মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৭ অপরাহ্ন
Uncategorized

চলুন বেড়িয়ে আসি কাঠমান্ডু থেকে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২১

সার্কের সদস্যদের মধ্যে ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর একটি হলো নেপাল । নেপাল বিখ্যাত হিমালয়ের সৌন্দর্যের দরজা হিসাবে কিন্তু শুধু হিমালয় বাদেও নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু  বসে আছে আরও নানারকম দেখার মতো স্থান নিয়ে। কাঠমান্ডু নেপালের রাজধানী ও বৃহত্তম মহানগর যেখানে বাস করছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। নেপালে ঘুরতে হলে কাঠমান্ডু তে এসেই প্রথম ধর্না দিতে হবে। অনেকেই পাহাড় দেখবার আসায় কাঠমান্ডুর মতো শহরকে ঘুরবার তালিকায় প্রাধান্য প্রথমে দিতে চান না কিন্তু ঐতিহ্য, বাণিজ্য, নানারকম আরকিটেকচারাল নিদর্শন নিয়ে কাঠমান্ডু কিন্তু তার আপন মহিমায় উজ্জ্বল।

কাঠমান্ডুর দর্শনীয় স্থান

পশুপতিনাথ মন্দির : হিন্দুদের পবিত্র ও নামকরা মন্দিরগুলোর মধ্যে নেপালের পশুপতিনাথ মন্দির (Pashupatinath Temple) সবচেয়ে বিখ্যাত। পশুপতিনাথ গড়ে উঠেছে শিবের সেবার জন্য এবং নেপাল ছাড়াও বছরে ভারত থেকে অজস্র মানুষ এখানে শিবের পূজা করবার জন্য ছুটে আসেন। এখানে দেখা পাওয়া যায় নানা প্রকৃতির সাধুদের।

স্বয়ম্ভূনাথ স্তুপ : নেপালের বিখ্যাত বৌদ্ধমন্দির গুলোর তালিকা করলে স্বয়ম্ভূনাথ (Swayambhunath) থাকবে ১ থেকে তিনের মধ্যে। এটি কাঠমান্ডু শহরের পশ্চিমে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত যেখানে যেতে হলে পাড়ি দিতে হবে গুণে গুণে ৩৬৫ টি পাথরের তৈরি সিঁড়ী। অবশ্য সিঁড়ী চড়বার আগেই নজর পরবে বানরের দিকে।মন্দিরের চত্তর ও তার আসে পাশে একশোর উপরে বানর বহুদিন থেকে বাস করে আসছে। এসমস্ত বানরকে নেপালীরা পবিত্র দূত মিনে করে। তাদের ধারণা বুদ্ধ দেইতী মঞ্জুশ্রির মাথার উকুন থেকে এসমস্ত বানরের জন্ম এবং তারা এখানে তার সময় থেকেই রয়েছে।

কোপান মনেস্ট্রি : কোপান মনেস্ট্রি (Kopan Monastery) কাঠমান্ডু একটি লুকায়িত হীরার মতো একটি জায়গা। এখানে টিবেতান সাধুরা আসে মেডিটেশন করবার জন্য। কোপান মনেস্ট্রি থেকে কাঠমান্ডু শহর পুরোটার ১৮০ ডিগ্রী ভিউ পাওয়া সম্ভব। আগে এই জায়গাটি সম্পর্কে খুব বেশি মানুষ জানতোনা কিন্তু বর্তমানে প্রচারলাভের পর এই স্থানটি তার আরকিটেকচারাল সৌন্দর্যের জন্য খুব সমাদৃত পর্যটকদের কাছে।

কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার, পাটান, ভক্তপুর : কাঠমান্ডুর প্রাচীন দিকটি থামেলের দক্ষিণে , বসন্তপুরে অবস্থিত দরবার স্কয়ারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। উনিশ শতক পর্যন্ত নেপালের রাজা ও তার পরিবার এর সদস্যগণ এখানেই বসবাস করতেন। জায়গাটি এতটাই বনেদী এবং ঐতিহ্য এর সাক্ষী যে ১৯৭৯ সালে ইউনেস্কো একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করে। রাজপ্রাসাদ ছাড়াও ১২ শতকের প্রচুর হিন্দু এবং বৌদ্ধ মন্দিরএর নিদর্শন এখানে পাওয়া যায়।

