শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

চীন সম্পর্কে জানা-অজানা মজার ঘটনা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১

চীন খুবই আকর্ষণীয় একটি দেশ। দেশটিতে প্রচুর মজার মজার ঘটনা রয়েছে। সেখানে এমনকিছু ঘটনা ঘটে যা বিশ্বে অদ্বিতীয়, রহস্যময়, বিচিত্র ও উত্তেজনাপূর্ণ। চলুন জানা যাক তাদের ঐতিহ্যগত কিছু ঘটনা সম্পর্কে।

খাবার টেবিলের আদব

এমনকিছু ঘটনা আছে যা বিশ্বের অন্যান্য দেশে রীতিমতো অভদ্রতা হলেও চীনে তা গ্রহণযোগ্য। খাবার গ্রহণের কথাই বলা যাক। যার কিছু নিয়মনীতি আমাদের সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু কিছু নিয়মনীতি একেবারেই ভিন্ন। যেমন- চেয়ারে বসতে বললে বসা, সর্বপ্রথম বড়রা খাবার খাওয়া শুরু করলেই কম বয়সীরা শুরু করবেন। এছাড়াও স্মার্টফোন থাকলে তা শব্দহীন করে রাখাও ভদ্রতার অংশ মনে করেন তারা।

স্মার্টফোন শব্দহীন করে রাখা ভদ্রতা হলেও খাবার খাওয়ার সময় থুথু ফেলা, হাই তোলা, ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ করা, ঢেকুর তোলাকে স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের দেশে কিন্তু এই আচরণগুলো রীতিমতো বিরক্তিকর হিসেবে গণ্য করা হয়।

শিশুদের পায়খানার আদব

শিশুদের পায়খানা করানোর বিষয়টি চীনের ক্ষেত্রে খুবই অদ্ভুত। চীনের মায়েদের কাছে শিশুদের প্যাম্পারস আমাদের দেশের মতো এত জনপ্রিয় নয়।

চীনের শিশুদের প্যাম্পারসের পরিবর্তে তলা ছিদ্র বা ফালি করা প্যান্ট পড়ানো হয়। শিশুদের পায়খানা-প্রস্রাব করার ইচ্ছা হলেেএকটু উবু হলেই ফালি খুলে যায়। এতে প্যান্ট কোমর থেকে না নামিয়েই প্রস্রাব-প্রায়খানা করতে পারে। এই প্যান্টকে ওপেন ক্রোচ প্যান্ট, ওপেন ক্রোচ ট্রাউজার বা তলা ফালি প্যান্টও বলা হয়।

সবচেয়ে জনবহুল দেশ

চীন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ। ২০১৭ সালে চীনের জনসংখ্যা ছিল ১৩৮ দশমিক ৬ কোটি। বর্তমানে এই জনসংখ্যা ১৪৩ কোটিরও অধিক। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৮ দশমিক ৪৭ ভাগ লোক চীনে বসবাস করছে। জনসংখ্যা অনেক বেশি হলেও প্রতি বর্গ কিলোমিটারের জনবসতি কিন্তু অনেক কম। কারণ দেশটির আয়তন অনেক বেশি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র ১৫৩ জন। আবার আয়তন বেশি হলেও, আয়তনে চীনের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। জনসংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় তাদের চাইনিজ ভাষাতেই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ কথা বলে।

বিশ্বের বৃহত্তম সৈন্যবাহিনী

বিশ্বের বৃহত্তম সৈন্যবাহিনীর অধিকারী হচ্ছে চীন। ১৯২৭ সালে ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি গ্রাউন্ড ফোর্স, চায়না’ নামে সৈন্যবাহিনী যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে চীনের সৈন্যবাহিনীর সংখ্যা হচ্ছে ২০ লক্ষেরও অধিক। এই সংখ্যা প্যারিস ও বুদাপেস্টের জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।

পান্ডার মালিক

চীনকে পান্ডার মালিক বলা যায়। কারণ পান্ডা এখন শুধু চীনেই পাওয়া যায়। যদি বিশ্বের অন্য কোনো দেশে পান্ডা দেখা যায় তবে ধরে নিবেন তা চীন থেকেই ভাড়া করে আনা হয়েছে।

পান্ডাকে চীনের জাতীয় সম্পদ আখ্যায়িত করা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিম-মধ্য চীনের পাহাড়ি ঢালের ঘন বাঁশবনে এরা বাস করে। এদের খাবারের শতকরা ৯৯ ভাগ হচ্ছে বাঁশের পাতা। তাই বাঁশবন হ্রাসের সাথে সাথে এদের সংখ্যাও দ্রুত কমে যাচ্ছে।

কুমারীত্ব পুনরুদ্ধার

গত সপ্তাহে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত একটি সংবাদে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে কুমারীত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য শল্যচিকিৎসাকে বেআইনি বলে ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।

