বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৬:৫২ অপরাহ্ন
Uncategorized

গ্রিস

  • আপডেট সময় বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১

সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টেটল, পিথাগোরাস, আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট । এইসব নাম শুধু নাম নয়। এই নামগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে আছে পুরো বিশ্ব সভ্যতা। বিশ্ব সভ্যতার সূতিকাগার বললে প্রথমে চলে আসে তাই গ্রিসের নাম। পৌরাণিক কাহিনী, ইতিহাস আর সৌন্দর্যের লীলাভূমি গ্রিস নিয়েই আমাদের মানচিত্রের আজকের আয়োজন।

এজিয়ান সাগরের তীরে সুপ্রাচীন কালে ইউরোপের প্রথম উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, বর্তমান আধুনিক ইউরোপকে এর ফসল বললে অত্যুক্তি হবে না। বিভিন্ন সভ্যতার উত্থানের ফলে গ্রিসের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বতন্ত্র জেলা এবং সরকার ও সমাজ কাঠামো বিশিষ্ট রাজ্যের সৃষ্টি হয়। এই রাজ্যগুলো স্পার্টা এবং এথেন্সের অধীনে একত্রিত হয়ে পার্সিয়ানদের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করেছিল। এথেন্সে গ্রিসের প্রথম সমৃদ্ধ সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হয় যার পরিণতি পেলোপোনেশীয় যুদ্ধ। এ সময় পার্সিয়ানদের হাতে স্পার্টার পতন হয়। এর পর মাত্র এক শতাব্দীর মধ্যে সকল গ্রিকরা আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের নেতৃত্বে একত্রিত হয়ে পার্সীয়দের প্রতিহত করে। ১৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এখানে রোমান সম্রাজ্যের সূচনা হয়।

রোমান যুগের সূচনায় হেলেনীয় সমাজ ও সংস্কৃতির কোন পরিবর্তন না হলেও এর ফলে আবশ্যিকভাবেই গ্রিস তার রাজনৈতিক স্বাধীনতা হারায়। খ্রিস্ট ধর্ম বিকাশের পূর্ব পর্যন্ত এখানে হেলেনীয় সংস্কৃতি টিকে ছিল। গ্রিস রোমের একটি প্রদেশে পরিণত হয় এবং তখনও গ্রিস প্রবল প্রতাপে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সংস্কৃতিকে প্রভাবান্বিত করে চলে। এরপর রোমান সাম্রাজ্য দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়; একভাগের নাম পূর্ব রোমান সম্রাজ্য যা গ্রিকদের সাম্রাজ্য নামে প্রতিষ্ঠা পায় এবং পরবর্তীকালে বাইজান্টাইন সম্রাজ্য নাম ধারণ করে। অন্য অংশ ছিল কনস্টান্টিনোপ্‌ল কেন্দ্রিক যার নাম ছিল বাইজান্টিয়াম। বাইজান্টাইন রাজত্বের সময় গ্রিক আগ্রাসী সকল শক্তির মধ্যে হেলেনীয় ভাবধারার প্রভাব সৃষ্টিতে সমর্থ হয় এবং এ সময়েই সিসিলি ও এশিয়া মাইনর থেকে অনেকে গ্রিসে বসতি স্থাপন করে। একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীকে গ্রিসে বাইজান্টাইন শিল্পকলার স্বর্ণযুগ বলা হয়। তবে ১২০৪ থেকে ১৪৫৮ সালের মধ্যে সংঘটিত ক্রুসেডের সময় ধর্মের নামে প্রতিষ্ঠিত কিছু সেনাদল দ্বারা গ্রিস আক্রান্ত হয়। ১৪৫৩ সালের ২৯ মে তারিখে কনস্টান্টিনোপ্‌লের পতনের পূর্ব পর্যন্ত এখানে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত ছিল।

গ্রিসের রাজধানী এবং সর্ববৃহৎ শহর হচ্ছে এথেন্স। এথেন্স একইসাথে বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানব সভ্যতার নিদর্শন এথেন্স শহরের সর্বত্র জুড়ে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী ভ্রমন পিপাসুদেরও কাঙ্ক্ষিত দর্শনীয় স্থান এ নগরী। গ্রিসের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের উপর বাস করেন এথেন্সে এবং তাঁদের বেশির ভাগই থাকেন অ্যাপার্টমেন্টে। শহরের প্রতিটি বাড়ির বারান্দায় দেখা যায় ফুল, লতাপাতার বাহার!