দরবার স্কয়ার থামেল থেকে মাত্র ৭০০ মিটার দূরে। এখানে প্রচুর পায়রা দেখা যায় যা আলাদা মাধুর্য যোগ করে ভ্রমনে। দরবার স্কয়ারে দেখবার মতো রয়েছে সাদা ভৈরব বা সেতো ভৈরব, জগন্নাথ মন্দির, তেলেজু মন্দির, ইন্দ্রপুর মন্দির, মহেন্দ্রশ্বর মন্দির, দুর্ভাগ্যবশত ২০১৫ সালের তীব্র মাত্রার ভূমিকম্পে রাজপ্রাসাদ সহ মন্দিরগুলোর দক্ষিণ দিক ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কাঠমান্ডু ভ্যালীর কাছাকাছি আরও দুটি দরবার স্কয়ারের মতো ঐতিহাসিক গুরুত্ব এর নিদর্শন রয়েছে পাটানে এবং ভক্তপুরে। ভূমিকম্প এই দুইটি জায়গার ক্ষতি করলেও তা দরবার স্কয়ারের মতো মারাত্মক নয়।

থামেল : থামেল হলো কাঠমান্ডুর পর্যটকদের প্রাণকেন্দ্র। হাজার হাজার হোটেল, সুভেনির এর দোকান, হাইকিং এর দোকান, রেস্টুরেন্ট , বার এখানে বসে আছে প্রাণচাঞ্চল্য কি জিনিস তার আভাস দিতে। রাস্তায় সারি সারি দোকান ও ফেরিওয়ালা নানারকমের পসরা সাজিয়ে এখানে পর্যটকদের আকৃষ্ট করবার আশায় বসে থাকে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। থামেল মার্গ হলো এলাকার প্রধাণ রাস্তা যা নানা রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো।

সিংহ দরবার:  নব্য-ধ্রুপদী, পেলেডিয়ান এবং ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলী মিশেলে তৈরি সিংহ দরবার বা সিংহ প্রাসাদ কাঠমাণ্ডুর মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত রাণা বংশের একটি প্রাসাদ।

আসান বাজার : আসান টোলে বা আসান বাজার (asan bazar) হলো নেপালের তাজা শাকসবজি ও ফলের বাজার। বাড়িতে বানানো স্থানীয় পানীয় রাকশি থেকে শুরু করে নানারকম মশলা, স্থানীয় নাম না জানা ফল সমস্ত কিছু এখানে পাওয়া যায়। এখানে কাঠমান্ডুর বাইরে থেকে রোজ কৃষকরা আসে তাদের পণ্য বিক্রি করতে। লোকাল জিনিস ও মানুষদের কাছে থেকে দেখবার জন্য আসান টোলে শহরের বাইরের সেই সুপার মার্কেটের মতো কাজ করে যা ভ্রমনে অনন্য মাত্রা যোগ করতে সক্ষম। এছাড়া আসান টোলের আসে পাশে অন্নপূর্ণা ও কৃষ্ণ নামে দুটো দেখবার মতো মন্দির আছে যারা তাদের গঠন ও অবস্থানের জন্য বিখ্যাত।

কাঠমান্ডু যাবার উপযুক্ত সময়

অক্টোবর ও নভেম্বর হলো কাঠমান্ডু ঘুরবার জন্য উপযুক্ত সময়। এ সময় আবহাওয়া শুষ্ক কিন্তু ঠাণ্ডা অন্য সময়ের থেকে কম থাকে শীতের শুরু বলে। আকাশ পরিচ্ছন্ন থাকে বলে ঘুরে আরাম পাওয়া যায় এবং ট্রেকিং এর প্রস্তুতি ভাল নেওয়া যায়। সেপ্টেম্বর এ কাঠমান্ডু ঘুরতে না যাওয়া ভাল কারণ তখন বর্ষার জন্য নানারকম অসুবিধা হতে পারে। এপ্রিল পর্যন্ত আবহাওয়া শুষ্ক থাক্লেও সেসময় ভাল শীত পরে তবে কাঠমান্ডুতে বরফ পরে না এবং মাঝে মাঝে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রিতে নামে বলে শীত যারা ভালবাসে তারা চাইলে এ সময়ে যেতে পারেন। ভিড় পছন্দ না করলে বা সিজনের পরে কম খরচে ভ্রমণ করতে চাইলে মার্চ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি বা সেপ্টেম্বরের মাঝেরটুকু ভাল সময় কাঠমান্ডু ঘুরবার জন্য।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com