শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫০ অপরাহ্ন
Uncategorized

জাপানে কয়েকদিন

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১

টোকিওর নারিতা এয়ারপোর্টে যখন আমরা নামছিলাম হঠাৎ করে ঠাণ্ডা বাতাস কাঁপিয়ে দিয়েছিল যেন। ঠাণ্ডার মেজাজ কেমন হবে তা ভেবে একটু আতঙ্কিত ছিলাম। মেজাজ অবশ্য আগেই একটু বিগড়ে ছিল। ব্যাঙ্কক থেকে রাতে রওনা দেওয়ার পর থাই এয়ারওয়েজ ডিনার হিসেবে দিল শুধু একটা স্যান্ডউইচ আর কফি। ততক্ষণে চাগিয়ে উঠা খিদেতে এটা দিয়ে শুধু একটা প্রলেপই দিয়ে গেল। আশাভঙ্গের বেদনা নিয়ে মুভি দেখতে দেখতে ঘুম, হঠাৎ দেখি ভোররাতে সব লাইট জ্বালিয়ে আমাদের ব্রেকফাস্ট দেওয়ার আয়োজন। ততক্ষণে আবার ক্ষিদে পালিয়ে গেছে, আর অল্প ঘুমটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কষ্টটা বেশি।

জাইকার হোস্টেলে এসে টের পেলাম নানা রঙের, মতের, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির, ধর্মের, ভিন্ন দেশের নানা ভাষাভাষী মানুষের মিলনমেলা যেন এই সেন্টার। একসাথে অনেক ধরনের বিষয়ে এখানে ট্রেনিং চলছে। বেশ কয়েকটি দেশের মানুষের সাথে প্রথমবারের মতো পরিচয় হয়েছে। মঙ্গোলিয়া, সিরিয়া, ইরাক, ফিজি, কেনিয়া, এমনকি পাকিস্তানের মানুষের সাথেও প্রথম পরিচয় হয়েছে।

খুব ভোরে প্লেনে ব্রেকফাস্ট করার কারণে আমরা কয়েকজন ব্রেকফাস্ট  করতে বাধ্য হওয়ায় কিছু খাওয়ার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছিলাম। দেশের বাইরে এসে একটা সাধারণ বিষয় হলো অনভ্যস্ত চোখে সুন্দর কিছু দেখতে ভালোই লাগে – যেমন বাড়ির সাথে লাগোয়া গাছে কমলা ঝুলে থাকা। এখানে প্রতিটা রাস্তা এত মজবুত আর পরিষ্কার, দেখলেই মনে হয় এখানেই তো তাঁবু টাঙিয়ে শুয়ে থাকা যায়।

মানুষ যে কতটা বিনয়ী, কতটা নিয়মানুবর্তী তা দেশের বাইরে এলেই দেখা যায়। পাশের দেশের কলকাতাতেও দেখেছি রাত দেড়টায় ট্রাফিক সিগন্যালের লাল বাতির সামনে  গাড়ি দাঁড়িয়ে যেতে। এই প্রচণ্ড ব্যস্ত শহরে শয়ে শয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তা পার হওয়ার জন্য সিগন্যালের অপেক্ষায়, রাস্তার মোড়ে সাদা দাগ দেওয়া অংশ ছাড়া আর কোথাও দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার তাড়া নেই, যতক্ষণ একটি মানুষও পার হওয়ার বাকি থাকে, দুইপাশে সারি ধরে প্রতিটা গাড়ি অপেক্ষা করে। এ এক অদ্ভুত দেশ, যেখানে নিয়মের চুলমাত্র ব্যত্যয় নেই।

এমনিতে জাতি হিসেবে জাপানিরা যথেষ্ট মার্জিত, বিনয়ী,  লাজুক প্রকৃতির। একটু খোলামেলা পোশাক পরলেও নারীর প্রতি এদের সম্মান অন্য পর্যায়ের। এমনকি নারীর প্রতি সামান্য কটূক্তিও এখানে কঠোরভাবে দেখা হয়। এত ভালোর মধ্যে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজির প্রতি এদের উদাসীনতা কখনো বিরক্তির পর্যায়ে চলে যায়, এমনকি মাঝেমধ্যে মূকাভিনয় কেন শিখলাম না, তা নিয়েই আফসোস হয়। বাংলাদেশে গিয়ে আর কাউকে ইংরেজি জানার জন্য জোর দেব না। ইংরেজি না জেনেও পরিশ্রম, বিনয়, আন্তরিকতা দিয়ে উন্নত হওয়া যায়। মোবাইল ফোন আর হরেক রকমের গিয়ারের প্রতি তাদের আকর্ষণ আসক্তির পর্যায়ে পড়ে। মেট্রোরেলে উঠে দেখলাম অন্তত ৯৫ ভাগ যাত্রী মোবাইল ফোনে মুখ গুঁজে আছে, রাস্তায় দুই মিনিট দাঁড়াতে হলেও, পথে চলতে চলতেও মোবাইল ফোন চলছে। আর গেমসে এদের আসক্তিও ভয়াবহ পর্যায়ে। অনেক গেমস স্টেশন এদিক সেদিক।

কিছু কিনতে চাওয়াটা এখানে যেন এক ভোগান্তির শামিল। ভাষার দুর্বোধ্যতা তো আছেই, সাথে উচ্চ দাম। একটা কলা ১০০ জাপানি ইয়েন দেখে জীবনে আর কলাই খাব না সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। চারটা আপেল ৪৯৮ ইয়েন।

আগের দিন গিয়েছিলাম শিনজুকু ওয়াকিং স্ট্রিটে, চারপাশে প্রাণের ছড়াছড়ি, অসংখ্য শপিং মল আশপাশে। দেখবেন, শুধু দেখবেনই। দামের কারণে আমার মতো সাধারণের ছোঁয়ার বাইরে। পাঁচ ঘণ্টা শুধু এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটিতে মাসলে টান পড়ার অবস্থা।

জাপানি ইন্সট্রাক্টররা আগেই দেখেছিলাম খুব বিনয়ী। কখনো রাতের টোকিওর মতো রোশনাই, কখনো দিনের সূর্যের মতো আলোকোজ্জ্বল। যাই হোক না কেন, কিছু না বুঝলে বোঝানোর প্রাণান্ত চেষ্টা রয়েছে। ক্লান্তিকর সেশন হবে ভাবলেও সেশনগুলো কেমনে কেমনে যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। মূল কারণ ইন্টারেকশন।

এভাবেই খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে জাপানের দিনগুলো।

রাজেশ চৌধুরী

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com