামিয়ান বালবোয়া সমান প্রায় বাংলাদেশী ৮৫ টাকা এবং ৭২ ভারতীয় রুপী।

১৬। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় $৭২.২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় প্রায় $১৭,১১৭ মার্কিন ডলার।

১৭। পানামার ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৫০৭।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com