বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৩ অপরাহ্ন
Uncategorized

দেশেই মধুচন্দ্রিমা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

একসঙ্গে পথচলার শুরুতে দু’জন মিলে কয়েক দিনের জন্য বেড়িয়ে আসার পরিকল্পনা থাকে সবারই। বাজেট, সময় আর ঘোরার মানসিকতা- সব মিলিয়ে মধুচন্দ্রিমার গন্তব্য বিভিন্ন রকম হতে পারে

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মধুচন্দ্রিমার সুখকর অভিজ্ঞতা দিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করতে চান সবাই।

একসঙ্গে পথচলার শুরুতে দু’জন মিলে কয়েক দিনের জন্য বেড়িয়ে আসার পরিকল্পনাও থাকে। পরস্পর বুঝে নেওয়ার জন্য এর থেকে সঠিক পরিকল্পনা আর হতে পারে না। আমাদের দেশেই রয়েছে মন মাতানো সৌন্দর্যের বেশ কয়েকটি স্থান। ঘুরে আসতে পারেন দু’জন মিলে। বাজেট, সময় আর ঘোরার মানসিকতা- সবমিলিয়ে মধুচন্দ্রিমার গন্তব্য বিভিন্ন রকম হতে পারে। মধুচন্দ্রিমায় গন্তব্য পছন্দের সবার ওপরে থাকে সমুদ্র। আমাদেরই আছে এ ধরিত্রীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। ভিড় এড়িয়ে একটু নিরিবিলিতে যারা অপূর্ব সুন্দর এ সৈকতে ঘুরতে চান, তাদের জন্য ঋজু খাল ঘেঁষে গড়ে ওঠা মারমেইড ইকো রিসোর্ট পারফেক্ট। পাশেই ইনানী বিচ, টেকনাফের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ইসলামগঞ্জ-শাপলাপুর গ্রামের অনিন্দ্যসুন্দর সৈকত।

ইনানী পেরিয়ে মেরিন ড্রাইভ ধরে টেকনাফ যাওয়ার পথের সি বিচগুলো এখনও বাণিজ্যিক হয়ে ওঠেনি। নিরাপত্তার ব্যাপারে একটু সাবধান থাকলেই সমুদ্র আর বালিয়াড়ির দুটোই বেশ প্রাকৃতিকভাবে উপভোগ করা যায়। টেকনাফ পেরিয়ে নারিকেল জিঞ্জিরা বা সেন্টমার্টিন দ্বীপও হতে পারে আপনার মধুচন্দ্রিমার গন্তব্য। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। দ্বীপটিতে নারিকেল গাছের আধিপত্যের কারণে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়। পানির স্বচ্ছতায় সাগরতলার প্রবাল আর শৈবালগুচ্ছ আপনাদের মুগ্ধ করবেই। সেন্টমার্টিনের জেটির উত্তর প্রান্তে কিছু রিসোর্ট ও হোটেল গড়ে উঠেছে, সেগুলোর যে কোনোটিতে উঠতে পারেন।

বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি- তিন জেলাতেই রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল। এ ছাড়া বান্দরবানে মিলনছড়ি রিসোর্ট, সেনাবাহিনীর নীলগিরি রিসোর্ট, সাকুরা রিসোর্টসহ বেশকিছু ভালো মানের রিসোর্ট রয়েছে।

সিলেটে শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজারে ঘোরাঘুরির জন্য আদর্শ সময় বর্ষা হলেও শীতকাল এখানে উপভোগ্য। হালকা শীতে ধূমায়িত চায়ের কাপ হাতে শ্রীমঙ্গলের টি-রিসোর্টের বারান্দায় প্রিয়জনকে নিয়ে বসে থাকা রোমান্টিক নিশ্চয়ই। আছে মাধবকুণ্ডের ঝরনা, জাফলং, জৈন্তা, খাসিয়া পল্লি। এ সময় সিলেটে এলে অন্যতম আকর্ষণ ভোলাহাট, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, পানথুমাই, লক্ষ্মণছড়া মিস করবেন না নিশ্চয়। শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ টি-রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসোর্ট বুকিং দিতে হয় বেশ আগে। সেখানে ঠাঁই না মিললে রয়েছে শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট, মৌলভীবাজারে দুসাই রিসোর্ট, সিলেট লালা খালের পাশে নাজিমগড় রিসোর্টসহ ভালো মানের আরও অনেক হোটেল-মোটেল। চাইলে থাকতে পারেন শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জের রেমা কেলেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেস্ট হাউসেও। বন বিভাগের পাশাপাশি নিসর্গ কটেজও আছে বেশকিছু। বর্ষাকাল সিলেটের হাওর আর বিলে ঘোরাঘুরির মূল সময় হলেও এ শীতে অতিথি পাখিদের সঙ্গে ভ্রমণে পাবেন এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা।

হানিমুন ট্রাভেল

বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণের আবাস সুন্দরবন মধুচন্দ্রিমার গন্তব্য হিসেবে মন্দ নয়। ঋতুভেদে এ বন বারবার রূপ পাল্টায়। নিসর্গ উপভোগ, লঞ্চ থেকে নেমে নৌকায় সূর্যোদয় দেখা, কুমির, বানর, হরিণ, সাপ, হাজারো পাখি দেখার আনন্দই আলাদা।

সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ আর বাগেরহাটের মোংলা এজন্য আদর্শ। মোংলায় পর্যটনের পশুর হোটেলে রাত কাটিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন করমজল, হাড়বেড়িয়ার মতো জায়গাগুলো। খুলনা-মোংলা হয়ে সুন্দরবন যাওয়া যায়। মোংলা থেকে কিছুদূর গেলে কচিখালী হয়ে যাওয়া যায় কটকা পর্যন্ত। আবার সাতক্ষীরার বুড়ি গোয়ালিনী রেঞ্জ দিয়ে সুন্দরবনের অনেক গভীরে জামতলা পর্যন্ত। দূরের গন্তব্য কটকা আর হিরন পয়েন্ট। সাতক্ষীরায় বর্ষা রিসোর্ট আর এনজিওগুলোর রেস্ট হাউসে রাত কাটিয়ে গভীর অরণ্যে ঘুরে বেড়াতে পারেন অনায়াসে।

বর্তমানে বাংলাদেশে এমন অনেক রিসোর্ট হয়েছে, যেগুলোতে গেলে আর আলাদা করে কোথাও বেড়াতে যেতে হয় না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

* মারমেইড বিচ রিসোর্ট, কক্সবাজার।

* রয়্যাল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, কক্সবাজার।

* দ্য প্যালেস রিসোর্ট, সিলেট।

* গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট, সিলেট।

এগুলোতে গেলে আপনি পাবেন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, সৌন্দর্য আর লাক্সারি।

নীলগিরি হিল রিসোর্ট

নীলগিরি হিল রিসোর্টটি বান্দরবান জেলায় নীলগিরি পাহাড়ের পাশে অবস্থিত। এই রিসোর্টটি পর্যটক ও নবদম্পতির মধ্যে এতটাই জনপ্রিয় যে, যাওয়ার কমপক্ষে ২-৩ মাস আগে বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। ঢাকা থেকে বান্দরবান যাওয়ার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো বাস অথবা নিজেদের গাড়ি। এসি, নন-এসি সব ধরনের বাসের টিকিট সহজেই পাওয়া যায়। এতে কমপক্ষে খরচ হবে ৫৫০-৭৫০ টাকা প্রতিজন এবং পৌঁছতে সময় লাগবে ৮-১০ ঘণ্টা। এই রিসোর্টটি বান্দরবান শহর থেকে আরও ৪৭ কি.মি. দূরে। বান্দরবান শহরে পৌঁছানোর পর এলাকার চাঁদের গাড়ি অথবা জিপে করে নীলগিরি যেতে হবে এবং এতে খরচ পড়বে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা প্রতি গাড়ি। রিসোর্টটি এতটাই সুন্দর, সেখানে পৌঁছতে যতটা কষ্ট, সেখানের পরিবেশ দেখে সব ভুলে যাবেন। এখানে থাকার খরচ পড়বে আনুমানিক ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দিনপ্রতি। এটি বাংলাদেশ আর্মি দ্বারা পরিচালিত।

সাজেক ভ্যালি

সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ি থেকে। যদি বাসে যান তাহলে জনপ্রতি খরচ পড়বে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা। সাজেকে একটা ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হচ্ছে, এখানে ২৪ ঘণ্টায় প্রকৃতির তিনটি রূপই দেখা মেলে। কখনও খুবই গরম, একটু পরই হঠাৎ বৃষ্টি এবং তার কিছু পরই হয়তো চারদিক ঢেকে যায় মেঘের চাদরে; মনে হয় যেন একটা মেঘের উপত্যকা। সাজেকের রুইলুইপাড়া থেকে ট্রেকিং করে কংলাক পাহাড়ে যাওয়া যায়। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবনযাপন, চারদিকে মেঘের আনাগোনা পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

অন্য কোথাও

সঙ্গীসহ আপনি চেনা গণ্ডির বাইরেও ঢাকার অদূরে যেতে পারেন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের সূর্যাস্ত আপনাকে মুগ্ধ করবে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে একই সঙ্গে পাহাড় আর পানির যুগলবন্দিও চোখ জুড়িয়ে দেয়। বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমার বিশেষ কয়েকটি দিন স্মরণীয় করে রাখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন সব দম্পতিই। তবে পরিকল্পনা তো আর বিয়ের পরের জন্য ফেলে রাখলে চলে না। প্রথম কারণ অবশ্যই ছুটি সীমিত। অফিস ও সংসার জীবনে পুরোপুরি সময় দেওয়ার আগে দু’জনে একান্তে বেড়িয়ে আসা চাই-ই। বিয়ের প্রস্তুতিতে যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, হানিমুন প্ল্যানিংটা দু’জনে মিলে করলেই ভালো। ছক কষে নিন, আপনার হানিমুন পরিকল্পনা।

মনে রাখবেন, হানিমুন আপনার সারা জীবনের একমাত্র অভিজ্ঞতা। অতএব একে করে তুলুন জীবনের সবচেয়ে রোমান্টিক মুহূর্ত। উপভোগ করুন দু’জনে মিলে। সম্পর্কের ভিত্তি অনেক জোরালো হওয়া চাই। অন্য সবাইকে ছাপিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়াটা হতে হবে সবার আগে। একে অন্যকে বুঝতে, একে অন্যের পছন্দ-অপছন্দ, পরিকল্পনা- সবকিছু জানতে সময় লাগে অনেকটা। আর এই বোঝাপড়াটা ভালোভাবে করতে হলে একে অন্যকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। তাইতো বিয়ের পরে হানিমুনে যাওয়া নবদম্পতির একান্ত জরুরি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com