চীনে কিন্তু এই প্রক্রিয়া খুবই প্রচলিত আছে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘হাইমেনোপ্লাস্টি’ বা ‘হাইমেনোর‌্যাফি’। এখানে শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে যোনির প্রবেশপথের ঝিল্লির একটি স্তরকে পুনরায় তৈরি করে দেওয়া হয়। এই ঝিল্লির স্তরকে অনেকে সতীচ্ছদ বলেন।

যদিও শল্যচিকিৎসায় কোনো সুবিধা নেই তবুও চীনের মেয়েরা বিয়ের পূর্বে হাইমেনোর‌্যাফি করান। এজন্য তারা প্রচুর অর্থও ব্যয় করেন। কারণ তারা ভবিষ্যত স্বামীকে দেখাতে চান যে তারা কুমারী ছিলেন।

গুহায় বসবাস

প্রযুক্তিগত দিকে দিয়ে অনেক উন্নত হলেও চীনে এখনো অনেক লোক গুহায় বসবাস করে। ২০১২ সালে প্রকাশিত তথ্যানুসারে জানা যায়, চীনে এখনো ৩০ মিলিয়ন লোক গুহায় বাস করে।

নববর্ষে দীর্ঘদিন ছুটি

নববর্ষ উপলক্ষে চীনে দীর্ঘদিন ছুটি দেওয়া হয়। তারা জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারি মাসে নববর্ষ উদযাপন করে। নববর্ষের ছুটিতে প্রায় সকলেই কাজকর্ম বন্ধ করে পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে ছুটে যায়।

আইসক্রিমের উদ্ভাবক

উদ্ভাবনের দিক থেকে বর্তমানে চীনকে সকলেই চেনে। প্রযুক্তির নানা শাখায় এদের অবদান বর্তমানে যেমন দেখা যায় অতীতেও হয়তো তেমনই ছিল। এইতো যদি বলি আইসক্রিমের কথা। সেই আইসক্রিমের উদ্ভাবকও হচ্ছে চীন।

চীনে ৬১৮-৯৭ খ্রিস্টপূর্বে ৯৪ জন শ্রমিক মিলে প্রথম আইসক্রিম তৈরি করেছিল। ছোটখাটো এক বাটি আইসক্রিম তৈরির জন্যই এতোগুলো শ্রমিক খাটানো হয়েছিল। সে সময় মহিষের দুধ, ময়দা ও কর্পূর মিশিয়ে তৈরি করেছিল আইসক্রিম।

গুগল, ফেসবুক বন্ধ

চীনে অনেক বড় বড় ওয়েবসাইটই বন্ধ রাখা হয়েছে। গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব কিন্তু চীনে গেলে আপনি চালাতে পারবেন না। কারণ চীন সরকার আপলোড ও ডাউনলোড করা তথ্যগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে চায়। এ উদ্দেশ্যে তারা নিজেদের তৈরি ওয়েবসাইট ব্যবহার করে।

দ্রুত সময়ে ভবন তৈরি

চীনের একটি কোম্পানি ২০১৫ সালে বিশ্বের মাঝে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ভবন নির্মাণের দাবি করেছিল। কোম্পানিটি মাত্র ১৯ দিনে ৫৭ তলা ভবন নির্মাণ করেছিল।

সম্প্রতি চীনে নোভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় রোগীদের চিকিৎসা সেবা সহজ করার জন্য মাত্র ১০ দিনে হাসপাতাল তৈরি করে। হুশেনশান নামের হাসপাতালটির আয়তন ২৫ হাজার বর্গ মিটার। এক হাজার শয্যার হাসপাতালটি দ্রুত নির্মাণ করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে চীন।

বন্যপ্রাণী কেনাবেঁচা

প্রযুক্তিগত নানাদিক দিয়ে চীন উন্নতি করলেও এখনো সেখানে প্রচুর বন্য জীবজন্তু খাওয়া হয়। এজন্য সেখানে মাঝে মাঝেই ভয়াবহ রোগের বিস্তার ঘটে। বর্তমানে ছড়ানো নোভেল করোনা ভাইরাস বন্য জীবজন্তু থেকেই ছড়িয়েছে বলে গবেষকরা বলছেন। ঠিক যেমন খাদ্য হিসেবে বন্যপ্রাণী খাওয়ায় ১৭ বছর আগে প্রাণঘাতী সার্স ভাইরাস বিস্তার লাভ করেছিল।

চীন দেশটি বিশ্বে খুবই আলোচিত একটি দেশ। প্রযুক্তিগত দিক থেকে ব্যাপক উন্নতি সাধন করলেও প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে তারা হয়তো একটু বেশিই উদার। এই দেশটিই কিন্তু বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে।

সূত্র : ক্যারোলিন প্যাট্রিক ডট কম, বিবিসি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com