এথেন্স গ্রিসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর সেই প্রাগৌতিহাসিক কাল থেকেই। আর এথেন্সের মূল আকর্ষণগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম শহর অ্যাক্রোপোলিস অন্যতম। অ্যাক্রোপোলিস এর কথা যখন উঠলোই তখন এর সম্পর্কে বিস্তারিত না বললে অন্যায় করা হবে। গ্রিসের স্বর্নালী যুগের অন্যতম ধারক ও বাহক অ্যাক্রোপোলিস শহরটি বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে মনোরঞ্জন করে চলেছে পর্যটকের।

একটি চুন-পাথরের পাহাড়ের উপর নির্মিত এথেন্স তথা গ্রিসের প্রাচীনতম শহরকেই বলা হয় অ্যাক্রোপোলিস। যেখানে রয়েছে ধর্মীয় উপাসনালয়, নগরদূর্গসহ তৎকালীন রাজার বাসস্থান। একে প্রাচীন গ্রিসের দেব-দেবতার বাসস্থান বললেও অত্যুক্তি হবে না। এখানকার মূল উপাসনালয়টি দেবী এথেনাকে উৎসর্গ করে বানানো হয়। এ ছাড়াও রয়েছে অনেক ছোট ছোট উপাসনালয়ের ধ্বংসাবশেষ। অ্যাক্রোপোলিসের উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ৬০০ ফুট এবং আয়তন ৩০ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। অ্যাক্রোপোলিসের নির্মাণ কাজ শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪৪৭ অব্দে।

এই অ্যাক্রোপোলিস শহরে আবার আছে ইতিহাস প্রসিদ্ধ পার্থেনন মন্দির। ইউনেস্কো পার্থেননকে ‘ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। তবে পার্থেনন নিয়ে গবেষণা এখনো চলছে। গবেষকদের ধারণা এই মন্দির বানাতে ২২ হাজার টন মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। বিশাল দৈত্য আকৃতির ৫৮টি পিলারগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে ১৩ হাজার মার্বেলের টুকরো, ভূমিকম্পেও যেগুলোর নড়চড় হবে না। মন্দিরের পিলারের উপরের কারুকাজ করা এক একটি মার্বেলের ওজন ১০ টন। ‘ডরিক’ শৈলীতে তৈরি ৩১ মিটার চওড়া, ৭০ মিটার লম্বা এবং ২০ মিটার উঁচু এই বিশাল মন্দির পুরোটাই মার্বেলের। মন্দিরের মাঝখানে ছিল হাতির দাঁত, মূল্যবান কাঠ এবং স্বর্ণ নির্মিত ১২ মিটার উঁচু এথেনা দেবীর মূর্তি। তবে সে মূর্তি এখন নেই। প্রাচীন গ্রিক ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে এথেনা হচ্ছে শিক্ষা, সংস্কৃতি, বীরত্ব, শক্তি, যুদ্ধ, জ্ঞান ও শহরের দেবী। কথিত আছে দেবতা জিউসের মাথা থেকে এথেনার জন্ম এবং জন্মের সময়ই এথেনা ছিলেন যুদ্ধবর্ম পরিহিতা প্রাপ্তবয়স্ক তরুণী। তার কোনো মা নেই। জিউসের সবচেয়ে প্রিয় সন্তান এথেনা। হোমার ‘ইলিয়ডে’ এথেনাকে দেখিয়েছেন একজন বীরযোদ্ধা হিসেবে।

পার্থেনন দেখে পাহাড় থেকে নামবার সময় চোখে পড়বে দু’টি প্রাচীন থিয়েটার— ডাইওনিসাস ও হেরোডিয়ন। ২৪০০ বছরের পুরনো ডাইওনিসাস থিয়েটারের বিশাল ধ্বংসাবশেষ দেখে অবাক হতেই হয়। এখানে ১৬ হাজার দর্শকাসন আছে। প্রাচীন গ্রিসে নাটকের খুব চল ছিল। সে সময়ের বেশির ভাগ গ্রিক নাটকই ছিল বিয়োগাত্মক। ইউরিপিডিস, সফোক্লিস, আরিস্টোফেনিস প্রভূতরা ছিলেন গ্রিসের বিখ্যাত নাট্যকার। ১৮০০ বছরের পুরনো ‘আউটডোর থিয়েটার’ হেরোডিয়নে ১২০০ দর্শকাসন আছে।

আধুনিক অলিম্পিক গেমসের জন্মস্থান কিন্তু এই গ্রিস। ১৮৯৬ সালে প্রথম আধুনিক অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয় এথেন্সের ‘পান-এথেনাইকো’ স্টেডিয়ামে, মাত্র ১৪ টি দেশকে নিয়ে। ১০৮ বছর পর আবার অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয় গ্রিসে, ২০০৪ সালে। তবে সে বার যোগ দিয়েছিল প্রায় ২০০টি দেশ।

একনজরে

পুরো নাম : হেলেনিক রিপাবলিক

রাজধানী ও সবচেয়ে বড় শহর : এথেন্স

রাষ্ট্রভাষা : গ্রিক

সরকার পদ্ধতি : ইউনিটারি পার্লামেন্টারি কনস্টিটিউশনাল রিপাবলিক

প্রধানমন্ত্রী : অ্যালেক্সিস সাইপ্রাস

আইনসভা : হেলেনিক পার্লামেন্ট

আয়তন : এক লাখ ৩১ হাজার ৯৫৭ বর্গকিলোমিটার

জনসংখ্যা : এক কোটি ৯ লাখ ৫৫ হাজার জন

ঘনত্ব : প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮২ জন

জিডিপি : মোট : ২৮৭.১১৪ বিলিয়ন ডলার

মাথাপিছু : ২৬ হাজার ৬০৬ ডলার

মুদ্রা : ইউরো

জাতিসংঘে যোগদান : ২৫ অক্টোবর ১৯৪৫ সাল।

ছবি ও তথ্য – ইন্টারনেট

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com